×

মুক্তচিন্তা

প্রতিরক্ষার নতুন দিগন্ত

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২১, ১২:৩২ এএম

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক এহছানুল হক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে কোনো হুমকি না থাকলেও এর গুরুত্ব আসলে কৌশলগত। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পরে বাংলাদেশ একটি বিশাল সমুদ্র এলাকার নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের দায়িত্বও বেড়ে গেছে অনেক।’ নৌবাহিনীর রিয়ার এডমিরাল আওয়ালের মতানুসারে বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্য চলে সমুদ্রপথে। আর সেই সঙ্গে সমুদ্রে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানে বাংলাদেশে যে পরিকল্পনা সেই কার্যক্রমের নিরাপত্তা দেয়াও এ ঘাঁটি স্থাপনের একটি উদ্দেশ্য বলে তিনি মনে করেন। বানৌজা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ সাবমেরিন ঘাঁটি, যার সংক্ষিপ্ত নাম ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’। এ নৌ ঘাঁটির জন্য কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মোতাবেক ৩৩৩.৭৩ একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। (তথ্য : বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন) সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ হচ্ছে পানির নিচে চলাচলে সক্ষম ও স্বাধীনভাবে বিচরণকারী নৌযান বিশেষ। জাহাজের মতোই সাবমেরিনে অনেক ক্রু থাকে। অনেক আগেই থেকেই পরীক্ষামূলকভাবেই ডুবোজাহাজ বা সাবমেরিন নির্মাণ করা হয়। ১৯ শতকে এসে সাবমেরিন আধুনিক রূপ পায়। ১৬২০ সালে কর্নেলিয়াস জ্যাকবস জুন ড্রেবল নামীয় একজন ডাচ কর্তৃক নৌযান বাহন হিসেবে সাবমেরিন আবিষ্কার করা হয় বলে জানা যায়। তিনি ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের অধীনে রাজকীয় নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী পৃথিবীর স্বাধীন-স্বার্বভৌম ১৯৫টি দেশের মধ্যে বানৌজা শেখ হাসিনা ৪১তম মেরিন ঘাঁটি। ১২ মার্চ ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মগনামায় এই মেরিন ঘাঁটিটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দুটি সাবমেরিন কমিশনের মাধ্যমে বিশে^র ৪১তম সাবমেরিন পরিচালনাকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। চীন থেকে ক্রয়কৃত সাবমেরিন দুটির নাম ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’। নতুন সাবমেরিন কমিশনিং ও সাবমেরিন ঘাঁটি স্থাপনের ফলে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক শক্তির অধিকারী হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনী। সমুদ্রসীমা জয়ের মাধ্যমে আরো বিস্তৃত বাংলাদেশের বিশাল জলসীমার স্বার্বভৌমত্ব রাখার পাশাপাশি তেল, গ্যাস অনুসন্ধানের ব্লকগুলোর নিরপত্তাসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই সাবমেরিন ঘাঁটি বিশাল ভূমিকা রাখবে। জাতির পিতার কন্যা পিতার মতো স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে জানেন, যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পদ্মা সেতু। তাই তো ২০১৪ সালে চীনের সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকায় দুটি সাবমেরিন ক্রয় করার জন্য বাংলাদেশ চুক্তিবদ্ধ হয়। টর্পেডো ও মাইনে সুসজ্জিত সাবমেরিন দুটির দৈর্ঘ্য ৭৬ মিটার, প্রস্থ ৭.৫ মিটার। ঘণ্টায় ১৭ নটিক্যাল মাইল গতিতে এই সাবমেরিন বহির্র্শক্রর যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজে আক্রমণ চালাতে সক্ষম। প্রতিটি সাবমেরিনে থাকতে পারবেন ৫৭ জন কর্মকর্তা ও ক্রু। সাবমেরিনকে ংঃৎধঃবমরপ বিধঢ়ড়হ বলা হয়ে থাকে। সাবমেরিন দিয়ে যে শুধুই যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করা হয় এটি মনে করার কোনো কারণ নেই। যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো শত্রুপক্ষের সাপ্লাই চেইন ধ্বংস করা। সাপ্লাই চেইন ধ্বংস হলে শত্রুপক্ষ বিপর্যস্ত হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সাবমেরিন দিয়ে আমরা গভীর সমুদ্রে মিয়ানমারের সমুদ্রগামী অন্যায্য বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর অবরোধ আরোপ করতে সক্ষম হব। মিয়ানমারের জাহাজে ংবধ বংঃধঃব কম থাকার কারণে তাদের নৌবাহিনীতে যত জাহাজ আছে বেশিরভাগ জাহাজই গভীর সমুদ্রে মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম নয়। বাংলাদেশে তুলনামূলক কম ওজনের জাহাজের ডিজাইন এমনভাবে করা সেটি ংবধ বংঃধঃব ৪-এর অধিক পরিবেশে অনায়াসে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে শত্রু দেশের নৌপথ বন্ধ করার বড় অস্ত্র সাবমেরিন। সমুদ্র বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সমুদ্র নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি। এই সাবমেরিন স্থাপনের ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়েছে। (সূত্র : ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম) ২০১৪ সালে চুক্তি করা সাবমেরিন দুটি ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর চীনের দালিয়ান প্রদেশে লিয়াওয়ান শিপ ইয়ার্ডে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সি ট্রায়ালের পর চীন ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকদের তত্ত্বাবধানে একই বছরের ২২ ডিসেম্বর সাবমেরিন দুটি বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বানৌজা শেখ হাসিনা মেরিন ঘাঁটি সংযোজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশে^র প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে শক্তিশালী দেশের কাতারে যুক্ত হতে যাচ্ছে। নবদিগন্ত সূচিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়। জাতির পিতার স্বপ্ন সাধের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তারই যোগ্য উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে। স্বপ্ন দেখছে ২০৪১ সালে স্বনির্ভর আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের। আ.ফ.ম. মোদাচ্ছের আলী শিশুসাহিত্যিক ও গবেষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App