×

সাময়িকী

পারমিতার জগৎ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২১, ১২:০৪ এএম

ফরিদ আহমদ দুলাল সবুজ হাসলো আমার কথায়, “বুঝতে পারছি তোমার প্রচণ্ড অভিমান হয়েছে মাইন্ডসেটের কথা বলাতে। আরে পাগল আমার মতো বাকুল্যা-পাওয়া সুতো ছেঁড়া ঘুড়িদের মাইন্ডসেট অনেক সহজ, আমাদের দ্বন্দ্ব কম, আমাদের দহন কম-পীড়ন কম, ক্ষরণ কম; মাইন্ডসেটের ঝামেলাও কম। এই যে এখন, খুব দ্রুত আমি তোমার যত্ন থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাবো, আমাদের বিচ্ছেদপর্ব এগিয়ে আসছে দ্রুত; হয়তো এ জীবনে তোমার-আমার আর দেখা হবে না কোনো দিন; হয়তো কোন নির্জন দুপুরে তোমার স্মৃতি, আমার দরোজায় কড়া নাড়বে, আমি তখন কবিতার পঙক্তি সাজাবো কাগজের বুকে- দিগন্তের ওপারে কে তুমি অবকাশ পেলে ডাকো হারানো বর্ষার কথা ভেবে কে আমায় মনে রাখো অলকানন্দার জলে স্নান করে পারিজাত বনে অভিসারে ডুবে থাকো? পাহাড়ের গুহায় আমার একাকী জীবন মৌনব্রতে যায় নাগালে তোমায় পাবো নিয়তিতে নেই সে উপায়। স্বপ্নের খোলস বদলে যায় সময়ের আবর্তনে আমার স্বপ্নেরা স্থির হয়ে আছে, যা রচেছি মনে; সংকীর্তন করি মৃত্তিকা-পুষ্পের নাম মিলনের স্বপ্নসফল কখন হয় পরিপূর্ণ মনষ্কাম। শিশির-বিন্দুর চমকিত চোখে দেখি স্বপ্নদ্যুতি মেঘে মেঘে আকাশের বুকে আঁকি প্রণয় মুরতি। অতঃপর খসড়া কবিতাটি যত্নে বুকের গহীনে আমৃত্যু কষ্টলালন। কবির কবিতা শুনে বুকের ভার কিছুটা কমলো। তবুও বুকের ভেতর বেদনার একটা সূক্ষ্ম কাঁটা বিঁধে রইলো যেনো। কেনো যেনো কবিকে হারাবার একটা ভয় চেপে রইলো। নিজেকে সহজ করার জন্য বললাম, “হাজং বিদ্রোহ আর টঙ্কপ্রথা বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে কিছু বলবে বলেছিলে, এখন বলবে?” সবুজ বললো, “নিশ্চয়ই! হাজং বিদ্রোহের কথা শুনতে হলে তোমাকে ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী হাজং এবং গারোদের সম্পর্কে জানতে হবে। ময়মনসিংহের দুর্গাপুর অঞ্চলে প্রধানত হাজং এবং গারো সম্প্রদায়ের বাস। দুর্গাপুর ছাড়াও কলমাকান্দা, হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতি, শেরপুর সহ উত্তর ময়মনসিংহের বেশকিছু এলাকায় গারো, কোচ এবং হাজং সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে; তবে দুর্গাপুর এবং ধোবাউড়া এলাকাতেই বেশির ভাগ হাজংয়ের আবাস। সংখ্যা বিচারে গারো নৃগোষ্ঠীর সংখ্যাই বেশি। ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী হাজংরা সনাতন ধর্মাবলম্বী আর গারোরা সাংসারেক ধর্মে বিশ্বাসী। প্রায় একশ বছর আগে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ক্যাথলিক মিশনারিরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধর্ম প্রচারে এলে গারো সম্প্রদায়ের মানুষ দ্রুত খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হলেও হাজং সম্প্রদায়ের মানুষ খুব একটা ধর্মান্তরিত হয়নি। যে কারণে গারোরা বৃটিশ সরকারের সুনজরে থাকলেও হাজং সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের অপ্রিয়ই থেকে যায়। বঞ্চনার তালিকায় থাকে হাজংরা, আর গারোরা বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত হতে থাকে। হাজং সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সঙ্গতকারণেই ক্ষোভ জমে। