×

সারাদেশ

শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম অনুষ্ঠিত, সর্বোচ্চ দামে বিক্রি ‘রোজ টি’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২১, ০৫:৪৯ পিএম

শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম অনুষ্ঠিত, সর্বোচ্চ দামে বিক্রি ‘রোজ টি’

এ বছর শ্রীমঙ্গলের -এ নিলামে প্রথম বারের মতো বিক্রি হয় রোজ টি

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্রে চলমান অর্থ বছরের প্রথম চা নিলাম সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার শ্রীমঙ্গল খান টাওয়ারে অনুষ্ঠিত এ নিলামের প্রথম দিনে প্রায় ৬০ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে বলে জানান, টি ট্রেডার্স অ্যান্ড প্ল্যান্টারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক জহর তরফদার।

এ বছর শ্রীমঙ্গলের -এ নিলামে প্রথম বারের মতো বিক্রি হয় রোজ টি। গোলাপ ফুলের ফ্লেভার নিয়ে এই গোলাপী চা তৈরি করেছে হবিগঞ্জের বৃন্দাবন চা বাগান। উৎকৃষ্ট মানের ব্ল্যাক টি বিটি টু এর সঙ্গে গোলাপের পাপড়ি মিশিয়ে এই রোজটি তৈরি করা হয় বলে জানান, বৃন্দাবন চা বাগানের ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন খান।

নাসির উদ্দিন খান আরো জানান, চা শিল্পে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে তারা একটু অতিরিক্ত পরিশ্রম করে নতুন ধরনের এ চা তৈরী করে আসছেন। এর আগে তারা হোয়াইট টি ও ইয়েলো টি তৈরী করেন যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দামী চা হিসেবে স্বীকৃত। তিনি জানান, তাদের হোয়াইট টি ৭ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হয়, ইয়োলো টি ৫ হাজার টাকার উপরে এবং গোলাপী টি ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বুধবারের অকশনে  তাদের এ চা প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকা দরে এটি ক্রয় করে শ্রীমঙ্গলের এশিয়ান টি। এশিয়ান টি এর পরিচালক রিয়াম আহমদ জানান, নতুন আবিস্কৃত এ গোলাপ টি তারা অকশন ডেকে নিতে পেরে খুশি। তিনি আশা করছেন নতুন এ চা টির ভালো ক্রেতা পাবেন এবং দামের সঙ্গে সুনামও তারা কুড়াতে পারবেন।

চা ক্রেতাদের চাহিদা ও বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে কিছুটা বিলম্বে শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বুধবার অনুষ্ঠিত নিলামে দেশের নানা প্রান্ত থেকে চা পাতার ক্রেতা ও বিক্রয় প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ‘টি ট্রেডার্স অ্যান্ড প্ল্যান্টারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ’-এর ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত চা নিলামে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক বায়ার ও ৩টি ব্রোকার হাউজ অংশ নেয়। নিলামে কেজি প্রতি চায়ের সর্বোচ্চ  ৩ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ১৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

শ্রীমঙ্গল ব্রোকার্স এর পরিচালক হেলাল আহমদ জানান, চলমান অকশনে তারা ছাড়াও রুপসী বাংলা ব্রোকার্স ও জালালাবাদ ব্রোকার্স অংশ নেন। তিনটি বোকার্সের মধ্যে তাদের শ্রীমঙ্গল ব্রোকার্সে ৫০ হাজিার কেজি, রুপসী বাংলা ব্রোকার্সে ১০ হাজার কেজি, জালালাবাদ ব্রোকার্সে ৭ হাজার ৮ শত  ৮৬ কেজি সহ মোট ৬৭ হাজার ৮ শত ৮৬ কেজি চা নিলামে উঠে। তিনি জানান, সরাসরি ও আউট লাইন মিলেয়ে ৯০ ভাগ চা বিক্রি হয়েছে। যার পরিমান প্রায় ৬০ কেজি।

এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে প্রতি নিলামে চা পাতা উত্তোলন ও বিক্রি বৃদ্ধি হওয়ার আশাবাদী চা সংশ্লিষ্টরা। দেশের ১৬৭ চা বাগানের মধ্যে শুধু মৌলভীবাজারেই রয়েছে ৯২টি চা বাগান। এ অঞ্চলের উৎপাদিত চা দু বছর আগেও চট্রগ্রামের নিলাম কেন্দ্রে নিয়ে বিক্রি করতে হতো। ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। করোনা ভাইরাসের বন্ধের মধ্যেও দেশের বিভিন্ন বাগানে চা উৎপাদন চালু রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে পরিমিত বৃষ্টি ও আদ্রতা অনুকূলে থাকায় মৌলভীবাজারে চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ বছর লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন লোহাউনি চা বাগানের ব্যবস্থাপক মাহমুদ আলী খান। তিনি জানান, শ্রীমঙ্গলের নিলাম থেকে চা ক্রয় করার জন্য বায়ারদের আরো উৎসাহিত করতে হবে। কারণ শ্রীমঙ্গল থেকে সারা দেশের যোগাযোগ সহজ এবং গুনগত মানের চা পাওয়া সম্ভব।

দেশের ৯০ শতাংশ চা উৎপাদন হয় সিলেটে। বিট্রিশ আমল থেকে একমাত্র চা নিলাম কেন্দ্র ছিলো চট্টগ্রামে আর এখান থেকে বিশেষ এ চা গুলো চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করতে নিরুৎসাহিত ছিলেন ব্যবস্থাপকরা। তবে শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপন হওয়ায় এ জাতীয় ভিন্নমাত্রার চা গুলো ক্রেতাদের সামনে উপস্থাপন করার সুযোগ পাচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রে বায়ার বাড়ানোর জন্য গ্রাউন্ড ওয়ার্ক বাড়ানোর পরামর্শ সিনিয়র চা ব্যবস্থাপকদের।

দেশের ২য় চা নিলাম কেন্দ্র শ্রীমঙ্গলের অকশনে দেশের সকল বায়ার ও ব্রোকার হাউজ অংশ নিলে এখানে আরো নৃত্য নতুন উন্নত মানের চা তুলার আশা প্রকাশ করেন সিলেটের চা উৎপাদকরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App