×

স্বাস্থ্য

শনাক্ত কমলেও শঙ্কা কমেনি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২১, ০৯:৫৫ এএম

শনাক্ত কমলেও শঙ্কা কমেনি

করোনা সংক্রমণ রোধে গণপরিবহন বন্ধ, তাতে কি? গন্তব্যে পৌঁছুতে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে গাদাগাদি করে চড়ছেন পিকআপে। গতকাল রাজধানীর কেরানীগঞ্জ-কদমতলী সড়ক থেকে তোলা। ছবি- ভোরের কাগজ

ঈদে সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা মাস্ক পরা ও টিকা নেয়া জরুরি

দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দৈনিক করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ছিল উদ্বেগ জনক। করোনা সংক্রমণ শুরুর বছরের এপ্রিলজুড়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৭ হাজার ৬১৬ জন। কিন্তু ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট, মানুষের উদাসীনতা সব মিলে বছরের ব্যবধানে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায় ১৯ গুণ। আর মৃত্যুর দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশে মহামারির প্রথম মাস মার্চে ৫ জন ও পরের মাসে ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এক বছর পরে ঠিক একই সময়ে মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ১৫ গুণ। এতে গত মাসে মারা গেছেন ২ হাজারের বেশি মানুষ।

অবশ্য চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মৃত্যু ও সংক্রমণ দুটোই কিছুটা কমতির দিকে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অভিজ্ঞতা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতায় এক বছরে নমুনা পরীক্ষা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে সুস্থ মানুষের সংখ্যাও। এসবের পরও এখনো শঙ্কা কাটেনি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আসন্ন রোজার ঈদ উপলক্ষে মানুষের চলাচল, গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত, দোকান ও মার্কেটে মানুষের ভিড় পুনরায় সংক্রমণ বাড়ার কারণ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। তারা বলছেন, সংক্রমণ কমছে বলে স্বস্তির কোনো সুযোগ নেই। এক মুহূর্তের বেখেয়ালি, উদাসিনতা পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে। তাছাড়া ভারতের সংক্রমণ পরিস্থিতিও উদ্বেগের কারণ। বিশেষত, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে সামাল দেয়া মুশকিল হবে। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে সরকার দুদেশের সীমান্ত বন্ধ করে দিলেও পারাপার কিন্তু থেমে নেই। চোরাকারবারসহ নানা কারণে লোকজন উভয় দেশ থেকেই অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করছে। এর মাধ্যমেও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট চলে আসতে পারে।

স¤প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ কমছে; তবে আগের মতো উদাসীন হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া মুশকিল হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, মাস্ক পড়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অব্যাহত না রাখলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ লাগামছাড়া হয়ে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত জনস্বাস্থ্য পরামর্শ কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, মাস্কের কোনো বিকল্প নেই। মাস্ক পরলে মানুষকে ভাইরাস আক্রমণ করার আশঙ্কা থাকবে না। একই সঙ্গে টিকাও নিতে হবে। কারণ যদি কেউ সংক্রমিত হয়ে যায় তাহলে টিকা তার ঝুঁকির মাত্রা কমাবে।

এদিকে বিধিনিষেধের মেয়াদ ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ালেও আগামী ৬ এপ্রিল থেকে জেলার ভেতর গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে এই গণপরিবহন চলাচল হতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বড় কারণ। এদিকে ঈদ সমাগত হওয়ায় সড়কে ঘরমুখো মানুষের চাপও বাড়বে। আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ট্রাক, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা এবং ব্যক্তিগত গাড়িতে করে হরদমই এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াত করছে মানুষ। জেলার ভেতর গণপরিবহন চলতে শুরু করলে ঈদযাত্রী লোকজন এই সুযোগও নেবে। ফলে জেলার ভেতর চলাচলকারী গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা- ঈদযাত্রীদের কারণে করোনা সংক্রমণ আরেক দফা বেড়ে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিদ ও প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের হার এবং রোগীর সংখ্যা কমছে, তার মানে কিন্তু এই নয়, দেশ থেকে করোনা চলে যাচ্ছে। মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া আমাদের করোনা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সোমবারের বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনার যে দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের মধ্যে এসেছিল, সেটি কমতে শুরু করেছে। এতে করে আমাদের আত্মতুষ্টি বা করোনা চলে গেছে- এ রকম ভাবার সুযোগ নেই। এখন ঈদকে কেন্দ্র করে যে কোনো মুহূর্তে আবার করোনা সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমরা দেখছি- বিভিন্ন শপিংমলে, দোকানে মানুষের উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয়েছে। অনেকেই ঈদের বাজার করতে বের হচ্ছেন। সেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা ছিল, সেটি করা হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে স্বাস্থ্যবিধি পালনে অবহেলা করছেন মানেই কিন্তু আপনারা আশপাশ থেকে সংক্রমিত হয়ে পরিবার ও নিকটজনকে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন।

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখছি অনেকেই বাইরে মাস্ক খুলে ইফতার খাচ্ছেন, তারা ভাবছেন এতে বিপদের আশঙ্কা নেই। এতেও সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। বাইরে এসে খাবার গ্রহণ এড়িয়ে চলুন। বাইরে এসে কোনো অবস্থাতেই যেন মাস্ক খোলা না হয়, সঠিক নিয়মে যেন সেটি ব্যবহার করা হয়। শারীরিক দূরত্বও যেন মেনে চলা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App