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ‘গারোপাহাড় এ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে বৃটিশ সরকার টঙ্কপ্রথা চালু করে। টঙ্কপ্রথায় নির্দৃষ্ট পরিমান ফসল কৃষককে খাজনা হিসাবে দিতে হতো। খাজনা আদায়ের ভার ছিলো জমিদারদের উপর। সোয়া একর জমির খাজনার পরিমান ছিলো ১৫ মন ধান; একই পরিমান জমির খাজনা ছিলো যখন ৫-৭ টাকা। সে সময় সুসঙের জমিদার খাজনা হিসেবে বছরে ২লক্ষ মন ধান আদায় করতো। টঙ্কপ্রথা যৌক্তিক কারণে কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর পছন্দ ছিলো না। হাজং সম্প্রদায়ের সিংহভাগ কৃষিজীবী হবার কারণে টঙ্কপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো তারা। বৃটিশ সরকারের সুনজরে থাকার কারণেই সম্ভবত গারো নৃগোষ্ঠীর লোকেরা টঙ্কপ্রথা বিরোধী আন্দোলনে খুব একটা সম্পৃক্ত হয়নি। ১৯৩৭-এ কমরেড মণি সিং-এর নেতৃত্বে টঙ্কপ্রথা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। কমরেড মণি সিং আন্দোলনের জন্য ছয় দফা দাবিনামা প্রস্তুত করেন। দফাগুলো ছিলোÑ ১. টঙ্ক প্রথার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ২. টঙ্ক কৃষকদের ভূমির অধিকারে স্বীকৃতি ৩. পরগনায় নগদ টাকায় দেয় হারের নিরিখে খাজনা নির্ধারণ ৪. টঙ্ক খাজনার বকেয়া দাবি না করা ৫. জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি এবং ৬. সাম্রাজ্যবাদের উচ্ছেদ। কিন্তু দাবি না মেনে বৃটিশ সরকার আন্দোলনকারীদের উপর চড়াও হয়। যার ফলশ্রুতিতে আন্দোলন আরো তীব্র হতে থাকে।  ১৯৪০-এ দুর্গাপুর অঞ্চলের হাজংরা সে আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। তাদের স্লোগান ছিলো, “টঙ্কপ্রথার বিলোপ চাই” এবং “জান দেবো তবু ধান দেবো না!” ১৯৪৬-এ টঙ্কপ্রথা বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয় জমিদারি ব্যবস্থা বিলোপ আন্দোলন। এসময় আন্দোলনে যুক্ত হয় নতুন স্লোগান “জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ চাই, জমি যার, লঙ্গল তার”।  আন্দোলন ব্যাপক রূপ লাভ করে। আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে একদিকে যেমন জমিদারদের লেঠেল বাহিনি তৎপরতা চালায়, পাশাপাশি পুলিশও বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে। এই আন্দোলনের এক নেতা ললিত সরকারের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। একই বছর ৩১শে জানুয়ারি দুর্গাপুরের বহেরাতলী গ্রামে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি চালায়। পুলিশ কুমুদিনী হাজংসহ বেশ ক’জনকে আটক করে। তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় হাজং সম্প্রদায়ের লোকজন তীর-ধনুক-বল্লম নিয়ে তাদের ছাড়াতে গেলে পুলিশ গুলি করে। গুলিতে শহীদ হন হাজং মাতা রশিমনি হাজং, সুরেন্দ্র হাজংসহ বেশ ক’জন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ এবং পাকিস্তান জন্মের পরও টঙ্কপ্রথা এবং টঙ্কপ্রথা বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত ছিলো। আন্দোলনের আগুন ক্রমশ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। টঙ্কের ধান দেয়া বন্ধ করে দেয় কৃষকেরা। ১৯৪৯ সালের ১৫ জানুয়ারি কলমাকান্দা থানার বটতলায় ২০ মণ টঙ্ক ধান আটক করে বিদ্রোহী কৃষকেরা। ২৬ ফেব্রুয়ারি চৈতন্যনগরে জমিদারের কাচারী দখল করে উত্তেজিত কৃষকেরা।