×

জাতীয়

হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা বাবুনগরীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১১:২৪ পিএম

হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। ভবিষ্যতে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে নতুন করে কমিটি গঠন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রোববার (২৫ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে এ ঘোষণা দেন তিনি।

জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেতার পরামর্শে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। ভবিষ্যতে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে এ সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হবে।

গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ–সহিংসতা হয়। এরপর হেফাজতের কেন্দ্রীয় যগ্মমহাসচিব মামুনুল হকসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ১৯ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৭৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৬৯ হাজারের বেশি জনকে আসামি করা হয়েছে।
এসব মামলায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের নেতা–কর্মী ও সমর্থকরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটির কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী। হেফাজত নেতা মামুনুলকে গ্রেপ্তারের পর একে একে ফাঁস হতে থাকে তার নানা অপরকর্ম ।হেফাজত নেতারা তা ধামাচাপ দিতে ব্যর্থ হন। এরপর ২০১৩ সালের শাপলাচত্ত্বরের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এবং গত ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে তাণ্ডবে সংশ্লিষ্টতা ও উস্কানির অভিযোগে মামুনুল সহ একের পর এক শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হতে থাকে। এই চাপের মুখে সংগঠনটির নেতারা আপসের পথে হাঁটার চেষ্টাও করেন। স্বরাাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেন। আটকদের মুক্তির দাবি জানান। কিন্তু সাড়া পাননি তারা। এরই মধ্যে কওমি মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রচলিত সব ধরনের রাজনীতি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে কওমি মাদরাসার সমন্বিত সর্বোচ্চ শিক্ষা বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ।  এই পরিস্থিতি শাপলা চত্তর তাণ্ডবের মূল হোতা বলে অভিযুক্ত নেতাদের নেতৃত্বে থাকা হেফাজত আর পথ দেখছে না। বাধ্য হয়ে নেতৃত্ব পাল্টানোর এই ঘোষণা এলা। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের হওয়া একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক মোদিবিরোধী আন্দোলনের সময়ও সহিংসতা করায় একাধিক মামলায় মামুনুল হকের নাম রয়েছে।

হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক একজন অঘটন ঘটন পটিয়সী। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া একাধিক নারী সঙ্গের কারণে সম্প্রতি টক অব দ্য কান্ট্রি তিনি। জান্নাত আরা ঝর্ণা ছাড়াও আরেক মাদ্রাসা শিক্ষিকার সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্কের একাধিক অডিও কল রেকর্ড ফাঁস হয়। কথিত আন্দোলনে হেফাজতের ১৭ জন নেতাকর্মীর মৃত্যুর রেশ না কাটতেই ডিভোর্সী নারী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর রয়েল রিসোর্টে অবকাশ যাপনে গিয়ে তিনি নতুন বিতর্কের জন্ম দেন। প্রথম স্ত্রী ছাড়াও আরো দুই নারীকে স্ত্রী হিসাবে দাবি করলেও এর আইনী ভিত্তি নেই। তবে টাকার জোরে অনেক নারীকে তিনি ‘বশ’ করলেও সেই টাকার উৎস্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গত সপ্তাহের রবিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে তাকে মোহাম্মদপুরের মাদাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

একাধিক সূত্র মতে, মামুনুলের আয়ের উৎস্য নিয়ে রহস্য রয়েছে। শুধুমাত্র মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে এতো টাকার মালিক হওয়া যায় না বলে খোঁদ হেফাজত নেতারা দবি করেছেন। ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে টাকা আয় ছাড়াও বিদেশী একাধিক এনজিও এবং সংস্থার মাধ্যয়ে তার আয় রয়েছে বলে জানা গেছে। তার ওই আয় অপ্রদর্শিত।

শাপলা চত্ত্বরের তান্ডবে মামুনুল হকের উত্থান। এরপর বায়তুল মোকাররমের তোণ্ডবে হুকুমের আসামি হয়ে তার পতনের পথ উন্মুক্ত হতে থাকে। মোদির সফরকে ইস্যু করে মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকদের লেলিয়ে দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করা অপচেষ্টা এবং সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখলেরও স্বপ্ন দেখছিলেন এই হেফাজত নেতা।  রিমান্ডে থাকা মানুনুল এরই মধ্যে পুলিশের কাছে এমন কথা স্বীকার করেছেন। তিনি পুলিশকে আরও বলেছেন, পাকিস্তানী জঙ্গিদের সঙ্গে তার যোগাযোগা আছে। রাজধানীর তেজগাও থানার ডিসি হারুনুর রশিদ এই রবিবারেই এমন চাঞ্চলকর তথ্য জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App