×

জাতীয়

ভারতীয় ধরনে ঝুঁকিতে দেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২১, ০৯:২৯ এএম

করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরন (বি.১.৬১৭) বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে সবচেয়ে বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসাসহ সামাজিক যোগাযোগ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। প্রতিদিনই দুদেশের নাগরিকদের কাছাকাছি আসতে হচ্ছে নানা প্রয়োজনে। কার্যকরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে ভাইরাসের রূপান্তরিত ধরনটি সহজেই প্রবেশ ও বিস্তার ঘটাতে পারবে দেশে। ফলে অবস্থা হবে ভারতের মতোই ভয়াবহ। বিষয়টি নিয়ে গতকাল রবিবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণ সম্পর্কে সচেতন না হলে সামনে তৃতীয় ঢেউ চলে আসবে। এ ঢেউ আরো ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে পারে। তিনি দেশের প্রতিটি মানুষকে করোনা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। বিশ^ ম্যালেরিয়া দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত অনলাইনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এদিকে ভারতীয় ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকাতে দেশটির সঙ্গে আজ সোমবার থেকে সব সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। এই সিদ্ধান্ত আগামী ১৪ দিন বলবৎ থাকবে। এই সময়ের মধ্যে কেউই দেশে প্রবেশ বা বের হতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে সামস। গতকাল বিকালে তিনি এ তথ্য জানান। তবে সীমান্ত বাণিজ্য চালু থাকবে জানিয়ে মাশফি বলেন, এছাড়া যেসব বাংলাদেশির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তারা কোভিড টেস্ট ও কলকাতা মিশনের ছাড়পত্র নিয়ে দেশে প্রবেশ করতে পারবেন। তাদের জন্য ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করার কথা জানান তিনি। এসব নির্দেশনা কার্যকরের আগেই বাংলাদেশে অনেক ভারতীয় নাগরিক প্রবেশ করেছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। গতকালই শুধু বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ৫৪০ জন ভারতীয় প্রবেশ করেছেন বলে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখনো সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। যদি ভারতীয় করোনার ধরনটি দেশে প্রবেশ করেও থাকে, সঠিকভাবে স্বাস্থবিধি মানার মধ্য দিয়ে অনেকটা ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রধান, অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সরোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনায় যে কঠোর লকডাউনের কথা শুনছি, বাস্তবে কিন্তু সেভাবে কার্যকর হতে দেখছি না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, এখনো মাস্ক পরেন না অনেকে। তিনি বলেন, আশার কথা দেশে এখন পর্যন্ত ভারতে রূপান্তরিত ধরনের ভাইরাসটি শনাক্ত হতে দেখা যায়নি। কিন্তু সেটি যে প্রবেশ করেনি তা বলা যাবে না। আমরা এখনই সচেতন না হলে হয়তো ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখতে হতে পারে সামনে। কারণ ভারতীয় ধরনটি সাধারণত মূল করোনা ভাইরাস থেকে বেশি সংক্রামক। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বুলেটিনে প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন গতকাল বলেন, আমাদের অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে। আর যদি সেটা না হয় তাহলে কিন্তু আমাদের চিত্র পাশর্^বর্তী দেশের মতো হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ ডাবল বা ট্রিপল মিউটেশনের মধ্যে পড়ে গেলে অবস্থা কী পরিমাণ ভয়ংকর হবে সেটা চিন্তা করার জন্যও সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানান তিনি। অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ভারতে বর্তমানে করোনা ভাইরাসের অসম্ভব ঊর্ধ্বগতি চলছে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে মারা যাচ্ছেন। সেখানে যে দুটো ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে সেগুলো পুরো পৃথিবীর বিস্ময়। তাকে বলা হচ্ছে ডাবল বা ট্রিপল মিউটেশন ভাইরাস। আমরা আবারো সবাইকে বলতে চাই, কোনোভাবেই যেন এই ডাবল বা ট্রিপল মিউটেশন আমাদের দেশে না এসে পৌঁছায়। তিনি বলেন, ১৪ দিনের নিচে কোয়ারেন্টাইন সম্ভব নয়। যদি বৈজ্ঞানিকভাবে বিষয়টিকে দেখতে চাই, তাহলে আমাদের উচিত হবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন যেন নিশ্চিত হয়। আর এটা যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে হয় তাহলে সবচেয়ে ভালো। এখানে আরো অনেক অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, পাশের দেশ ভারতে যেখানে বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট চলে এসেছে, সেটা অত্যন্ত মারাত্মক এবং সংক্রমণ ৩০০ গুণ বেশি ছড়াতে সক্ষম। আমরা এখন করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ পার করছি। দীর্ঘস্থায়ী লকডাউন কোনো পরিপূর্ণ সমাধান নয়। একই সঙ্গে এতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই জনগণকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে মাঠপর্যায়ে যারা স্বাস্থ্যবিধি মানানোর দায়িত্বে রয়েছেন তাদের আরো কঠোর হতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App