পুড়িয়ে দেয় জমিদারের প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র দলিল-দস্তাবেজ। অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে তাদের উপর। বিপ্লবী মঙ্গল সরকারের নেতৃত্বে একটি মিছিল বেরুলে পুলিশ গুলি করে, পুলিশের গুলিতে ১৯জন বিদ্রোহী নিহত হন, গ্রেপ্তার হন অনেকে; এর মধ্যে অশ্বমণি ও ভদ্রমণি হাজং এর ১২ বছর করে জেল হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি দু’জন বন্দুকধারী সিপাইকে বিপ্লবী কৃষকেরা ধোবাউড়ার ভালুকাপাড়া গির্জার সামনে হত্যা করে। ১৯৫০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীন নিজে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সুসঙ দুর্গাপুর এলাকায় আসেন; কিন্তু টঙ্কপ্রথা না তুলে নেওয়ায় এই আন্দোলন অব্যাহত থাকে। অবশেষে ১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাস হলে টঙ্কপ্রথার মতো এক নির্মম প্রথার বিলোপ সাধন হয়।” সবুজ কথা শেষে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। আমি ভাবি, এতো কথা কবি মনে রাখে কীভাবে? আমি কবির কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে প্রশ্ন করি, “এতো কথা তুমি মনে রাখো কীভাবে কবি?” কবি হাসে নিঃশব্দে। দু’হাতে কবির মাথাটা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরি আবেগে। কবি নিজেকে আমার বন্ধন থেকে আলতো করে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, “অতটা আহ্লাদিত হবার কিছু হয়নি। এসব আমার নিত্যপাঠ এবং অনুধ্যানের বিষয়।” আমি কবিকে শুইয়ে দিয়ে বলি, “তুমি এবার একটু বিশ্রাম করো। আমার এবার হোস্টেলে যেতে হবে। সন্ধ্যা হয়ে এলো।” বেরুবার সময় কবির ছোট বোনের সাথে দেখা। তার সাথে একটু কথা বলে এগিয়ে যাই হোস্টেলের দিকে। হোস্টেলের গেটে ঢুকতে যাবো এমন সময় কে যেনো আমার নাম ধরে ডাকে। তাকিয়ে দেখি পারমিতার মেজপা’র দেবর মাসুম ভাই রিক্সায়। মাসুম ভাই এগিয়ে এলেন। আমি তাকে প্রশ্ন করি, “কী খবর মাসুম ভাই, পারমিতার খবর কী?” মাসুম ভাই বলেন, “আমি তো ঠিক জানি না। ও বাড়ি গিয়েছিলো। আমি তো পারমিতার খোঁজ নিতেই এলাম।” আমি কিছুটা দুঃশ্চিন্তায় পড়লাম, “বাড়ি গিয়ে ওর অসুখ-বিসুখ করেনি তো? এদিকে কলেজে তো ওকে নিয়ে নানান সমস্যার তৈরি হচ্ছে। হঠাৎ কিছু না বলে-কয়ে চলে গেলো! ওর তো ফিরে আসা উচিৎ, নইলে তো সমস্যার সৃষ্টি হবে। একটা বছর নষ্ট হলে ক্ষতি হয়ে যাবে না?” মাসুম ভাই যেনো কিছুটা বিরক্ত, “কি বলবো বল! কেউ যদি নিজের ভালোটা বুঝতে না পারে, কে তাকে বোঝায়? আচ্ছা, তুমি কি সবুজ-এর খবর বলতে পারো? কী অবস্থা ওর? ও-কি রিলিজ হয়ে গেছে?” বললাম, “শরীর এখন ভালোই। এখনও রিলিজ হননি, হয়তো আগামীকাল রিলিজ হতে