×

পুরনো খবর

ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনায় মে মাস নিয়ে দুর্ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৪৪ এএম

আগামী মাসে কিছু ভ্যাকসিন (টিকা) পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সহসাই এই সংকট কাটছে না। মজুত কমে আসায় এবং সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মজুত টিকায় দ্বিতীয় ডোজ নিতে যাতে কোনো বাধা না পড়ে সেজন্য আজ সোমবার থেকে করোনা ভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৬ জন প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৫৪ জন। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র বলেছে, কোনো রকমভাবে মে মাসটি কাটিয়ে দিতে চায় সরকার। জুন থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা দেশে মজুত থাকবে। তখন গণহারে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

কোনো রকমভাবে মে মাস কাটিয়ে দিতে চাওয়ার ব্যাখা জানতে চাইলে ওই সূত্রটি গতকাল ভোরের কাগজকে জানায়, দেশে এ পর্যন্ত টিকার মোট মজুত ছিল ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ। এর মধ্যে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের নির্ধারিত সময়ে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। কিন্তু এই সময়ে টিকার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি করোনারও সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে টিকা নেয়ার হারও বাড়তে থাকে। অর্থাৎ সমানতালে সব বাড়ছে। কিন্তু টিকার সরবরাহ বাড়ছে না। এ অবস্থায় যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তারা যদি দ্বিতীয় ডোজ না নিতে পারেন তাহলে আরেক সংকট দেখা দেবে। কাজেই কোনো ঝুঁকি না নিয়ে সরকার আপাতত প্রথম ডোজ বন্ধ করল এবং এর ফলে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ পেতে সমস্যা হবে না।

ওই সূত্র আরো জানায়, চীনের দেয়া উপহারের ৫ লাখ টিকা বাংলাদেশ নেবে। এর ফলে চলমান ধাক্কা সামাল দেবে। জুনের প্রথম সপ্তাহেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে প্রচুর টিকা বাংলাদেশে আসবে। ভারত থেকেও টিকা আসবে। সবমিলিয়ে মে মাসটি এভাবে কাটিয়ে জুনে টিকা গণহারে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এবং সরকার মনে করছে ঠিক এই পরিকল্পনা ধরে এগিয়ে গেলে কোনো সমস্যা হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গতকাল রবিবার জানান, মে মাসে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে পাওয়া যাবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া যাবে ফাইজার-বায়োএনটেকের এক লাখ ডোজ টিকা। সব মিলিয়ে ওই সময়ে ২১ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। এতে চাপ আরো কমে আসবে।

এদিকে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিয়েছে, ব্যাপক অভ্যন্তরীণ চাহিদা তৈরি হওয়ার কারণে তাদের পক্ষে আর বাইরের কোনো দেশকে আপাতত সিরামের তৈরি টিকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক অধ্যাপক আলম বলছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটাই আমরা আশা করছি, আমাদের ঘাটতির যেটুক আশঙ্কা, ২০ লাখ ডোজ- বেক্সিমকোর উচ্চতম মহল আমাদের জানিয়েছে, তারা এই টিকা এর মধ্যেই এনে দেবে। কোভ্যাক্সের টিকাটা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আমাদের দেবে বলে বলেছে। ওখানে ফাইজারের এক লাখ ডোজ দেয়ার কথা। অবশ্য এর একদিন আগে শনিবার বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন সিরাম থেকে প্রাপ্য টিকার চালান আনার জন্য ভারত সরকারের ওপর চাপ দিতে।

তিনি বলেন, সিরামকে দেড় কোটি ডোজ টিকার জন্য অগ্রিম অর্থ দিয়েছে বাংলাদেশ, তাই সেটি ভারত আটকাতে পারে না। সরকারের তাদের স্পষ্ট বলা উচিত যে আমরা অগ্রিম টাকা দিয়েছি। এটা আমাদের অধিকার। ফোনে কথা বলা নয়। শক্ত স্টেপ নিতে হবে।

