×

মুক্তচিন্তা

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরাট জয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২১, ১২:১০ এএম

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে। রাজ্য থেকে বামপন্থি এবং কংগ্রেস নেই হয়ে গেছে। এই প্রথম বিধানসভায় কংগ্রেস এবং বামপন্থিদের একজনও প্রতিনিধি নেই। আবার ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন সফল না হলেও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবার খুব ভালো ফলো করেছে। আগের নির্বাচনের তিনটি থেকে এবার তারা পেয়েছে ৭৭ আসনÑ অবশ্যই এটা ছোট অর্জন নয়। তবে তর্জন-গর্জন যত ছিল, বাস্তবে ফল তেমন হয়নি। বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার যে চ্যালেঞ্জ বিজেপি ছুড়েছিল, তাতে জয়ী হয়েছেন মমতাই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অসংখ্যবার দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গে ছুটে এসে অগণিত জনসভায় ভাষণ দিয়ে বিজেপির ভোট যতটা বাড়িয়েছেন, তার চেয়ে বেশি ভোট বাড়িয়েছেন মমতা তথা তৃণমূলের। ১০ মার্চ নিজের নির্বাচনী এলাকা নন্দীগ্রামে প্রচারণা চালাতে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা কোনো হঠাৎ দুর্ঘটনা না প্রতিপক্ষের পরিকল্পিত ‘হামলা’ ছিল সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এখন এটা বোঝা যাচ্ছে যে ঘটনাটি শাপে বর হয়েছে। হুইলচেয়ারে বসে ৫২ দিন নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে তৃণমূলের জন্য ৫০ বছরে সর্বোচ্চ ভোট সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন মমতা। ১৯৭২ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ৪৯ শতাংশ ভোট। এবার তৃণমূল পেয়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোট। এত বিপুল ভোট পেয়ে আর কোনো দল বা জোট পশ্চিমবঙ্গে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারেনি। সিপিএমের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করলেও এত ভোট পাওয়া সম্ভব হয়নি। এবার বামেরা পেয়েছে ৫.৬৭ শতাংশ এবং কংগ্রেসের ভোট ২.৯৩ শতাংশ, কিন্তু কোনো আসন তারা পায়নি বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস এবার নির্বাচনী জোট করেছিল আব্বাস সিদ্দিকীর সাম্প্রদায়িক সংগঠন ইন্ডিয়ান সেক্যুলার মুভমেন্ট বা আইএসএফের সঙ্গে। এই দলটি একটি আসন পেয়েছে। গত ২ মে ভারতের কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছেন। আসামে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গড়ছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। কেরালায় আবার সরকারে যাচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামপন্থিরা। তামিলনাড়ুতে এক দশক পর ক্ষমতায় ফিরছে ডিএমকে-কংগ্রেস জোট। পদুচেরিতে জয় পেয়েছে বিজেপি জোট। পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফল প্রকাশ হলেও বাংলাদেশের বেশি আগ্রহ, কৌতূহল এবং আলোচনা পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে। কেরালায় এত দুর্যোগকালেও বামপন্থিরা কীভাবে জনসমর্থন ধরে রাখতে সক্ষম হলো সেটা কম কৌতূহলোদ্দীপক নয়। তবে আমরা তা নিয়ে তেমন মাতামাতি করছি না। আমাদের দেশে অনেকের মধ্যেই ব্যাপক স্বস্তি দেখা যাচ্ছে বিজেপি পরাজিত হওয়ায়। বাংলাদেশে যারা ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সমর্থক, ধারক-বাহক-পৃষ্ঠপোষক তারাও বিস্ময়করভাবে ভারতে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সমর্থক। এ দেশে চাই ইসলামি শাসন কিন্তু ভারতে হিন্দুত্ববাদী শাসন কখনো নয়। প্রচার-প্রচারণা দেখে আশঙ্কা করা হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গে বুঝি রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্তকারী ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি ক্ষমতায় এসে যাবে। