×

আন্তর্জাতিক

ভারতের প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২১, ০৮:৫৩ পিএম

ভারতের প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় / ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা!

তৃতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নিয়েছেন মমতা।

কলকাতার রাজভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে আজ পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই তিনি রাজনীতির ইনিংস শেষ করবেন, না-কি দিল্লিতেও তাকে একদিন প্রধানমন্ত্রীত্বের দাবিদার হিসেবে দেখা যাবে- এই প্রশ্নটা আবার নতুন করে উঠতে শুরু করেছে।

পশ্চিমবঙ্গ দখলে মরিয়া বিজেপিকে যেভাবে তিনি পর্যুদস্ত করে হারিয়েছেন, তাতে অনেকেই মনে করছেন আগামী সাধারণ নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনিই হতে পারেন যোগ্যতম মুখ। খবর বিবিসি বাংলার।

তৃণমূল কংগ্রেসের সিনিয়র এমপি কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, তার দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একদিন অবশ্যই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে চায়।

তিনি বলেন, মমতা একেবারে শূন্য থেকে উঠে এসেছেন শুধু নিজের দৃঢ়তা, দক্ষতা আর প্রশাসনিক সামর্থ্যের জোরে। মোদির চ্যালেঞ্জার হয়ে ওঠার মতো সব যোগ্যতাই তার আছে। তবে বিষয়টা নিয়ে দলে এখনও আলোচনা হয়নি। কিন্তু তৃণমূলের নেত্রী একদিন যে অবশ্যই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, সেটা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।

[caption id="attachment_282551" align="aligncenter" width="800"] তৃতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।[/caption]

দিল্লিতে সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার সোমা চৌধুরী আবার বলছিলেন, মমতা প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে নামতে পারবেন কি-না সেটার পূর্বাভাস করা কঠিন- তবে এই মুহূর্তে ভারতে রাজনৈতিকভাবে যে 'ফ্লুয়িড' পরিস্থিতি চলছে তাতে সেটা হয়তো একেবারে অসম্ভবও নয়।

মিস চৌধুরীর কথায়, উদ্ধব ঠাকরে থেকে শুরু করে অখিলেশ যাদব- বহু বিরোধী নেতার সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক আছে। ফলে ২০২৪ নির্বাচনের আগে যদি কোনো বিজেপি-বিরোধী জোট সত্যিই গড়ে ওঠে, তাহলে সেই জোটের মুখ হিসেবে মমতা ব্যানার্জীকে দেখা যেতেই পারে। তবে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক নেই, এটাও সুবিদিত। কাজেই কংগ্রেস তার কাছে কতটা নতি স্বীকার করতে রাজি হয়, সেটাও দেখার বিষয়।

সোমা চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকেই ভারতে যে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন ধাঁচের নির্বাচনী প্রবণতা শুরু হয়েছে, সেটার এবার অবসান হতে পারে। একজন 'সেভিয়ার লিডার' বা রক্ষাকর্তা নেতাই আমাদের সব বিপদ থেকে বাঁচাবেন, সেই ভাবনার সঙ্গে রোমান্স হয়তো এবার শেষ হবে।

তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে মানুষ মুখ পাল্টাতে আবার কোয়ালিশন বা জোট রাজনীতির ওপর ভরসা রাখতেই পারেন, আর সেখানে মমতা ব্যানার্জীর নাম জোটের নেত্রী হিসেবে উঠে আসতেই পারে। তবে হ্যাঁ, এই অঙ্কেও অনেক 'কিন্তু আর যদি' থেকেই যাচ্ছে।

কলকাতায় প্রবীণ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও অধ্যাপক অমিত ভট্টাচার্য মনে করেন, মমতা ব্যানার্জির দিল্লিমুখী হওয়াটা মোটেই ঠিক হবে না। জানি না তিনি কী করবেন। তবে আমার মতে তিনি যেখানে আছেন সেখানে থাকাটাই বোধ হয় ভালো। সর্বভারতীয় স্তরে রাজনীতি করার জন্য যে ধরনের মতাদর্শ, কর্মসূচি বা লক্ষ্য দরকার সেটা তৃণমূলের আছে বলে তো মনে হয় না।

তিনি আরও যোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীত্বের ভাবনা ভাবাটা আসলে এখন সুদূরপ্রসারী চিন্তা। তার বরং পশ্চিমবঙ্গেই মনোনিবেশ করা উচিত- এ রাজ্যের যুবকদের চাকরি-বাকরি, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত। মাসোয়ারা, কার্ড - এসব দিয়ে আর কতদিন চলবে?

২০১১ সালে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসেছিলেন তার বেশির ভাগই অপূর্ণ রয়ে গেছে, সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন অমিত ভট্টাচার্য।

মমতা ব্যানার্জীর প্রধানমন্ত্রী পদে তুলে ধরার ক্ষেত্রে আর একটা সমস্যা হল, তিনি বরাবরই আঞ্চলিকতা বা প্রাদেশিকতার রাজনীতির জন্যই দিল্লিতে পরিচিত।

দু'দফায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় তিনি শুধু পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রেল প্রকল্পের দিকেই নজর দিয়েছেন, বাকি দেশের কথা ভাবেননি- এই অভিযোগও বার বার উঠেছে।

কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারে সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে তাকে গোটা দেশের সমস্যাই সামলাতে হয়েছে, সারা ভারতের ইস্যুগুলো নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়েছে। কাজেই তিনি শুধু বাংলার জন্য কাজ করেছেন, এই অভিযোগ বিশ্বাস্য নয়! মমতা ব্যানার্জী ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে ক্রমশ 'স্টেটসম্যান' হয়ে উঠেছেন, ইতোমধ্যেই জাতীয় স্তরের নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন- নানা দৃষ্টান্ত দিয়ে এটাও বোঝানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে জিতেই তিনি সারা দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে কোভিড টিকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিনামূল্যে টিকা চাননি।

এদিকে, অমিত ভট্টাচার্য মনে করেন, সার্থক 'স্টেটসম্যান' হয়ে উঠতে গেলে তাকে তিস্তা চুক্তি বা আরও বহু ইস্যুতেই আঞ্চলিকতার রাজনীতি ছাড়তে হবে এবং আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারগুলো দেখতে হবে।

মমতা ব্যানার্জীর খুব প্রিয় একটা রাজনৈতিক স্লোগান আছে, "হামসে যে টকরায়েগা, চুরচুর হো জায়েগা।" অর্থাৎ, আমাদের সঙ্গে টক্কর নিতে এলে চুরমার হয়ে যাবে! হিন্দিভাষী এলাকায় তো বটেই, এমনকি বাঙালি এলাকায় প্রচারে গিয়েও তিনি এই স্লোগানটা প্রায়ই দিয়ে থাকেন।

অনেকেই বলেন, আগে অস্বাচ্ছন্দ্য থাকলেও তিনি যে ইদানীং প্রায়ই হিন্দিতে ভাষণ দেন কিংবা মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার দেন- সেটাও তার সর্বভারতীয় রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশের একটা আভাস।

সেক্ষেত্রে হয়তো ভারতে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে লক্ষ্য করেই তাকে এগোতে হবে- এমন কী পুরোপুরি জাতীয় রাজনীতিতে মনোনিবেশ করতে হলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রিত্বও মাঝপথে ছেড়ে দিতে হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। তবে জাতীয় স্তরেও বিজেপি-বধ করার জন্য এই মুহূর্তে তিনিই যে বিরোধী শিবিরের সেরা বাজি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই বললেই চলে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App