কবিতা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২১, ১২:১১ এএম
জয়নগর : রবীন্দ্র গোপ
তিতাস পারেই বাড়ি, যুদ্ধের সময় সব ছেড়ে
যুদ্ধে যাই, মা তাকিয়ে থাকেন, যত দূরেই তাই
মাকে রেখে যাওয়া কত যে কষ্টের সেদিন ছিলো
এখনো সেদিন মনে হলে বুক ফেটে কান্না আসে
তবু দেশ মাকে শত্রুমুক্ত করার আনন্দ আছে
আজও মাকেই মনে পড়ে বেশি মা নেই তবুও
জন্মের সে গ্রাম জয়নগর, ডাকছে বারবার
সবুজে শ্যামলে পাখির কূজনে মাকে মনে পড়ে।
সেই সে গ্রামের কথা তো যায় না ভোলা, বৈশাখের
হালখাতা, হিসাব শুরুর দিন। পুরনো দিনের
হিসাব পেছনে ফেলে চলে মিষ্টি মুখ ভালোবাসা
কত কি বৈশাখী মেলা, তালপাতার বাঁশি বাজানোর
শিশুকাল মনে পড়ে, সেদিনের কথা মনে পড়ে
বাবা ফিরতেন সোনালি ধানের বিকেল বেলায়।
সংশয় : শেখ সালাহ্উদ্দীন
বলো, আবার কি দেখা হবে?
উন্মত্ত পিশাচ মগ্ন হত্যার উৎসবে
বাজেনি যদিও প্রলয়ের বাঁশি
নৈঃশব্দ্যের গভীরে ডেভিল-হাসি;
করতল রেখেছে কি ধরে
স্পর্শবোধ স্মৃতিতে? কি করে
বুঝি? সুরভিত কচিঘাম
ব্যক্ত করে নির্ভুল যে নাম
হৃদয়জ অনুভূতি কি যথার্থ আসে?
না কি ভ্রান্তি নিয়েছে দখল অনভ্যাসে!
রাত্রির আঁধার নিত্য আমার সিথানে
গাঢ় শঙ্কা যত্নে তুলে আনে
একাকী অজান্তে মুহুর্মুহু কাঁটা হই
অতঃপর ঘুমহীন রাত জেগে রই।
সূর্যের দামামা : মোহাম্মদ হোসাইন
যমের হাত ঘাতকের মতো কর্কশ, প্রায়ান্ধকার!
মানুষের আয়ু নিয়েই বেঁচে থাকে মানুষ
দিন শেষে মানুষই বসে থাকে, হাসে, কাঁদে
কখনো কখনো ছাদহীন মানুষেরা মুখোমুখি বসে
দুঃখের হাতল ধরে টানে, তারপর ঘুমিয়ে যায়
তারা ঘুমায়ও বড়ো
একা একা চলে যাচ্ছে মানুষ
চলে যাচ্ছে কৃতী ও কৃতবিদ্যগণ
কোথায় যায়, কেন যায়
কেউ জানে না...!
পৃথিবীতে যত সন্ধ্যা নামে, আর যত ভোর!
যত অন্যায্য সময় খাপ ধরে থাকে
দুঃখীরাই সেসব প্রতিহত করে, বুক দিয়ে ঠেকায়...
অথচ, সুখীদের চোখে ঘুম আসে না
প্রায়শ, ট্রেতে সাজানো কোমল পানীয়
তুমুল ক্ষমতাকেও লুঠে নিয়ে যায়
আর, যারা চাঁদের কিরণ মেখে পথে নেমে আসে
তাদের চোখেমুখে ক্ষুদেবার্তা পৌঁছে দেয় নবীন কিশোর
অতিমারি ঠেলে সূর্য তখন দামামা বাজায়...!
জমিনের ডাকে : কামরুন নাহার রুনু
ঝাঁপির ভিতর থিকা মুখ তুইলা দেহে চান্দ
পাত্থরের নাহান জীবনের শরীর ছুঁইয়া দেহি, কালসাপে ধ্বংসাইছে তারে,
বাপজান, রাইত কহন পোহাইবো কও?
বাড়ির জন্মভিটায় কহন লকলক কইরা লাউয়ের ডগা গদগদ হাসিতে নিজেরে লুটাইবো!
কহন ডালা- কুলা ভইরা উৎরাইয়া পড়বো আমাগো সোনালি দিন
মায়ের হাতে কহন বড় চিতল মাছ রৈদের মাঝে চিকচিক করবো!
আহা! রাইত কহন পোহাইবো কও?
জলের চোক্ষে পানি নাই, মাছের গায়ে জল নাই, মানুষের চামড়া আছে মন নাই
সাত পুরুষের ভিটায় সুড়ঙ্গ দিয়া কহন, কেÑ যে আগুন ছোবল দিবার চায়
হ আমিও জানি, কেমনে বুকের জমিনে পুইত্তা দিতে হয় শান্তির কবুতর
আমিও জানি, পিঁপড়ার দঙ্গল কেমন কইরা ছিনা টানে মজবুত কইরা রাহে
তাগো জীবন চলাচল।