×

বিনোদন

অস্কার সেরা অভিনেতা হপকিনস ও অভিনেত্রী ফ্রান্সিস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২১, ১০:২৮ এএম

অস্কার সেরা অভিনেতা হপকিনস ও অভিনেত্রী ফ্রান্সিস

অভিনেত্রী ফ্রান্সিস ম্যাকডোম্যান্ড, পরিচালক ক্লোয়ি জাও।

অস্কার সেরা অভিনেতা হপকিনস ও অভিনেত্রী ফ্রান্সিস

সেরা অভিনেত্রী ফ্রান্সিস ম্যাকডোম্যান্ড, অভিনেতা অ্যান্থনি হপকিন্স ।

অস্কার সেরা অভিনেতা হপকিনস ও অভিনেত্রী ফ্রান্সিস

করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। তবু সোমবার (২৬ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ছিল উৎসবমুখর। বাংলাদেশ সময় সকাল ছয়টায় শুরু হয়ে নয়টা পর্যন্ত চলল এ বছর চলচ্চিত্রের দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আসর ৯৩তম অস্কার। গোল্ডেন গ্লোব, বাফটার পথে হেঁটে অস্কারও এবার আয়োজিত হলো ছোট পরিসরে। মার্কিন মুলুকে এবারে একটি নয়, দুটি ভেন্যু। ঐতিহাসিক ডলবি থিয়েটার তো আছেই, এর সঙ্গে যুক্ত হয় লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিয়ন স্টেশন। তা ছাড়া যুক্তরাজ্যের লন্ডন আর ফ্রান্সের প্যারিসেও রাখা হয়েছিল দুটি স্টেশন। সেখান থেকেও যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না পারা মনোনীত শিল্পী আর কলাকুশলীরা যোগ দিয়েছেন। সামাজিক দূরত্ব রেখে বসেন সবাই। তাই পুরস্কার ঘোষণার পর ছিলনা আপনজনকে জড়িয়ে ধরার উচ্ছ্বাস।

এবার সেরা ছবি হয়েছে ‘নোম্যাডল্যান্ড’, আর সেই সূত্রে সেরা পরিচালক হয়ে ইতিহাস গড়লেন চীনা পরিচালক ক্লোয়ি ঝাও। দ্বিতীয় নারী পরিচালক হিসেবে অস্কার পেলেন তিনি। এর আগে ২০১০ সালে ‘দ্য হার্ট লকার’-এর জন্য অস্কার পেয়েছিলেন ক্যাথরিন বিগেলো। ক্লোয়ি আবার একইসঙ্গে ‘উইম্যান অব কালার’ তথা অশ্বেতাঙ্গ প্রথম নারী হিসেবেও অস্কার পেলেন।

‘নোম্যাডল্যান্ড’-এর গল্পটা ফার্ন নামের এক নারীকে ঘিরে। আমেরিকার মহামন্দার সময় সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন ষাটে পা দেওয়া ফার্ন। এরপর ছুটে যান পশ্চিমে। বেছে নেন এ যুগের যাযাবর জীবন।

আর ফার্নের চরিত্রটাকে দুর্দান্তভাবে ফুটিয়ে তুলে সেরা অভিনেত্রীর অস্কারটা বাগিয়ে নিয়েছেন ফ্রান্সেস ম্যাকডোরমান্ড। এ নিয়ে তিনটি অস্কার পেলেন এ অভিনেত্রী। তিনটিই পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রী হিসেবে (আগের দুটি ছবি হলো- ‘ফারগো’, ‘থ্রি বিলবোর্ড আউটসাইড এবিং মিসৌরি’)। ‘দ্য ফাদার’ ছবিতে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করে সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার পেয়েছেন অ্যান্থনি হপকিনস। একইসঙ্গে তিনি আবার অস্কারজয়ী সবচেয়ে বেশি বয়সী অভিনেতাও।

পুরস্কার হাতে নিয়ে ক্লোয়ি জানালেন তার অনুপ্রেরণার কথা- ‘আমি দুনিয়ার যেখানে যার সঙ্গেই মিশেছি, তাদের ভালো দিকটাই দেখেছি। আর তাই আমার এই পুরস্কারটা তাদের জন্য উৎসর্গ করছি, যারা নিজেদের মধ্যে ভালো মানুষটাকে ধরে রাখার মতো সাহস দেখিয়ে চলেছেন, তা যতোই কঠিন হোক না কেন।’

অন্যদিকে সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের ট্রফি হাতে নেওয়ার সময় আবেগঘন গলায় ব্রিটিশ অভিনেত্রী, লেখক ও পরিচালক এমারেল্ড ফেনেল বললেন, ‘ট্রফিটা বড্ড শীতল আর ভারী ঠেকছে। আর আমি কিন্তু কেঁদে ফেলবো না, কারণ এটা ঠিক ইংরেজদের মতো আচরণ হবে না।’

সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের পুরস্কার হাতে নেওয়ার সময় সবাইকে আরেক দফা আবেগে ভাসিয়েছেন ডেনমার্কের পরিচালক থমাস ভিনটারবার্গ। জানালেন, যে ছবির জন্য অস্কার পেলেন, সেটার শুটিং শুরুর চারদিনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় তার কিশোরী কন্যাসন্তান মারা যায়। প্রচণ্ড কষ্ট বুকে চেপে ঠিক করেন মেয়ের স্মৃতি ধরে রাখতেই এ সিনেমার কাজ শেষ করবেন। জীবনের জয়গানের থিম নিয়ে বানানো সিনেমাটির শেষে তাই মেয়ের নাম ‘আইডা’ জুড়ে দেন তিনি।

সেরা আন্তর্জাতিক কাহিনিচিত্র ‘অ্যানাদার রাউন্ড’। এদিকে পোশাক পরিকল্পনার জন্য অস্কার জিতে ইতিহাস গড়লেন ৮৯ বছর বয়সী অ্যান রথ। তিনিই এখন সবচেয়ে বেশি বয়সী অস্কারজয়ী নারী।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক কারা হাসলেন শেষ হাসি- সেরা সিনেমা: নোম্যাডল্যান্ড সেরা পরিচালক: ক্লোয়ি ঝাও (নোম্যাডল্যান্ড) সেরা অভিনেতা: অ্যান্থনি হপকিন্স (দ্য ফাদার) সেরা অভিনেত্রী: ফ্রান্সিস ম্যাকডোম্যান্ড (নোম্যাডল্যান্ড) সেরা সহ-অভিনেতা: ড্যানিয়েল কালুইয়া সেরা সহ-অভিনেত্রী: ইয়া-জাং উন (মিনারি) সেরা মৌলিক গান: ফাইট ফর ইউ (জুডাস অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক মেসিয়াহ) সেরা এনিমেটেড সিনেমা: সোল সেরা মেকআপ ও কেশসজ্জা: মা রেইনি’স ব্ল্যাক বটম ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট: টেনেট সিনেমাটোগ্রাফি: মাঙ্ক সম্পাদনা: সাউন্ড অব মেটাল প্রোডাকশন ডিজাইন: মাঙ্ক শব্দ: সাউন্ড অব মেটাল সেরা আন্তর্জাতিক সিনেমা: এনাদার রাউন্ড (ডেনমার্ক) সেরা প্রামাণ্যচিত্র: কোলেট প্রামাণ্যচিত্র ফিচার: মাই অক্টোপাস টিচার লাইভ অ্যাকশন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: টু ডিসট্যান্ট স্ট্রেঞ্জার্স অ্যানিমেটেড স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: ইফ এনিথিং হ্যাপেনস, আই লাভ ইউ সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য: প্রমিসিং ইয়ং উম্যান সেরা এডাপ্টেড চিত্রনাট্য: দ্য ট্রায়াল অব শিকাগো সেভেন অরিজিনাল স্কোর: সোল কস্টিউম ডিজাইন: মা রেইনি’স ব্ল্যাক বটম

মনোনয়নে বারবার উচ্চারিত হয়েছিল ‘ম্যাঙ্ক’, ‘দ্য ফাদার’, ‘নোম্যাডল্যান্ড’, ‘মিনারি’, ‘ব্ল্যাক মাসিহা’, ‘সাউন্ড অব মেটাল’-এর মতো ছবিগুলো। একমাত্র ভারতীয় ছবি হিসেবে (যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে) অস্কারের দৌড়ে শামিল হয়েছিল আদর্শ গৌরব, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও রাজকুমার রাও অভিনীত ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’। কিন্তু পুরষ্কার হাতে তুলতে পারেনি। আটটি মনোনয়ন থেকে দুটো পুরষ্কার জিতেছে মাঙ্ক। উল্লেখ‍্য,এবারের অস্কার ছিল অনেক দিক থেকেই আলাদা। অস্কার আয়োজনের হলরুমে যাঁদের বসে থাকতে দেখছেন, একবার নয়, দুবার নয়, তিন-তিনবার করোনা পরীক্ষার ফল দেখিয়েই তাঁরা এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন। তাপমাত্রা পরীক্ষা করে ঢুকতে তো হয়েছেই। যতক্ষণ অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হচ্ছে না, সেই সময়ে মাস্ক ছিল বাধ্যতামূলক। পুরো বিষয়টা নজরদারি করার জন্য ছিল একটা সুরক্ষা দল। আয়োজক, মনোনীত সদস্য ও তাঁদের নিকটাত্মীয় ছাড়া মাত্র ১৭০ জন ভাগ্যবান দর্শক সরাসরি উপভোগ করেছেন এই আয়োজন। আর অস্কার তো হলো, এবার যাঁদের হাতে পুরস্কার উঠেছে আর যাঁদের হাতে ওঠেনি, তাঁদের সবাইকে থাকতে হবে বাধ্যতামূলক ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে। অস্কারের মূল অনুষ্ঠানের আগে ও পরে রেড কার্পেটের ভিড় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতিতে তা হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App