×

মুক্তচিন্তা

পাকিস্তানি সহিংসতাকে কেনেডি বললেন, গণহত্যা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২১, ১২:০৯ এএম

১৯৭১ সালে বাংলাদেশবান্ধব আমেরিকান রাজনীতিবিদদের শীর্ষে ছিলেন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি। তিনি নিজেই লিখেছেন : এই কঠিন ট্র্যাজেডি পৃথিবী এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। আমি আপনাদের বলতে পারি যতক্ষণ না নিজ চোখে দেখছেন, এর গভীরতা ও বিস্তৃতি সম্পর্কে ধারণাও করতে পারবেন না। কেনেডি তখন ভারতে। সিডনি শনবার্গ ১৬ আগস্ট ১৯৭১ নিউইয়র্ক টাইমস-এর জন্য যে ডেসপাচটি পাঠান, পরদিন ১৭ আগস্ট ১৯৭১ তা প্রকাশিত হয়। সিডনি শনবার্গের প্রতিবেদনটি ভাষান্তর করা হলো : নয়াদিল্লি ১৬ আগস্ট : সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি আজ ঘোষণা করেছেন পূর্ব পাকিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতায় যা ঘটেছে তা গণহত্যা আর পূর্ব পাকিস্তানি নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচার আন্তর্জাতিক আইনের ধারণার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। ভারতের এক সপ্তাহের সফর শেষে ম্যাসাচুসেটসের ডেমোক্র্যাট (সিনেটর) আজ একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পাকিস্তানকে অব্যাহত সামরিক সহায়তা প্রদানের যে নীতি নিক্সন প্রশাসন গ্রহণ করেছে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মারাত্মক ক্ষতি করার জন্য তা-ই দায়ী। কেনেডি তার সফরের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া সীমান্তবর্তী হতদরিদ্রদের আশ্রয় শিবিরে, যেখানে আগত শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ বলে জানানো হয়েছে। মানুষের যে করুণ অবস্থা আমি দেখে এসেছিÑ যা নিক্সনের নীতিরই ফল, সে নীতি আমাকে হতবুদ্ধি করেছে। আমি মনে করি দুর্যোগের মাত্রা আরো অনেক বড়। এক সপ্তাহ আগে এখানে স্বাক্ষরিত সোভিয়েত-ভারত মৈত্রী চুক্তি নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ভারতের ঘোষিত জোটনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে এটি অসঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং তা ‘ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কোনোভাবেই অন্তরায় নয়।’ তিনি বললেন, বাস্তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও এমন একটি চুক্তি করতে আগ্রহী। তার হাতে কোনো সমাধান নেই সোভিয়েত-ভারত চুক্তির আশু লক্ষ হচ্ছে পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা থেকে নিরুৎসাহিত করা, যে হুমকি পাকিস্তান ইতোমধ্যেই দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সোভিয়েত ইউনিয়ন বা ভারত যদি আক্রান্ত বা হুমকিপ্রাপ্ত হয় তাহলে দুই দেশ আলোচনার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি অপসারণের উদ্যোগ নেবে এবং তাদের দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সিনেটর কেনেডি শরণার্থী বিষয়ক সিনেট জুডিশিয়ারি সাব-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ভারতে এসেছেন, তিনি বিশ^াস করেন পূর্ব পাকিস্তান সংকটের রাজনৈতিক সমাধান রয়েছে কিন্তু সে সমাধান তার পক্ষে করা সম্ভবÑ এই ভান তিনি করবেন না বলে জানালেন। ২৫ মার্চ মূলত পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের নিয়ে গঠিত পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বাধীনতা আন্দোলন আকস্মিক আক্রমণের মাধ্যমে দমিয়ে দিতে যখন সহিংস আক্রমণ শুরু করল, সংকট তখন বিস্ফোরিত হলো। