×

জাতীয়

ঢাকায় তীব্র পানি সংকট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:২৮ এএম

ঢাকায় তীব্র পানি সংকট

তীব্র পানি সংকটের মধ্যে গাড়ি দিয়ে নগরবাসীর চাহিদা মেটানোর চেষ্টা ডিএসসিসির। গতকাল সায়েদাবাদ জনপদ মোড় থেকে তোলা ছবি-ভোরের কাগজ

১০ দিনের বেশি সময় ধরে পানি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে পশ্চিম ধানমন্ডির মধুবাজার এলাকায়। পুরো এলাকায় চলছে পানির জন্য হাহাকার। এখন ব্যবহারের জন্য ওয়াসার গাড়ি আর খাবারের জন্য বাইরে থেকে কেনা জার অথবা বোতলজাত পানিই তাদের একমাত্র ভরসা। এতে অর্থনৈতিক খরচও বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। আর ওয়াসার গাড়ির পানি পাওয়া খুবই দুষ্কর। রমজান আর লকডাউন মিলে এ এলাকার বাসিন্দারা এখন পানি সংকটে সীমাহীন ভোগান্তিতে রয়েছেন। তার ওপর বেড়েছে গ্রীষ্মের তাপদাহ। শুধু পশ্চিম ধানমন্ডি নয়, এ সংকট মধ্যবাসাবো, মোহাম্মদপুর, লালবাগসহ ঢাকার কয়েকটি এলাকায়। তবে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, কেন্দ্রীয়ভাবে পশ্চিম ধানমন্ডির বাংলা রোডে পানির সংকটের তথ্য এসেছে। তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

হাতিরঝিলের আমবাগান ও মধুবাগ এলাকায় পানির তীব্র সংকট দুই সপ্তাহ ধরে। স্থানীয় বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন জানান, আমবাগান আবাসিক এলাকায় দুই সপ্তাহ ধরে পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মাঝের দুইদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও এখন আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। মাঝেমাঝে পানি আসে। গত শনিবার সারাদিনই পানি ছিল না। রাত ১১টায় কিছু পানি পাওয়া গেছে। তা দিয়ে হাত-মুখ ধোয়ার কাজে এলেও খাবার অনুপযোগী। এছাড়া পানিতে ময়লা আর দুর্গন্ধ তো আছেই। আমরা দ্রুত এ সমস্যা সমাধান চাই।

মালিবাগ ডাক্তার গলির বাসিন্দা সোহেল জানান, দুর্গন্ধের কারণে তার এলাকার পানি খাওয়ার উপযোগী নয়। উপায় না দেখে অনেকেই এই পানি পান করছেন। ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গত কয়েক দিনে তার পরিচিত বেশ কয়েকজনের পেটের সমস্যা হয়েছে। এই সমস্যা ৭০ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়কে ও আশপাশের এলাকায়। পানিতে ময়লা আর দুর্গন্ধ। পান করার অনুপযোগী। এসব এলাকার বাসিন্দারা দ্রুত পানি সংকট সমাধানের পাশাপাশি ময়লা আর দুর্গন্ধ দূর করার দাবি জানান।

ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (যান্ত্রিক) এ কে এম শহীদউদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, পানি সংকট নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে আমার কাছে তেমন অভিযোগ নেই। শুধু পশ্চিম ধানমন্ডির মধুবাজার বাংলা সড়কে একটি টিউবওয়েল নষ্ট হয়েছে। আমরা সেটি মেরামত করছি। পুরোপুরি ঠিক হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। তবে বাসাবোসহ অন্যান্য এলাকার পানি সংকটের কোনো তথ্য এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই। আঞ্চলিক কার্যালয়ে থাকতে পারে। তারা স্থানীয়ভাবে সেই সমস্যা সমাধান করে থাকেন। এই কর্মকর্তা স্বীকারও করেন চার থেকে পাঁচ দিন আগে বাসাবো এলাকায় পানির কিছু সংকট ছিল, তা সমাধান করা হয়েছে।

মধ্যবাসাবো এলাকার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে এ এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু এলাকায় সমস্যা সমাধান হয়েছে। এখনো বেশির ভাগ বাড়িতে ঠিকমতো পানি আসছে না। ওয়াসার গাড়িতে করে বাড়িওয়ালাদের পানি কিনে নিয়ে আসতে হচ্ছে। লকডাউন, রোজা আর গরমের তাপে মানুষ অতিষ্ঠ। ওয়াসায় অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের লোকজন শিগগিরই সমস্যা সমাধানের আশ্বস দিয়েছেন।

মিরপুর ১০ সেনপাড়া আদর্শ রোডের বাসিন্দা আলীম জানান, তাদের এলাকায় প্রায়ই পানির সংকট দেখা দেয়। ১৫ দিন আগে টানা ১ সপ্তাহ পানির সীমাহীন ভোগান্তিতে ছিলেন তারা। এখন কিছুটা কমলেও, পুরোপুরি তা কাটেনি। সারাদিনে অর্ধেক সময় পানি পাওয়া যায়। তা দিয়ে কোনোরকম গোসল ও গৃহস্থালির কাজ করা গেলেও খাবারের জন্য নির্ভর করতে হয় বাইরে থেকে কেনা জার অথবা বোতলের পানির ওপর। কারণ এখন যা পানি আসে, তাতে অনেক সময় ময়লা দেখা যায়।

আতিক আনান নামের এক ব্যক্তি ঢাকা ওয়াসার ফেসবুক পেজে কমেন্ট বক্সে পানি নিয়ে তার ভোগান্তির কথা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, ওয়াসার লালমাটিয়ায় জোন-৩ এর অফিসে স্বশরীরে পানির ট্রাকের জন্য সিরিয়াল দিয়ে এসেছি ৭ দিন আগে। বিভিন্ন সময় ফোনে তাগাদা দিয়েছি। বলেছে, এই তো দিচ্ছি, দেব, আসতেছি। অথচ একদিন আগে সিরিয়াল দিয়ে ঠিক উল্টো দিকের বাড়িতে রাত দেড়টায় চলে এসেছে ওয়াসার পানির ট্রাক। এক ফোঁটা পানির জন্য খোদ ঢাকা শহরের একটি এলাকায় এমন অমানবিক ও মর্মান্তিক ভোগান্তির দৃশ্য চিন্তাই করা যায় না। এছাড়া মোহাম্মদপুর জাকির হোসেন রোড এলাকায় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুয়েকবার পানি আসে। এলাকাবাসী তাদের সমস্যার কথা ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে জানালেও তেমন সুফল পাননি। স্থানীয় মডস জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেও সমাধান মিলেনি বলে তাদের অভিযোগ। একই সমস্যা কাঁঠাল বাগানের লাকি হোটেলের গলির কয়েকটি বাসাতেও।

গরমের এই সময়ে রাজধানীর পুরান ঢাকা, রামপুরা, বনশ্রী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ীসহ অনেক এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও দিনে দুয়েকবার পানির দেখা মিললেও তা যৎসামান্য। তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। যদিও ওয়াসার দাবি, পানি নিয়ে বড় ধরনের কোনো সংকট নেই। কিছু কিছু এলাকায় কারিগরি সমস্যার কারণে সাময়িক পানির সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তবে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App