×

জাতীয়

চীনের উপহারের ৫ লাখ ডোজ টিকা আসবে বুধবার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২১, ১২:১৩ পিএম

উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দেয়া চীনের পাঁচ লাখ করোনার টিকা আগামী ১২ মে ঢাকায় পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এরমাধ্যমে ঢাকায় টিকা নিয়ে ঢুকছে চীন। এছাড়া কোয়াডকে চীনবিরোধী একটি ছোট গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে বেইজিং। তাই চীন মনে করে, এতে যেকোনোভাবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে ‘যথেষ্ট খারাপ’ করবে।

সোমবার (১০ মে) ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টক’-এ তিনি এসব কথা জানিয়ে বলেন, করোনা মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে চীন। এই লক্ষ্যে পাঁচ লাখ সিনোফার্ম টিকা দেবে। কদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই টিকার অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান তিনি।

এরআগে দেশে চীন ও রাশিয়ার ভ্যাকসিন উৎপাদনের অনুমোদন দেয় সরকার। এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রাশিয়া ডকুমেন্ট পাঠিয়েছে, আমাদের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে তারা তাগাদা দিচ্ছে। রাশিয়ার ডকুমেন্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আছে। আমরা রাশিয়া এবং চীনেরটা যৌথভাবে উৎপাদন করতে চাই, তবে এটা সময় লাগবে, আজ চুক্তি হলো কাল হয়ে যাবে এমনটা না। তবে আমরা খুব দ্রুত পেতে চাই। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যৌথ ভ্যাকসিন উৎপাদনে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানিগুলোর সক্ষমতার মাধ্যমে দেশেই মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন সম্ভব বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সরবরাহ সংকটে টিকাদান কার্যক্রম নিয়ে জটিলতার মধ্যে দ্রুত রাশিয়া ও চীনের টিকার অনুমোদন দেয়া হয় দেশে। এর আগে গত ৩ মে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, উপহার হিসেবে চীনের দেয়া ৫ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা ১০ মের মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারে। চীন মনে করছে, ডব্লিউএইচওর আগেই বাংলাদেশের স্বীকৃতিটা ছিল দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত। এটি চীন ও বাংলাদেশের করোনা নিয়ে সহযোগিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দেশটির রাষ্ট্রদূত বলেন, সিনোফার্মের টিকাকে বাংলাদেশ যে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাকে ঐতিহাসিক মনে করছে চীন।

এসব প্রসঙ্গ টেনে আলোচনায় বক্তব্যের শুরুতে চীনা রাষ্ট্রদূত সবাইকে পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, চীন এরই মধ্যে ২০ কোটি টিকা বিশ্বের ৮০টি দেশে বিতরণ করেছে। এতেই প্রমাণিত হয় বিশ্বে টিকাদানে চীন নেতৃত্ব দিচ্ছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন ও বাংলাদেশ অভিন্ন সংকটের মোকাবিলা করে আসছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির পর মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ চীন থেকে বেশ কিছু চিকিৎসাসামগ্রী এনেছে।

তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই মহামারি মোকাবিলায় একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তা ছাড়া দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে অলোচনা করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফর সম্পর্ক দৃঢ় করেছে। এ ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমে যে যোগাযোগ বেড়েছে, তাতে দুই দেশের সম্পর্ক বেগবান হয়েছে। বাংলাদেশ মহামারির প্রথম ধাপ ভালোভাবে সামলেছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ভাইরাস আমাদের সাধারণ শত্রু। একে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। তাই তো ২৭ এপ্রিল ৬ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী করোনা সহযোগিতায় একমত হয়েছে। চীন ভারতকে এ ছয় দেশের জোটে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে টিকা পেতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত চীন। করোনা মোকাবিলা নিয়ে লি জিমিং বলেন, বিশ্বের কোনো দেশ নিজেকে আলাদা করে রাখতে পারবে না। মানবকল্যাণে সবাইকে একসঙ্গে এ মহামারি মোকাবিলা করতে হবে। এ দিন দূরে নয় আমরা সকলেই এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পাব।

এর আগে গত শনিবার টিকা নিয়ে এক ভিডিওবার্তায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন রাশিয়া এবং চীনের টিকা আগে কেন আনলাম না। সে ক্ষেত্রে বলতে চাই, আমাদের দেশের যারা পণ্ডিতজন, বিজ্ঞানী, তারা বলেছিলেন আমাদের সবার মঙ্গলের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ছাড়া টিকা না আনতে। সে সময় রাশিয়া ও চীনের টিকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ছিল না। সেই কারণে তখন আমরা আনিনি।

আর এখন যেহেতু ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি, তা ছাড়া চীনা টিকা এখন পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন মানুষ নিয়েছেন, ৬৩ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা নিয়েছেন, কারও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। তা ছাড়া রাশান স্পুৎনিক ভি-কে বিশ্বের নানা জার্নালে বলছে, ইট ইজ দ্য টপ ভ্যাকসিন, যা ৯৬ ভাগ কাজ করে। যদিও এর অনুমোদন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেই, তবু প্রধানমন্ত্রী বিশেষ ক্ষমতাবলে এগুলো আনার অনুমোদন দিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা আগে থেকেই চায়না ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে রেখেছি। ১২ তারিখে চীনের টিকার প্রথম চালান এখানে আসবে। পাঁচ লাখ ডোজ; গিফট হিসেবে। তাই টিকা নিয়ে কারও চিন্তা করার কিছু নাই। কোনো রাজনীতি করারও কিছু নাই।

কোয়াড নিয়ে চীনের বক্তব্য: যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত জোট কোয়াডকে চীনবিরোধী একটি ছোট গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে বেইজিং। তাই চীন মনে করে, এতে যেকোনোভাবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে ‘যথেষ্ট খারাপ’ করবে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি ঢাকা সফর করেন। এ সময় কোয়াড, আইপিএস বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছিল চীন। চীনের অনুরোধের জবাবে বাংলাদেশ কী বলেছে জানতে চাইলে চীনের রাষ্ট্রদূত প্রশ্নটির উত্তর এড়িয়ে গেছেন। লি জিমিং বলেন, চীন সব সময় মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কোয়াড হচ্ছে চীনবিরোধী একটি ছোট গ্রুপ। আমি খুব স্পষ্ট করেই বলতে চাই, অর্থনৈতিক প্রস্তাবের কথা বললেও এতে নিরাপত্তার উপাদান আছে। কোয়াডে অংশগ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, এই প্রেক্ষাপটে বলব, এ ধরনের ছোট গোষ্ঠী বা ক্লাবে যুক্ত হওয়ার ভাবনাটা ভালো না। বাংলাদেশ এতে যুক্ত হলে তা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যথেষ্ট খারাপ করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App