×

অর্থনীতি

এবারো উচ্চাভিলাষী বাজেট!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২১, ০৯:৫০ এএম

এবারো উচ্চাভিলাষী বাজেট!

বৈশি্বক মহামারী করোনার কারণে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে আনা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ১ শতাংশের বেশি কমিয়ে আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য থাকবে ৭ শতাংশের ঘরে।

নতুন অর্থবছরে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেই বাজেটের কাজ শুরু হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা উচ্চাভিলাষী মনে করলেও ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার জন্য কোনো থোক বরাদ্দ থাকবে না। পাশাপাশি বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যেই সব ধরনের কর্মকাÐ পরিচালনা করতে হবে। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) নির্ধারিত ব্যয়সীমা অতিক্রম করার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, জিডিপির আকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরে এগোচ্ছে বাজেট প্রণয়নের কাজ। এটি টাকার অঙ্কে ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এ জিডিপির ১৭ শতাংশের ওপর ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয় নতুন বাজেটে। করোনার কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার পুরোপুরি হয়নি। ব্যবসাবাণিজ্য, পর্যটন খাত, পরিবহন ও হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায় এখনো মন্দা চলছে। এজন্য চলতি অর্থবছরের শুরুতে ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তবে চলতি বছরের ন্যায় এবারও মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খাদ্য উৎপাদন ভালো হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্ববাজারে কম থাকবে। এর সুফল দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে পড়বে। যদিও বর্তমানে বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে আছে। আসন্ন বাজেটে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় অগ্রাধিকার খাতগুলোয় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করাই হবে প্রধান কাজ। এজন্য স্বাস্থ্য, কৃষি, সমাজকল্যাণ, খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ নজর দেয়া হবে। এছাড়া কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আগামী বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থাকছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকারও বাড়ছে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। আর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য এসএমই খাতে আরো অর্থায়ন করা হবে। আগামী বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার চলতি বছরের চেয়ে ১০% বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এদিকে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব খাতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। রাজস্ব খাতে মোট আদায়ের হার জিডিপির প্রায় ১১ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা মোট জিডিপির ৯ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পগুলোতে প্রতিবছরের ন্যায় আগামীতেও বড় বরাদ্দ থাকবে। তবে এডিপিতে বড় ধরনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা থাকছে না। ফলে উন্নয়ন খাতে সরকারি বিনিয়োগ অর্থাৎ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নতুন বছরে বরাদ্দের আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এটি চলতি এডিপির তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। চলতি বছরে এডিপিতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। করোনার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটেছে। অর্থ বিভাগের হিসাবে এবারো ঘাটতি বাজেট ৫ শতাংশের ওপরে থাকছে। বাজেট ঘাটতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ রেখে হিসাব মেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার জন্য কোনো থোক বরাদ্দ থাকবে না। এজন্য বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যেই সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এডিপি নির্ধারিত ব্যয়সীমা অতিক্রম করার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, গত বাজেটে চারটি মূলনীতির মধ্যে একটি ছিল সরকারি ব্যয় বাড়ানো। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার করতে বলা হতে পারে। তবে সার্বিক ব্যয় কমানোর কোনো সুযোগ নেই। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে হলে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও কৃষি খাতে আরো ব্যয় বাড়াতে হবে। সূত্রমতে, করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সার্বিক ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে চলতি বাজেটের তুলনায় প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় ধরে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই হিসাবে আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার হচ্ছে ছয় লাখ দুই হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। তবে সার্বিক ব্যয় বাড়ানোর পথে হাঁটলেও নতুন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে অযৌক্তিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের এক পরিপত্রে বলা হয়, অননুমোদিত স্কিমের জন্য কোনো বরাদ্দের প্রস্তাব দাখিল করতে পারবে না মন্ত্রণালয়গুলো। তবে আগামী ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন স্কিমের বিপরীতে বরাদ্দ প্রদর্শন করা যাবে। এ ছাড়া আগামী তিন বছরের বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রকল্প সাহায্য (পিএ) এবং পুনর্ভরণযোগ্য প্রকল্প সাহায্য (আরপিএ) প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিজস্ব আয়ের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে ব্যয়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সংস্থার মোট পরিচালন এবং উন্নয়ন ব্যয় পুনর্নির্ধারিত সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। অর্থ বিভাগ বলেছে, মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোয় (২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে কোনো আইটেমের আদায়ের হার বাড়ালে পুনর্নির্ধারিত হারে সম্ভাব্য অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটি প্রস্তাবিত প্রাক্কালনে তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আকার এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে থাকে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলা হয়, এডিপি প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রকল্পওয়ারি বরাদ্দ পর্যালোচনা করতে হবে। মোট এডিপির ব্যয়সীমা অতিক্রম করা যাবে না। নতুন অর্থবছরে সম্ভাব্য এডিপির প্রাথমিক আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। চলতি বছর এডিপিতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে দুই লাখ ১৫ হাজার ৪৫ কোটি টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App