×

জাতীয়

খালেদার বিদেশ যাত্রায় সরকারের অনুমোদন ছাড়াও আছে জটিলতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২১, ০৪:৪৫ পিএম

দেশের অন্যতম শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতির বাইরেও বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। খবর বিবিসির

খালেদা পরিবারের একজন সদস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, একদিকে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের যাওয়ার ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ আছে, অন্যদিকে বর্তমান শারীরিক অবস্থায় খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় ধরে বিমানে যেতে পারবেন কিনা- সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা এখনও কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। যদিও তাঁর চিকিৎসক তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন।

তবে বিএনপির একজন নেতা জানিয়েছেন, নানামুখী সমস্যা মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং তারা এমন প্রস্তুতি নিচ্ছেন যাতে বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দেয়ার ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়া যায়।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সরকারের সাথে যোগাযোগের ভিত্তিতেই খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষে তাঁর ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা করে বিদেশ যাত্রার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। সরকার বিষয়টি ইতিবাচক এবং মানবিক দৃষ্টি দেখার কথা বললেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অনুমতি দেয়নি।

এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। সরকারের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, আবেদনে উল্লেখ করা মানবিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাতে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে এবং এরপর আর এটি নবায়ন করা হয়নি। এখন দু'দিন আগে তাঁর পক্ষে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট নবায়নের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশে এখন নাগরিকদের ই-পাসপোর্ট দেওয়া হয়। পুরনো পদ্ধতির মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দেওয়া এখন একেবারে সীমিত করে আনা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

বিএনপির একজন নেতা জানান, ই-পাসপোর্ট করানোর জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট, চোখের স্ক্যান এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর সরবরাহ করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া বেশ গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁর পক্ষ এগুলো সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তাঁর ক্ষেত্রে এসব শর্ত শিথিল করে কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে পুরনো ধরনের মেশিন রিডেবল পাসপোর্টই নবায়ন করে দিচ্ছে। সেই প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে বলে তার পরিবারকে জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পরিবার তাকে প্রথম লন্ডনে নিতে আগ্রহী। কিন্তু বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যে সেদেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তার পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন যে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে সেখানে আলোচনা চালাচ্ছেন। লন্ডনের বিকল্প হিসাবে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার বিষয়ও পরিবারের চিন্তায় রয়েছে। তবে এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ থেকে যাত্রী যাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

এখন সৌদি আরব অথবা খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য সুবিধাজনক কোন দেশ হতে পারে, তেমন বিকল্প দেশের কথাও এখন তাঁর পরিবার এবং দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, এমন ব্যক্তির সৌদি আরবে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ মানার নিয়ম রয়েছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য এবং সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্য বা সিঙ্গাপুরে নেয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ কোন সমস্যা হবে না বলে তারা মনে করেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৬ বছর এবং তিনি কিছুদিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ফলে এখনকার শারীরিক অবস্থায় তিনি বিমানে দীর্ঘ যাত্রা করতে পারবেন কি-না, সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত দেবেন জানান পরিবারের একজন সদস্য। তাঁর একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জটিলতাগুলোর উন্নতি লক্ষনীয়ভাবে ঘটছে না। প্রায় সবক্ষেত্রে অবস্থা আগের মতোই থাকছে। সেজন্য তাঁর বিমানে দীর্ঘ যাত্রা নিয়ে এখনও সংশয় আছে। লন্ডনের যাওয়ার মতো দূরের যাত্রার সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে তারা আবারও সবকিছু পরীক্ষা করে দেখবেন বলে তিনি জানান।

এই চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন যে খালেদা জিয়ার শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা এখন চলছে। সেগুলোর রিপোর্ট নিয়ে মেডিকেল বোর্ড আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। লন্ডনে বা অন্য কোন দেশে নেয়া হলে হাসপাতাল পাওয়া যাবে কি-না, সেই প্রশ্নও রয়েছে। তবে এ বিষয়টিও তারেক রহমান দেখছেন বলে দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

গত ১১ই এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সে সময় সিটি স্ক্যান রিপোর্টে তাঁর ফুসফুসে পাঁচ শতাংশে সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল। এরপর গত ২৫শে এপ্রিল খালেদা জিয়ার দ্বিতীয়বারের মতো কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হলে সেখানেও তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। পরে জটিলতা দেখা দেয়ায় গত ২৭শে এপ্রিল থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। সূত্র: বিবিসি বাংলা

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App