ভারতে টিকার কাঁচামাল পাঠাচ্ছে আমেরিকা, বাংলাদেশ পাচ্ছে টিকা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে কাঁচামাল না পেয়ে করোনারোধক টিকা উৎপাদন করতে পারছিল না ভারত এবার সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই সহযোগিতা পেতে যাচ্ছে দেশটি। এই কাঁচামালের জন্য টিকার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়ার ফলে ভারতে টিকা উৎপাদনে যে সংকট দেখা দিয়েছিল সেটি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। আর এর মাধ্যমে করোনার টিকা উৎপাদনে বাড়বাড়ন্ত থাকায় বাংলাদেশও সেই টিকা পাওয়া শুরু করবে। গতকাল ভারতের দৈনিক হিন্দুস্থান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, অবশেষে ঘুম ভাঙল জো বাইডেন প্রশাসনের। দীর্ঘদিন ধরে ভারতে করোনা ভাইরাসের টিকা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচমাল সরবরাহের আর্জি জানানোর পর করোন ভাইরাস পরিস্থিতিতে ‘সহযোগী’ ভারতকে বাড়তি সাহায্য প্রদানের আশ্বাস দিল আমেরিকা।

রবিবার সকালে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) একটি টুইটবার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিøনকেন বলেন, ভয়ানক করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ভারতের মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। ভারতীয় সরকারে আমাদের সহযোগীদের জন্য কাজ করছি। ভারতীয় এবং ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হিরোদের জন্য আমরা ক্রমাগত বাড়তি সাহায্য প্রদান করতে থাকব। সেই টুইটের কিছুক্ষণ পর হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভ্যানও ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

উপহারের ৫ লাখ টিকা পাঠাতে বাংলাদেশকে চীনের চিঠি : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন চীনা ভ্যাকসিন-সম্পর্কিত বিধিবিধান নিয়ে কাজ করছে। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (অনুমোদন) আগে অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিয়েছি। সিনোফার্মের টিকার ক্ষেত্রেও আমরা সেটাই বিবেচনা করছি। উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের তৈরি করোনার পাঁচ লাখ টিকা পাঠাতে চিঠি দিয়েছে চীন। গত ২০ এপ্রিল পাঠানো চিঠিটি এরই মধ্যে গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। টিকার মান যাচাই ও মানবদেহে প্রয়োগের অনুমোদন দিলে চীন যে কোনো সময় এই টিকা পাঠাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, চীন উপহারের টিকা পাঠাতে যে চিঠি দিয়েছে, আমরা তা পেয়েছি। এটা আমরা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পাঠিয়েছি। তারা সবকিছু দেখে এই টিকা অনুমোদন দেবে। এরপর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এর আগে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত সব চীনা নাগরিককে টিকা দিতে সিনোফার্মকে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সিনোফার্ম আমাদের টিকা সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়াও তারা উপহার হিসেবে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা পাঠাবে। চীনের টিকা উদ্ভাবন ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক তাদের টিকার পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষায় অর্থায়ন-জটিলতায় সেই উদ্যোগ এগোয়নি। সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকা রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পর করোনা ভাইরাসের চলমান টিকাদান কর্মসূচিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। এমন সময়ই অন্য দেশ থেকে টিকা কেনার অগ্রগতির খবর এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিলেও এখান পর্যন্ত সিনোফার্ম জাতিসংঘের এই সংস্থাটি থেকে তাদের টিকার অনুমোদন পায়নি। তবে চীনের দুইটি টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

চীনের টিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো অনুমোদন দেয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. খুরশীদ বলেন, সরকার এখন চীনা টিকা সম্পর্কিত বিধিবিধান নিয়ে কাজ করছে।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (অনুমোদন) আগে অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিয়েছি। সিনোফার্মের টিকার ক্ষেত্রেও আমরা সেটাই বিবেচনা করছি। সরকারের একটি চিঠি থেকে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে চীন সরকারকে টিকার জন্য অনুরোধ জানাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীন সরকার টিকা নিতে চিঠি দেয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App