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন সেনাবাহিনী অন্তত ২ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে। হাজার হাজার সন্ত্রস্ত শরণার্থী দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া অব্যাহত রেখেছে। বাঙালি বিদ্রোহীরা ‘ভারতীয় অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও আশ্রয়ে’ পুষ্ট হয়ে গেরিলা তৎপরতা বাড়িয়ে সেনাবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যের প্রাণহানি ঘটাতে সমর্থ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান বারবার সতর্ক করে যাচ্ছেন ভারত যদি গেরিলাদের সাহায্য করা অব্যাহত রাখে তাহলে তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করবেন। রাজনৈতিক সমাধানের ধরনটা কী হবেÑ এ নিয়ে যখন ভারতীয় সাংবাদিকরা পীড়াপীড়ি করছিলেন সিনেটরকে তখন অস্বস্তিতে আছেন বলে মনে হয়েছে। এখানকার দাপ্তরিক অভিমত হচ্ছে, একটি মাত্র সমাধান আছে এবং তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভ। সিনেটর বললেন, ‘মুজিবের একমাত্র অপরাধ তিনি নির্বাচনে জিতেছেন।’ সিনেটর কেনেডি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন এবং যথারীতি ভিসাও গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু গত মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) তিনি যখন ভারতে পৌঁছলেন, পাকিস্তান সরকার তার সফর বাতিল করে দিয়েছে, কারণ তারা মনে করে তার সফর কোনো কাজে আসবে না, তিনি ভারতে এসেই যে পক্ষপাতদুষ্ট বিবৃতি দিয়েছেন তাতে প্রমাণিত ভারতীয় প্রোপাগাণ্ডায় তিনি কতটা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। ভারতের ওপর শরণার্থীর যে অবিশ^াস্য বিপুল বোঝা সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা সামলাতে আমি মনে করি বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ১ বিলিয়ন ডলার খরচ হওয়ার কথা। এটা স্পষ্ট, শরণার্থী সমস্যায় এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সাড়া নগণ্য। অন্যান্য দেশকে এই খাতে মোট যে সাহায্য যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে তার চেয়ে বেশি ভারতের শরণার্থীদের জন্য দিলেও যে বিশাল বোঝা ভারতের সে তুলনায় তা অপর্যাপ্ত। তিনি বলেন, যখন দেশে ফিরবেন, রাজনৈতিক সমাধান সম্পন্ন না করা পর্যন্ত পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান বন্ধ রাখতে উদ্যোগ নেবেন। একই সফরের বিবরণ দিয়ে নয়াদিল্লি থেকে ডেভিড লোশাক যে প্রতিবেদন লন্ডনের টেলিগ্রাফে পাঠিয়েছেন তাতে সিডনি শনবার্গের প্রতিবেদনের অতিরিক্ত কিছু তথ্য ছিল : শরণার্থী শিবিরে গিয়ে শিবিরের অবস্থা এবং শরণার্থীদের ক্ষত ও অসুস্থতা দেখে তিনি দৃশ্যত ভীষণ কষ্ট পান। নয়াদিল্লিতে আমেরিকান দূতাবাসে অবস্থানকালে এডওয়ার্ড কেনেডি কিছু দাপ্তরিক দলিল বিশেষ করে পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে কূটনৈতিক টেলিগ্রামসমূহ দেখতে চাইলে প্রেসিডেন্টের নির্দেশে তিনি প্রত্যাখ্যাত হন এবং তিনি এজন্য প্রেসিডেন্টের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অস্ত্র সরবরাহ সিনেটর কেনেডি ফিরে গিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, ভিয়েতনাম যুদ্ধের বেঁচে যাওয়া অতিরিক্ত অস্ত্র কি পূর্ব পাকিস্তানে সরকারি বাহিনীর কাছে পাঠানো হচ্ছে? তার কাছে এ রকম খবর পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘শরণার্থীরা সকলেই পাকিস্তান থেকে মুক্তি চায়’Ñ এটাই তার মনে হয়েছে। ১৭ আগস্ট ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে পাকিস্তানে অস্ত্র শিপমেন্টের কথা শোনা গেলেও অভিযোগটি প্রমাণ করার মতো কিছু পাওয়া যায়নি। তবে নয়াদিল্লিতে সফররত সিনেটর কেনেডি বলেছেন বিষয়টি কংগ্রেসনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি, জেনারেল অ্যাকাউন্টিং অফিস তদন্ত করে অস্ত্র ভিন্ন দিকে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করুক। পূর্ব পাকিস্তান থেকে নয়াদিল্লিতে আগত পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে আরো বেশি আমেরিকান অস্ত্র দেখা যাচ্ছে। অভিযোগটি যদি সত্যি হয় তাহলে পাকিস্তানে আমেরিকান অস্ত্রের শিপমেন্ট নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল তা আবার জ্বলে উঠবে। জুন মাসে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ওয়াশিংটনে ছিলেন তাকে বলা হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাদেশে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন শুরুর পর যে সহিংস সেনা আক্রমণ চালানো হয় তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু পরে নিক্সন প্রশাসন জানায়, ২২ মার্চ ১৯৭১-এর আগে সম্পাদিত চুক্তির বেলায় তা কার্যকর করা হয়নি। ভিয়েতনাম থেকে পাকিস্তানে অস্ত্রের শিপমেন্ট প্রসঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা বলেছেন : ‘বিষয়টি পরীক্ষা করার যতটুকু সামর্থ্য আমাদের আছে তাতে ভিয়েতনাম থেকে পাকিস্তানে কোনো ট্রান্সশিপমেন্টের প্রমাণ পাইনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সদ্য স্বাধীন দেশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি অতিথি সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সকালে তিনি তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন আততায়ীর হাতে নিহত ভাই রবার্ট কেনেডির পুত্র ও নিজের স্ত্রী ভিক্টোরিয়া কেনেডি। তার সবচেয়ে খ্যাতিমান ভাই জন এফ কেনেডি প্রেসিডেন্ট অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। সেদিনই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে তিনি আসেন এবং আন্দোলনের পীঠস্থানে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘যদিও আমেরিকার সরকার আপনাদের সাথে ছিল না, আমেরিকার জনগণ আপনাদের সমর্থন জানিয়ে গেছেÑ আমরা ‘ব্রাদার্স ইন লিবার্টি’; কোনো মানুষ, কোনো নীতি, কোনো সরকার এই সত্য বদলাতে পারবে না।... কোনো সরকার আপনাদের স্বীকৃতি না দিক, পৃথিবীর মানুষ আপনাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বৈরাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনে আপনারা যে সংগ্রাম করেছেন, তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আপনাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে আপনাদের সাথেরই একজন হিসেবে আমি বাংলাদেশে এসেছি। কয়েক মাস আগে, আগস্টে আমি ভারতের শরণার্থী শিবিরে মরণাপন্ন ও জীবিত শরণার্থীদের দেখে এসেছি, আমি ক্ষুধার্ত শিশু ও যুদ্ধের অভিশাপে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোকে দেখেছি। কেনেডিকে দেখতেই হবে এই পণ করে আমার স্কুল সহপাঠীদের ক’জন চলে যায় তেজগাঁও এয়ারপোর্টে, আমি আসি কলাভবন চত্বরে। সে সময় কেনেডি কি বলছেন তা শোনার ও বোঝার চেয়ে রক্তমাংসের কেনেডিকে দেখতে পাচ্ছি এটাই ছিল অনেক বড়। তাকে বিশ^বিদ্যালয় চত্বরে বৃক্ষরোপণ করতেও দেখেছি। অনেক বছর পর তার ভাষণটি পাই, সেখানে সামরিক জান্তা যে তাকে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ প্রতিহত করতে তার ভিসা বাতিল করে দিয়েছে সে কথা বলেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, পাকিস্তানের সামরিক জান্তার আশঙ্কা ছিল সীমান্তের এপারে কী ঘটছে তা বিশ^বাসী জেনে যাবে। তিনি নিজ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ১৭৭৬ সালে আমেরিকার বিপ্লব শেষ হয়নি, ওয়াশিংটন কিংবা জেফারসনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি। স্বাধীনতার লক্ষ্য সকল নাগরিকের মধ্যে সমতা সৃষ্টিÑ সাদাকালো নির্বিশেষে সকলের মধ্যে। ‘আমাদের কোনো ধন ছিল না, কিন্তু ধনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান সম্পদ ছিলÑ আমাদের শক্তিশালী ও প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন মানুষ ছিল, যারা জাতিকেও শক্তিমন্ত করে তুলবে, আমাদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব ছিল যারা জনগণকে ভবিষ্যৎ রচনায় পথ দেখাতে এবং সহায়তা করতে পেরেছেন। তিনি মনে করেন, বাঙালিদের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা অর্জন কেবল এই অঞ্চল