×

মুক্তচিন্তা

অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২১, ১২:০৯ এএম

আমরা এ সময়ে যে অবস্থায় আছি তা একটি দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। কেউ আমরা ভাবতেই পারিনি যে, করোনা নামক এই মহামারি আমাদের জীবনে দেবে অন্ধকারের হাতছানি। যার কারণে আমাদের জীবনে নেমে আসবে স্থবিরতা। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ আতঙ্কের নাম হলো করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে গেলে আমাদের শুধু চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে দেখতে হবে। তাহলেই দেখতে পাবো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন অসংখ্য উৎস, যা করোনার ভয়াবহতা প্রমাণ করতে যথেষ্ট। যতগুলো উৎস রয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম হলো ‘শিক্ষাব্যবস্থা’, যা করোনার কারণে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। শিক্ষা মানুষের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি জাতির উন্নতির মাপকাঠি সে জাতির শিক্ষিত নাগরিক। শিক্ষিত হয়ে জাতি পৌঁছে যেতে পারে উন্নতির স্বর্ণ শিখরে। নতুবা সে জাতির উন্নতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। গত বছর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মাঝখানে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমতে শুরু করল। সেই সময় একটু আশার আলো দেখতে পেয়েছিল শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়তো আবারো খুলে যাবে সেই আশায় বুক বেঁধেছিল তারা। কিন্তু বিধিবাম। কোভিডের সংক্রমণ নতুন করে আবারো বাড়ছে। প্রতিদিন আক্রান্ত এবং মারা যাওয়ার সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। ফলে আবারো চলছে লকডাউন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে কী খুলবে না, পড়াশোনা করতে পারবে কী পারবে না, পারলেও সেটা কবে নাগাদ- এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই ডুবে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে ইন্টারনেটের কল্যাণে অনলাইনে ক্লাস নেয়া সম্ভব হচ্ছে হয়তো। তবে সব শিক্ষার্থী যে সেই সুযোগটা পাচ্ছে এমনটা কিন্তু নয়। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যাদের পরিবার তাদের এই সুবিধাটুকু দেয়ার সামর্থ্য রাখে না। তাদের কাছে কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ তো দূরে থাক, ভালো মোবাইলও নেই। এমনকি ইন্টারনেট ব্যবস্থার সুবিধাও পাচ্ছে না তারা। এখানে আরো একটি বাস্তবিক সত্য আছে। সশরীরে উপস্থিত হয়ে ক্লাসরুমে ক্লাস করা আর ভার্চুয়াল ক্লাস করা- এই দুটোর মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। সে অর্থে ঠিকমতো পড়াশোনা হচ্ছে না সিংহভাগ শিক্ষার্থীর। আর দীর্ঘ সময় এভাবে পড়াশোনা থেকে দূরে থাকার কারণে তাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে উদাসীনতা। তাদের শিক্ষাজীবনে ঘটছে ছন্দপতন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেশনজট বাড়ছে বৈ আর কমছে না। ধীরে ধীরে তাদের মনে ‘অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ’ নামক চিন্তার উদয় হচ্ছে। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা সচ্ছল পরিবার থেকে উঠে আসেনি। মেধার জোরে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে। দ্রুত পড়াশোনা শেষ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং ভালো চাকরি পেয়ে সংসারের হাল ধরবে- এই স্বপ্ন দেখে তারা পড়তে এসেছিল। তাদের পরিবারও তাদের মুখপানে চেয়ে আছে। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে অনেকেই নিজের পরিবারে কিছু টাকা পাঠাত। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় সেটাও সম্ভব হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রে। ফলাফল এখন এটাই দাঁড়িয়েছে যে, ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভুগে সেই শিক্ষার্থীরা অনেকেই চলে যাচ্ছে বিপথে। বিশেষ করে যুবকদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা বেশি। হতাশার বিষাক্ত ছোবলে নিজেদের মানসিক শান্তি হারিয়ে ফেলছে তারা আর সেই মানসিক শান্তি খুঁজতে অবলম্বন করছে ভুল পথ। জড়িয়ে যাচ্ছে মাদকাসক্তিতে। নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে নিকোটিনের ধোঁয়ায়। অনেকের শরীরে বাসা বাঁধছে মরণব্যাধি। মোট কথায়, যুবকটির সঙ্গে তার পরিবারটাও ধ্বংসের পথের পথিক। এভাবে কতদিন চলবে সেটা আমরা কেউ জানি না। তবে এভাবে যদি চলতেই থাকে তাহলে অধঃপতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়েও সবকিছু ক্ষান্ত হবে না। তাই আমাদের সবার মনে শুধু এখন একটাই প্রার্থনা সৃষ্টিকর্তার কাছে। পৃথিবী আবারো সুস্থ হয়ে উঠুক। কারণ এই অসুস্থ পৃথিবীতে থেকে আমরা অজ্ঞানতার অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে, শিক্ষার্থীদের পদচারণায় শিক্ষাঙ্গন মুখরিত হতে পৃথিবী সুস্থ হওয়া প্রয়োজন। খুব বেশিই প্রয়োজন। চন্দ্রিকা চক্রবর্তী শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App