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো জয় পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। এবার পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় বসার জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছিল কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার প্রধান মন্ত্রণাদাতা, ভারতের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলে অমিত শাহ তাদের অন্য সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। একটাই ছিল তাদের লক্ষ্যÑ যে কোনো উপায়ে হারাতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বলা যায়, একজন নারী হয়ে মমতা একা লড়েছেন ভারতীয় রাজনীতির চাণক্যবুদ্ধিধর বলে পরিচিত প্রবল প্রতাপশালী সব পুরুষ নেতাদের বিরুদ্ধে। লির্বাচনের ফল নিজেদের অনুকূলে রাখার জন্য সব আয়োজনই করেছিল বিজেপি এবং দিল্লির কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী। নজিরবিহীনভাবে লম্বা সময় ধরে মোট ৮ দফায় ভোট হয়েছে। ২ মে ফল ঘোষণার পর বিষ গেলার মতো করে মমতাকেই বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানাতে হয়েছে মোদি-শাহ জুটিকে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসভার এবারের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস যতটা আশা করা হয়েছিল, তার চেয়েও ভালো ফল করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ব্যক্তিগতভাবে নন্দীগ্রামে অল্প ভোটে পরাজিত হলেও ২৯২ আসনের মধ্যে (মোট ২৯৪ আসনের মধ্যে ২ আসনে প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ভোট স্থগিত হয়েছে) ২১৩ আসন পেয়ে রেকর্ড গড়েছে তৃণমূল। নির্বাচনের আগে যেভাবে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার হিড়িক পড়েছিল, তাতে কেউ কেউ এমন আশঙ্কাও করছিলেন যে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এবার তৃণমূল নির্মূল হয়ে যাবে। কিন্তু ভোটের ফল বলছে, তৃণমূল আছে মানুষের মর্মমূলে। মমতাকে মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে তাকে আরো বেশি জনগণের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বহর, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব, ভিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, প্রশাসন যন্ত্র, সিবিআই, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সর্বশক্তি নিয়ে নেমেও মমতাকে হারাতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনের কারণ খুঁজতে বসে গেছেন রাজনীতি বিশ্লেষক ও পণ্ডিতরা। অনেক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হবে, বিজেপির অনেক ত্রুটি এখন ধরা হবে, নানা কারণ বের করে চলবে আলাপ-আলোচনা। কিন্তু তাতে মমতার তৃতীয়বারের মতো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ঠেকানো যাবে না। মমতাকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে গিয়ে এখন উল্টো মোদি-শাহের কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হবে। কারণ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদিবিরোধী রাজনীতির প্রধান এবং উজ্জ্বল মুখ হয়ে উঠবেন মমতাÑ এমন কথা এখনই উচ্চারিত হচ্ছে। প্রশান্ত কিশোর নামের এক রাজনৈতিক জ্যোতিষী অবশ্য এবার শুরু থেকেই পশ্চিমবঙ্গে মমতার জয়ের বার্তা দিয়ে আসছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসবে না এবং তাদের আসন সংখ্যা তিন অংকে পৌঁছাবে না। তার কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলেছে। তিনি মমতার জয়ের পেছনে বড় কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন। প্রশান্ত কুমার কী কৌশল অবলম্বনের পরামর্শ মমতাকে দিয়েছিলেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে মমতার দলের মধ্যেও প্রশান্ত কুমারকে নিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ ছিল। মমতা প্রশান্তকে আস্থায় নিয়েছেন এবং সুফল পেয়েছেন। দলের পরামর্শক হিসেবে কাজ করায় এখন প্রশান্তকে এই জয়ের ‘নেপথ্য নায়ক’ হিসেবেও উল্লেখ করা হচ্ছে। ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে মমতার পক্ষে কয়েকটি বিশেষ ফ্যাক্টর কাজ করেছে। প্রথম হলো নারী ভোট। মমতা নারী হওয়ায় নানা কুৎসিত প্রচারণা চালানো হয়ে তার বিরুদ্ধে। এমনকি নরেন্দ্র মোদিও তাকে ‘দিদি, ও দিদি’ বলে প্রকাশ্য জনসভায় এমন অভব্য অঙ্গ ভঙ্গি করেছেন, যা ভালোভাবে নেননি পশ্চিমবঙ্গের নারীরা। নারীদের জন্য মমতার সরকার কিছু বাড়তি সুবিধাও দিয়েছে নানা সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে। তাই মমতাকে ক্ষমতায় রাখতে নারীরা আগের তুলনায় এবার বেশি সংখ্যায় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তৃণমূলের নির্বাচনী প্রতীকে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। দ্বিতীয় হলো মধ্যবিত্ত সমাজ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চলন-বলন সবই মধ্যবিত্তদের জীবনাচারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ভদ্রলোকরা তাকে অপছন্দ করলেও মধ্যবিত্তরা মমতাকে নিজেদের লোক বলেই মনে করেন। মমতার ১০ বছরের শাসনকালে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বঞ্চিত বোধ করেননি। মধ্যবিত্তদের মধ্যে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িও কম। বিজেপি হিন্দুত্ব নিয়ে অহং প্রচারের যে নগ্ন চেষ্টা চালিয়েছে তা মধ্যবিত্তদের মনে গভীর রেখাপাত করেছে বলে মনে হয় না। বরং বিজেপি ক্ষমতায় এলে উচ্চবিত্ত এবং হিন্দুদের মধ্যে যারা জাতপাত নিয়ে বিভাজনে আগ্রহী তাদের দাপট বাড়বে এমন শঙ্কা থেকেও মধ্যবিত্তরা মমতার পক্ষে দাঁড়ানোকেই নিরাপদ মনে করেছে। তৃতীয় হলো মুসলমান জনগোষ্ঠী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুসলিমবান্ধব বলে প্রচার করে বিজেপি প্রকারান্তরে তার উপকারই করেছেন। মুসলমানদের মধ্যে এই আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল যে, বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে তাদের জীবন-জীবিকা অনিরাপদ হয়ে উঠবে। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোট কম নয়। প্রায় ২৭ শতাংশ বলে জানা যায়। আগে এই ভোট বাম, কংগ্রেস এবং তৃণমূলে বিভক্ত হলেও এবার তা প্রায় একচেটিয়াভাবে মমতার পক্ষে গেছে বলে মনে করার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। বাম এবং কংগ্রেসের ভুল রাজনৈতিক কৌশল এবার তাদের একেবারে তলানিতে নিয়ে গেছে। গরিব এবং মুসলিমদের কী করে ধরে রাখা যায়, দুর্নীতিবাজদের সরিয়ে নতুনদের সমর্থন আদায়ের চিন্তাভাবনা না করে এবার বামপন্থিরা এবং কংগ্রেস মমতা ঠেকানোর ভুল কৌশল নিয়েছিল বলে তাদের দিক থেকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করে বামপন্থিদের এই শোচনীয় অবস্থা আলাদা গবেষণার বিষয় হওয়া দরকার। কংগ্রেসের রাজনীতিও যে আর সাধারণ মানুষের মেজাজ-মর্জি বুঝে পরিচালিত হচ্ছে না, সেটা বোঝা যায় নির্বাচনে দলটির করুণ অবস্থা দেখেই। মোদি-শাহ রণদামামা বাজিয়ে ভোটের মাঠে নামলে মমতা বলেছিলেন, খেলা হবে। ভোট রাজনীতিতে তিনি যে দক্ষ খেলোয়াড় সেটা তিনি প্রায় একা খেলেই জয় ছিনিয়ে এনে প্রমাণ করে দিয়েছেন। তার সঙ্গে যে বিপুল জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাও স্পষ্ট হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে বিজেপির পরাজয় এবং মমতার তৃণমূলের জয়ের ফলে সেখানে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির বিজয় হয়েছে বলে উল্লসিত হওয়ারও কিছু আছে বলে মনে হয় না। কেউ কেউ বরং