×

রাজনীতি

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইল বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২১, ০৩:২৮ পিএম

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইল বিএনপি

বিএনপি

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার পুরোপুরি ব‍্যর্থ এবং এই দায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত‍্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে এক ভার্চ‍্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন আমদানিতে ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়ায় ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক আইনের আশ্রয় নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ভ্যাকসিন আমদানীতে সরকারের এবং আমদানী কারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যর্থতা ও দুর্নীতিতে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই বিএনপি এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে বলে আসছে। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া, একটি মাত্র উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত যে, আত্মঘাতী হতে পারে সে বিষয়ে বিএনপি বরাবরই সতর্ক করে এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার শুধু মাত্র নিজেদের আর্থিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সরকার নিজে আমদানী না করে তাদের পছন্দমত চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়ে এবং শুধুমাত্র ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট এর কাছ থেকে সংগ্রহ করায় এবং দেড়কোটি ভ্যাকসিনের অগ্রীম মূল্য পরিশোধ করেও এখন পর্যন্ত দুই কিস্তিতে মাত্র ৭০ লক্ষ ডোজ পেয়েছে।

ফখরুল বলেন, ভারত সরকারের রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে, সেরাম ইন্সিটিউট বাকি ভ্যাকসিন পাঠাতে অপারগতা জানিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে এখন যে পরিমান মজুদ আছে সেটাতে আগামী ১২ দিন চাহিদা মোতাবেক চলবে কিন্তু তারপর আর সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ প্রায় ৫৬ লক্ষ এবং দ্বিতীয় ডোজ প্রায় ১৬ লক্ষ মোট ৭২ লক্ষ্য ডোজ টীকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে যেখানে হার্ড ইনিউনিটি আনতে কমপক্ষে ১২ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন। সরকার এখন অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে ভ্যাকসিনের জন্য অথচ ১ বৎসর আগেই বিএনপি এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করতে সরকার শুধুমাত্র নিজেদের দূর্নীতির সুযোগ খুঁজেছে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সমগ্র জাতিকে চরম স্বাস্থ্য বিপর্যায়ের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেদের অযোগ্যতা, দায়িত্বহীনতা ও দূর্নীতির প্রমান দিয়েছে। জনগণকে এই চরম অনিশ্চয়াতা ও জীবনের ঝুকি তৈরি করার অপরাধে সরকারকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।

মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে মূল্য পরিশোধিত ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে। ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। অবিলম্বে জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দাবি জানায়। ভারতের সংক্রমণ এর হার মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পশ্চিম বাংলায় নতুন মারাত্মক ভেরিয়েন্ট সংক্রমণ রোধের জন্য ইতোমধ্যে ভারতের আসাম ও উড়িস্যা পশ্চিম বাংলার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করেছে। সরকার আজ থেকে ১৪দিন স্থল পথের সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এবং সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউনের বিপর্যস্ত দরিদ্রপীড়িত মানুষের পাশে ২০২০ সালে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ প্রায় ২ কোটি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে। স্বাধীনতার দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে সরকার প্রায় ২০ জন মানুষকে গুলি করে হত্যার পর সরকার চিরাচরিত কৌশল নিয়ে বিরোধী দল ও বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তার করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। নেতা-কর্মীরা কেউ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে পারছেনা। এরপরেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিএনপিসহ সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের দুঃস্ত জনগণের সহযোগীতার জন্য পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায়।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত চালের আপদকালীন মজুদ তলানিতে নেমে আসায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকার কতৃক ধান ও চাল সংগ্রহের জন্য মূল্য নির্ধারণ না করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

ফখরুল বলেন, সরকারের মদদপুষ্ট মধ্যস্বত্ব ভোগীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। সরকারের দূর্নীতি ও অযোগ্যতার কারনে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান

এছাড়াও স্বাধীনতা দিবসে নরেন্দ্র মোদির ভারত সফরকে কেন্দ্র করে সরকার সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে থাকায় আবার গণহারে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু করায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য মন্ত্রী ক্রমাগত মিথ্যাচার এবং ঘটনাগুলোর সঙ্গে বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বসহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করে কল্প কাহিনী প্রচার সরকারের কতৃত্ববাদী একনায়কতান্ত্রিক একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার চক্রান্তের একটি অংশ বলে প্রতীয়মান হয়। বিএনপিকে ধ্বংস করবার এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত হেফাজত নেতৃবৃন্দেকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে তাদের থেকে তথা কথিত মিথ্যা স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এই জঘণ্য মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে বলে সভা মনে করে। সভা অবিলম্বে এইসব মিথ্যাচার বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান যুক্ত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App