নয়, সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। এডওয়ার্ড মুর কেনেডির (টেড কেনেডি নামে বেশি খ্যাত) জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের বস্টনে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২, মৃত্যু ২৫ আগস্ট ২০০৯। ১৯৬২ থেকে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তিনি ৪৭ বছর ধরে ম্যাসাচুসেটস থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট দলের সিনেটর ছিলেন। তিনি সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটি এবং সিনেট হেলথ কমিটির সভাপতি ছিলেন। তার বাবা বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব জোসেফ কেনেডি সিনিয়র ব্রিটেনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, ইউএস ম্যারিটাইম কমিশন এবং ইউএস সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার ভাই জন ফিটজেরাল্ড কেনেডি ১৯৬০ থেকে ২২ নভেম্বর ১৯৬৩ আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অপর ভাই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রবার্ট কেনেডি নির্বাচনের আগে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। হার্ভার্ড বিশ^বিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ভার্জিনিয়া বিশ^বিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি গ্রহণের পর ১৯৬২ সালে সিনেটর নির্বাচিত হন। সিনেটে তিনি ওজস্বী ও স্পষ্ট বক্তব্যের জন্য ‘দ্য লায়ন অব দ্য সিনেট’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধে তিনি মার্কিন সমরনীতির বিরোধিতা করেন। ১৯৬৯-এর চাপাকুইডিক ইনসিডেন্সের (মেরি জো কোপেকনে নামের ২৮ বছর বয়সি এক নারীকে নিয়ে তার গাড়িতে চাপাকুইডিক দ্বীপের একটি সেতু অতিক্রমের সময় দুর্ঘটনায় পতিত হন, গাড়িটি ডুবে যায়। তিনি নিরাপদে বেরিয়ে এলেও সেই নারী নিহত হয়। এ ঘটনা তার রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে অনেকটা ম্লান করে দেয়।) বিরূপ প্রতিক্রিয়ার পরও কেনেডি ১৯৭০ সিনেট নির্বাচনে জয়ী হন। একাত্তরে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্মম আগ্রাসন সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন। মূলত তার নেতৃত্বেই পাকিস্তানবিরোধী একটি সচেতনতা গড়ে উঠে এবং নিক্সন-কিসিঞ্জার প্রশাসন বিব্রতবোধ করতে শুরু করে। ১৯৭১-এ সরেজমিন শরণার্থী পরিস্থিতি দেখে গিয়ে মার্কিন নীতির নিন্দা করতে থাকেন। বাংলাদেশের পক্ষে লেখেন ‘দুর্দশার মোজাইক’। ১৯৭২-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রাইমারিতে তিনি বাদ পড়ে যান। ১৯৭৬-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ঘোষণা দেন পারিবারিক কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে দূরে থাকবেন। কেনেডি সিভিল রাইট মুভমেন্টসহ সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি শুরু থেকে আমেরিকার ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ইরাক ওয়ার রেজলুশনের বিরুদ্ধে ভোট দেন। তিনি ডেমোক্র্যাটদের একজন অভিভাবক হিসেবে দলের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এমনকি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে অপসারণ মামলায় তাকে সমর্থন করেছেন। একাত্তরের যুদ্ধদিনের বন্ধু টেড কেনেডিকে বাংলাদেশ বিশেষভাবে স্মরণ করে। ২০০৮ সালে তার মস্তিষ্কের ক্যান্সার ধরা পড়ে, ২৫ আগস্ট ২০০৯ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। টেড কেনেডি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট না হয়ে গণমানুষের কাছে বারবারই প্রেসিডেন্সিয়াল ট্রিটমেন্ট পেয়েছেন। তার গ্রন্থ সংখ্যা আটটি। নিজের কুকুর স্পø্যাশের চোখে তিনি কেমন ২০০৬ সালে এ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছেন : মাই সিনেটর এন্ড মি: এ ডগ’স আই ভিউ অব ওয়াশিংটন ডিসি। ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App