মনে করছেন, সেখানে একটি উগ্রবাদী ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক ধারা পরাজিত হলেও প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ধারার বিজয় হয়নি। সেখানে যেটা হয়েছে তাকে অনেকে মন্দের ভালো মনে করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর নরেন্দ্র মোদি এক ধারার রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব না করলেও আদর্শগত জায়গায় মমতার দৃঢ়তাও সন্দেহ মুক্ত নয়। মমতার মধ্যেও নানা স্ববিরোধিতা আছে। ক্ষমতার রাজনীতির যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তাতে মমতা সততা ও উদারতার ধারক-বাহক, তেমনটা বলা যাবে না। গণতন্ত্র চর্চার পরিসর তিনিও কম সীমিত করে আনেননি। বিশৃঙ্খলতা ও হিংস্রতা মুক্ত রাজনীতির পথ তিনি ১০ বছরে কতটা মসৃণ করেছেন, সে প্রশ্ন আছে। মারের বদলে মারÑ এই নীতি অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গে যে অগ্নিগর্ভ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে তার দায় থেকে মমতাকে মুক্তি দেয়া যাবে না। অর্থনীতি ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি সাধনের প্রতিযোগিতা না করে হিংস্র, কদর্য ও সংঘাতের পরিবেশ তৈরিতে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় থাকা সব রাজনৈতিক দল এবং বর্তমান কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে একসঙ্গেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়। নির্বাচনী প্রচারকালে যে হানাহানি, রক্তপাত, গুলি-বোমার মহড়া, খুন-জখমের যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোও একতরফা ছিল না। ভোট ভিক্ষুক, ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিকরা এখন নীতি-পঙ্গুতার শিকার। সেটা কোনো এক দলে আছে তা-ও নয়। মমতার বিজয়ে তাই এটা মনে করার কারণ নেই যে, এখন থেকে পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে শীতল হাওয়া বইবে। বরং দেখে নেয়ার জেদ ও প্রবণতা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, নজর রাখতে হবে সে দিকে। বিজেপি-আরএসএস রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়ে ৩ থেকে ৭৭টি আসনে পৌঁছে যে বিপদ সংকেত দিয়েছে, তা খাটো করে যেমন দেখা যাবে না, তেমনি এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নিয়েও ভাবতে হবে। এটা ঠিক যে, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু উভয়ের রক্ষাকবচ। নানা ধর্মমতের, নানা জাতের ও নানা চিন্তার মানুষের একটি দেশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারে কেবল ধর্মনিরপেক্ষ নীতি। ধর্মভিত্তিক ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়। ধর্মকে ব্যক্তি জীবনের চর্চার মধ্যে রাখাই মঙ্গল। রাজনীতির কূটজালে ধর্মকে জড়ালে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। ধর্মমুক্ত রাজনীতি সব ধর্মের, সব সম্প্রদায়ের এবং সব দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর ও পৃথিবীর জন্যও শুভ। সমাজবিজ্ঞানী রণবীর সমাদ্দারের বলেছেন, বাম রাজনীতিতে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। বামফ্রন্টের ভালো ছেলেমেয়ে ও কর্মীরা তৃণমূলকে ভোট দিলেন, আর অপেক্ষাকৃত ক্ষমতালোভী, দুর্নীতিগ্রস্ত অংশটা চলে গেল বিজেপিতে। এটা কয়েক বছর ধরে হচ্ছে। এই নির্বাচনেও হয়েছে। মন্দের ভালো বলে বেছে নিলেও আদর্শ রাজনীতির চালকের আসনে বসার মতো যোগ্য মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিনা, তা নিয়ে অনেকের মনেই আছে বিরাট প্রশ্ন। বড় হওয়ার প্রতিযোগিতা করার মতো বড় মানুষের অভাব অনেক দেশের রাজনীতিতেই প্রকট। ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়। বিভুরঞ্জন সরকার : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App