×

মুক্তচিন্তা

নৌ-দুর্ঘটনা আর নয় চাই সচেতনতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২১, ১২:০৬ এএম

নৌ-দুর্ঘটনা আর নয় চাই সচেতনতা
নৌপথ যেন এখন মৃত্যুকূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিনের ব্যবধানেই নতুন নৌ-দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়। বাতাসে ভাসে প্রিয়জন হারানোর বিষাদ মাখা হাহাকার। ফুটফুটে তাজা প্রাণগুলো হেরে যায় জীবনের কাছে। নৌ-দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে আছে অতিরিক্ত যাত্রী কিংবা মালামাল বহন করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেটের ঘাটতি, অসচেতন ও অনভিজ্ঞ চালক, লাইসেন্সবিহীন নৌযান তথা লাইসেন্সবিহীন লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ চলাচল, ক্ষতিগ্রস্ত নৌযান ব্যবহার, নদীতে চর পড়ায় মাটির সঙ্গে ধাক্কাসহ বেশ কিছু কারণ উল্লেখযোগ্য। মৃত্যুর বরপুত্র এসে বরণ করে নিচ্ছে অকস্মাৎ নৌ-দুর্ঘটনায় টগবগে তাজা প্রাণ। নৌ-দুর্ঘটনায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা হারিয়ে ফেলে তাদের মূল্যবান প্রাণ। কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করে আজীবনের জন্য। সবচয়ে দুঃখজনক কথা নৌ-দুর্ঘটনার ফলে অনেক সময় অনেককে খুঁজেই পাওয়া যায় না। প্রিয়জনরা শেষ দেখার সুযোগটুকু পান না। সাত বছর আগে ঈদের পরে কয়েকশ যাত্রী নিয়ে ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ জাহাজের ৭০ জন মানুষের খোঁজ এখনো মেলেনি। শেষ দেখাটাও দেখতে পাননি নিখোঁজের মা-বাবা, ছেলেমেয়ে কিংবা প্রিয়জনের কেউই। হাহাকারের রেশম বুনে বাঁচতে হচ্ছে নিখোঁজের প্রিয়জনদের। নৌ-দুর্ঘটনা বর্তমানে সামাজিক অভিশাপে রূপ নিয়েছে। ঈদের আগে পরে এমন নৌ-দুর্ঘটনা এক রকম অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছরের পরিসংখ্যান তাই বলে। সম্প্রতি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাংলাবাজার ফেরিঘাটে বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে একটি স্পিডবোডের সংঘর্ষ ঘটে। এ দুর্ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। যে স্পিডবোডের যাত্রী ধারণক্ষমতা ১০-১২ জন সেখানে ৩০ জনের উপরে যাত্রী! ছিল না পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, যার জন্য প্রাণহানি ঘটেছে আরো বেশি। এমন দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। কিন্তু লকডাউনে যেখানে সবকিছু বন্ধ, এমনকি স্পিডবোড চলাচল ও বন্ধ সেখানে কীভাবে এতগুলো যাত্রী নিয়ে একটি স্পিডবোড চলে! এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রয়োজন অতিরিক্ত যাত্রী কিংবা মালামাল বহনের জন্য মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়, জীবন বলি দিতে হয় নিমিষেই। হোক সেটা বাড়তি টাকা উপার্জনের লক্ষ্যে কিংবা যাত্রীর চাপে। কিছু ক্ষেত্রে যাত্রীর অসাবধানতার জন্যও দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগে গত এপ্রিল মাসে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় ৩৫ জন যাত্রীর প্রাণ যায়। নৌপথে দুর্ঘটনা হওয়ার ও দুর্ঘটনা না কমার কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো প্রশাসনের গাফিলতি। দুর্ঘটনাগুলো হয় তারপর প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করে কিছুদিন পর আবার সব থেমে যায়। মামলা হলেও বিচার না হওয়ার কারণের মধ্যে আছে রাষ্ট্র পক্ষের উদাসীনতা কিংবা সাক্ষী হাজির করতে না পারা। তবে এই দায় এড়াতে পারবে না দেশের সর্বোচ্চ আদালত। লঞ্চ ও নৌ-দুর্ঘটনার ১৮টি মামলা এখনো নৌ আদালতে চলমান কিন্তু এর সুরাহা মিলবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান থাকতেই হয়। সব মিলিয়ে জনগণ চায় নৌপথের নিরাপদ যাত্রা। এক্ষেত্রে দরকার সচেতনতা। সচেতনতাগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেলে কোনোভাবে নৌচলাচল চালু রাখা যাবে না। অতিরিক্ত যাত্রী কিংবা মালামাল না নেয়া। দক্ষ চালক, লাইসেন্সবিহীন নৌযান বয়কট ও জরিমানা করতে হবে। পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেটের সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে হবে এবং নৌ আদালতের প্রণয়নকৃত আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে। অনেক সময় দুর্ঘটনার মূল নৌযানের মালিক প্রভাবশালী হলে সেই মামলা থেমে যায় কিন্তু নৌপথে সুরক্ষা পেতে চাইলে এসব মামলার বিচার করা জরুরি। তাছাড়া নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে যাত্রীসহ সরকারি, বেসরকারিভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। এসব বাস্তবায়ন হলেই ধীরে ধীরে বিলীন হবে নৌ-দুর্ঘটনা। নৌযাত্রা হবে শান্তিপূর্ণ। বিশাল সাহা শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App