×

জাতীয়

নদীগুলোকে আমাদের বাঁচাতেই হবে: প্রধানমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২১, ০২:২৫ পিএম

নদীগুলোকে আমাদের বাঁচাতেই হবে: প্রধানমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার সকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার অবকাঠামো ও জলযানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বিটিভি

নদীগুলোকে আমাদের বাঁচাতেই হবে: প্রধানমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার সকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার অবকাঠামো ও জলযানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠণ করে সেই ফাণ্ড থেকে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে পায়রা বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ শুরু করা হচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে আলাদা একটি ফান্ড তৈরি করছি যেটা বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ফান্ড নামে অভিহিত। সেই ফান্ড থেকে প্রথম যে অর্থটা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেটা পায়রা বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর জন্য। আমরা নিজেদের টাকা দিয়ে করা শুরু করে দিচ্ছি। যাতে বাংলাদেশকে আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হতে না হয়, কারো মুখের দিকে তাকিয়ে যেন চলতে না হয়। আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি, নিজের পায়ে দাঁড়াবো আর সম্মান নিয়ে চলবে এটাই হচ্ছে আমাদের চিন্তা।

বৃহস্পতিবার (৬ মে) সকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার অবকাঠামো ও জলযানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব জলযান ও অবকাঠামো এর উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কারো কাছে যেন হাত পাততে না হয়। আমরা যেন নিজেরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করতে পারি। একসময় পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। তখন আমি বলেছিলাম কারো অর্থে নয় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো। আল্লাহর রহমতে ও আপনাদের এবং দেশবাসীর দোয়ায় আমরা নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করছি।

নৌপথ ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাপকভাবে সারা দেশের নদী খনন করার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৪-২০২৫ সালের মধ্যে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা। শুধু খনন করলেই চলবে না যেহেতু ক্যাপিটাল ড্রেজিং করার পর প্রতি বছর মেনটেইন্যান্স ড্রেজিংটা করতে হবে। একবার খনন করে ছেড়ে দিলে চলবে না তার কারণ হচ্ছে আমরা সবচাইতে বেশি পলি বহন করি। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। তাছাড়া আমরা বন্দর সংযোগকারী নদী ড্রেজিং এবং রাস্তাসমূহ ৬ লেন ও ৪ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। সমস্ত বাংলাদেশ একটা যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে আমাদের অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আমাদের আমদানি-রপ্তানির আরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, সুগম হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্যকে সহজ করার লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে নৌপথে বাণিজ্য আরও বাড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। তাছাড়া বাংলাদেশের বন্দরগুলো যেন নেপাল ভুটান ভারত ব্যবহার করতে পারে সেই সুযোগটাও আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি।

ঢাকার চারদিকের নদী প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকার চারপাশ দিয়ে চারটা নদী। অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণ এবং বিভিন্ন কারণে দখলের ফলে তাছাড়া দূষণের ফলে সেগুলি খুবই করুণ অবস্থা। সেগুলো যাতে পুনরায় সচল করা যায় এবং যে ব্রিজগুলির কারণে নৌযান চলতে পারে না সে গুলির পরিবর্তে নতুনভাবে ব্রিজ করা এবং সে গুলোকে সংস্কার করা, তাছাড়া নদীরগভীরতা বৃদ্ধি করা অর্থাৎ পানিপ্রবাহ যেন অব্যাহত থাকে আর দূষণমুক্ত করবার জন্য প্রত্যেকটা শিল্পাঞ্চলের দূষণমুক্ত ব্যবস্থা যেন করা হয় সে ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। মানুষ যেন একটু বেরোতে পারে, ঘুরতে পারে, মানুষ যেন সেখানে যেতে পারে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোংলা বন্দর একসময় ছিল চালনা বন্দর। পরে নদী সরে যায় এরপর মোংলায় সে বন্দরটা হয় এই বন্দরটা যাতে ভালোভাবে সচল হয় তার জন্য জাতির পিতা নিজে উদ্যোগ নিয়ে ঘাসিয়াখালি নদীতে ড্রেজিং করেন। ড্রেজিং করে জাতীয় পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা হয় তার ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্যে '৭৫ এরপর ২১ বছর পরে আমরা ক্ষমতায় আসি। দেখলাম মংলা বন্দর মুমূর্ষ অবস্থায় পড়ে আছে। জাতির পিতার যে চিন্তাভাবনা যে নীতিমালা ছিল সেটাকে মাথায় রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। '৭৫ পরবর্তী যারা ক্ষমতায় ছিল জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ বা খালেদা জিয়া তাদের আমলে কিন্তু কোন ট্রেজার সংগ্রহ করা বা নদী খনন করা এদিকে তাদের কোন দৃষ্টি ছিল না। আমরা ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত (২০১৫ সাল পর্যন্ত) ১৮টি ড্রেজার সংগ্রহ করি এবং আজ আরও ২০টি ড্রেজার বিআইডব্লিউটিএতে যুক্ত হয়ে মোট ৪৫টি ড্রেজার হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি ড্রেজার দিয়ে বছরে প্রায় ৭৫০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা যায়। আর নদ-নদীগুলো সংরক্ষণের জন্য ড্রেজিংয়ের চাহিদা ১ হাজার ৬০০ লাখ ঘনমিটার। আমরা চাই আমাদের দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হোক, কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে কিছুটা হয়তো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি তবুও আমাদের নিজেদেরই পুষিয়ে নিতে হবে তার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

তিনি বলেন, নদীগুলোকে বাঁচাতেই হবে আমাদের। ইতোমধ্যে চিলমারী এলাকায় নদী বন্দর, এক সময় এই নদী বন্দর চালু ছিল। আমরা সেই নদী বন্দর নির্মাণ এবং বাঘাবাড়ী নদীবন্দর আধুনিকায়ন, গোমতী নদীর নাব্যতা উন্নয়নের কাজ, ঘাঘট, চিনাই এবং বংশী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি সিলেট এবং কক্সবাজার এলাকায় নদীবন্দর উন্নয়ন, আরিচা ফেরি সার্ভিস চালুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App