পারেন। আপনি যান না, গিয়ে দেখে আসুন, নিউ কেবিনের ২ নম্বর রুমে আছেন।” মাসুম ভাই চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকালেন আমার দিকে। বললাম, “নিউ কেবিনের দুইনম্বর রুমটা স্টুডেন্টদের জন্য, উনি তো পারমিতার আত্মীয় হিসেবে ওর কেয়ারঅবেই আছেন। আমি তো এটা নিয়েও দুশ্চিন্তা করছি। কালকে যদি রিলিজ হয়ে যান, তখন তো সমস্যা। পারমিতা নেই কী যে হবে কে জানে! আমার সহযোগিতায় কাজ হবে কী-না কে জানে।” মাসুম ভাইয়ের মুখে বিরক্তি, “কী-যে পাগলামী করে পারমিতা! কেনো তাকে ওর আত্মীয়ের পরিচয়ে সিট দেয়? সিট যদি দিলোই এখন রিলিজের সময় থাকলো না কেনো! আমাদের মহল্লায় পারমিতা আর সবুজকে নিয়ে কত কথা হচ্ছে! আমাদের লজ্জায় পড়তে হচ্ছে।” আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, মাসুম ভাই কী বলতে চাইছেন। প্রশ্ন করলাম, “মাসুম ভাই, আপনি কি আমায় কিছু বলবেন?” “কী আর বলার আছে। আচ্ছা আমি আসি। পারমিতা এলে ওকে বলো আমার কথা।” বিদায় নিলেন মাসুম ভাই, আমিও চলে এলাম। পরদিন সত্যি এলো সেই বেদনাময় দিন। স্যার এসে কবিকে পরীক্ষা করে রিলিজ দিলেন। আমি অগত্যা দৌড়ঝাঁপ করে কবির বিদায়ের আয়োজন করলাম। কবির বোন আর এক বন্ধু এসে কবিকে নিয়ে চলে গেলো। কিছুই বলা হলো না আমার। বুক ভেঙে কান্না এলো। কবি আমার কাঁধে হাত রেখে বললো, “পাহাড় দুহিতা তোমার যত্নের কথা নিশ্চয়ই মনে থাকবে। হয়তো তোমার সাথে আবার সাক্ষাতের অপেক্ষায়ও থাকবো মনে মনে। তোমার বন্ধুকে আমার কৃতজ্ঞতার কথা বলো। বিদায়ের সময় ওর সাথে দেখা হলো না। হয়তো এই-ই ভালো হলো। যদি কখনো দেখো নৈর্ঋতাকাশের কালো মেঘ তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, মন খারাপ করো না। তুমি ভালো একজন ডাক্তার হও, তারচেয়ে বলি, তুমি একজন ভালো মানুষ হও। তোমার কাছে এসে কোনো দুঃখী মানুষ বঞ্চিত হয়ে ফিরে না যায়। সুযোগ পেলে কবিতা লিখো, লিখতে না পারো কবিতা পড়ো। এবার বিদায় দাও।” আমার মুখে কোনো কথা এলো না কবিকে জড়িয়ে ধরে হু-হু করে কেঁদে উঠলাম। কবি ওর বোন আর বন্ধুর সাথে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল। ॥ ৯ ॥ পারমিতার প্রত্যাবর্তন প্রায় বিশ দিন পর কলেজে ফিরছি; কলেজে ফিরছি মানে সবুজের কাছে ফিরছি। বুকের ভেতর কী এক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা কাজ করছে। ক্যামন আছে আমার সবুজ? ও কি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে? ও কি হাসপাতালে আছে না-কি রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরে গেছে? মনটা ছটফট করছে সবুজকে দেখার জন্য। বুকের মধ্যে সবুজের কবিতার লাইনগুলো ঘোরাফেরা করছে— প্রখর রোদ্দুরে একখণ্ড মেঘ যেনো ছায়া দিয়ে গেল কানে কানে প্রশ্ন করে গেল ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’ তবে কি মেঘের ভিন্ননাম বনলতা সেন ছিলো একদিন? ...... কবিতার পঙক্তিগুলো আওড়াতে আওড়াতে কখন হোস্টেলের গেটে রিক্সা এসে দাঁড়ালো ঠাহর করতে পারিনি; টের পেলাম তখন, যখন রিক্সাচালক বললো, “নামবেন কই আপা?”

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App