×

জাতীয়

ঈদ এলেও মার্চের বেতনই দেয়নি ৫০০ গার্মেন্টস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২১, ০২:৩১ পিএম

ঈদ এলেও মার্চের বেতনই দেয়নি ৫০০ গার্মেন্টস

গার্মন্টস কর্মী।

ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা কারখানাগুলোতে এক্সপোর্ট গত বছরের তুলনায় ৫০২ শতাংশ বেড়েছে ৫ হাজার কারখানায় ৩০-৩৫ লাখ শ্রমিক

ঈদুল ফিতর এসে গেছে কিন্তু এপ্রিল তো দূরের কথা এখনও মার্চের বেতন পাননি অন্তত ৫০০ পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। ফলে ঈদের আগে বকেয়া দু মাসের বেতন ও বোনাস পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন লাখ লাখ শ্রমিক এনিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

শুক্রবার (৭ মে) গার্মেন্টস টিইউসির সাধারণ সম্পাদক জলি তারুকদার ভোরের কাগজকে বলেন, দু চারটি কারখানা বাদে দেশের হাজার হাজার কারখানা এখনও বেতন বোনাস পরিশোধ করেনি। এমনকি গত মার্চ মাসের বেতন বোনাসও ৫ শতাধিক কারখানার শ্রমিকরা এখনো পায়নি। আমরা শ্রমিক সংগঠনগুলো মালিকদের কাছে বার বার আবেদন জানান সত্ত্বেও তারা ঈদের আগে এপ্রিলসহ বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস দেবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। যার ফলে লাখো শ্রমিকদের ঈদ আনন্দ ফিকে হয়ে যাবে।

এদিকে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের আহ্বায়ক ও স্কপ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন ভোরের কাগজকে জানান, আমরা যতদূর জানি এখনো অধিকাংশ কারখানা শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করেনি। এমনকি মার্চের বেতনও অনেক কারখানা এখনো দেয় নি। ঈদ যত এগিয়ে আসছে কারখানার মালিকরা ততই টালবাহনা শুরু করেছে। কেননা, একমাসের বেতন যদি তারা আটকে রাখতে পারে তবে শ্রমিকরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে বাধ্য। সেকারণে অনেকে ইচ্ছে করে বেতন বোনাস বকেয়া রাখে।

তিনি জানান, এবারে বিজিএমিইএ বলেছে এবারে তাদের এক্সপোর্ট গত বছরের তুলনায় ৫০২ শতাংশ বেড়েছে। সুতরাং প্রচুর মুনাফা হয়েছে। তবে কেন তারা শ্রমিকদের সামান্য মাস বেতন বকেয়া রাখবে। তিনি জানান, মালিকরা সরকারের কাছে আবারও ৩০০ কোটি টাকার মত প্রণোদোনা চেয়েছে, এটা তাদের বেতন না দেবার একটা কৌশল এবং সরকারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের কৌশল বলা যায়। এছাড়া গত বছর তারা ২ শতাংশ সুদে যে প্রণোদনা পেয়েছিল তার অর্ধেক অনুদান হিসেবে পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। এসব নানা অজুহাতে আসলে দরিদ্র শ্রমিকদের বেতন বোনাস ও ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত করার একটা ছল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

যদিও শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের তথ্য মতে সারা দেশে প্রায় ৫ হাজারেরও মত কারখানায় ৩০-৩৫ লাখ শ্রমিক কাজ করে। যার মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী শ্রমিক।

আশুলিয়ার এক গার্মেন্টেস কারখানার শ্রমিকনেত্রী সায়মা জানান, করোনার মধ্যেও তারা দিনের পর দিন ওভারটাইমসহ কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ এখনো মার্চের বেতন তারা হাতে পাননি। অথচ ঈদ এসে গেছে এবং মে মাসের আজ ৭ তারিখ হলেও এপ্রিল মাসের বেতনই তো দেয়নি, বোনাস তো দূরের কথা। তবুও করোনা উপক্ষো করে শত শত শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছে।

সাভারের এক কারখানার শ্রমিক সুমাইয়াও একই অভিযোগ করে বলেন, ঈদের আগে এপ্রিলের বেতন ও বোনাস দেবার কথা মালিকপক্ষ বললেও পাওয়ার আশা কম। হয়তো শুধু মাসের বেতনটা ধরিয়ে দিয়ে বোনাস বাদ দিয়ে দেবে। আসলে আমরা মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। কিছু বললে চাকরি চলে যায়, যার জন্য চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছি।

তবে শ্রমিকদের কথার সঙ্গে একমত নন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম। তিনি বলেন, আমরা মাসের শুরু থেকেই বেতন বোনাস দিচ্ছি। গতকাল পর্যন্ত বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৯ শতাধিক কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দিয়েছে। যা পরিমাণে ৬০ শতাংশের বেশি। বাকি কারখানাগুলোও সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই বেতন বোনাস পরিশোধ করবে।

বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা শ্রমিকদের বেতন বোনাস দিচ্ছি। সবাই যাতে দ্রুত পরিশোধ করে এ জন্য মনিটরিং করা হচ্ছে। যারা এখনো দেয়নি তারা আগামী ১০ মে’র মধ্যে যাতে পরিশোধ করে সে জন্য মনিটরিং করছি। যদিও সম্প্রতি শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান আগামী ১০ মে’র মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের আহ্বান জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App