×

মুক্তচিন্তা

কেউ কি এভাবে চলে যায়?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২১, ১২:০৪ এএম

কেউ কি এভাবে চলে যায়?
সাইফুজ্জামান সিনেমা দেখা অনেকের হবি। ষাট ও সত্তর দশকের বাংলা সিনেমা নিটোল গল্প ও অভিনয় দক্ষতায় উঁচুমানের ছিল। বাবা-চাচারা এসব সিনেমার ভক্ত ছিলেন। পরে আমরা ভক্ত হয়ে উঠি। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে আমরা স্কুল ফাঁকি দিয়ে এসব সিনেমা আমরা দেখতাম। নির্দিষ্ট সিনেমা ছাড়া অধিকাংশ সিনেমার কিছু দেখে হল থেকে পালাতাম। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিল কবরী-রাজ্জাক জুটির সিনেমা। সেই কবরী করোনাক্রান্ত হয়ে পৃথিবী থেকে চলে গেলেন। এই সংবাদ তার ভক্তকুলের জন্য যেমন বেদনার, আমার জন্য হাহাকারের। কবরী ছিলেন আমাদের স্বপ্নের নায়িকা। অসম্ভব প্রাণ খোলা হাসি, কথা প্রক্ষেপণ, দুষ্টু-মিষ্টি আচরণ তাকে আমাদের কাছে গ্রহণীয় করে তুলেছিল। আমাদের রবপুরুষদের নায়ক-নায়িকা ছিলেন উত্তম-সুচিত্রা। উত্তম-সুচিত্রার কেমিস্ট্রি ছিল অম্লমধুর। তাদের পোশাক, শাড়ি, শার্ট, প্যান্ট, চুলের স্টাইল, প্রশাধন বাঙালি নর-নারীকে আকৃষ্ট করত। এমনকি কাজল পরা, মুখের কালো তিল, গানের দৃশ্যের অন্তরঙ্গতা ছিল নজরকাড়া। উত্তম-সুচিত্রা জুটির পাশাপাশি ষাট ও সত্তর দশকের ইংরেজি সিনেমার নায়ক-নায়িকা, কাহিনীর নাটকীয়তা মুগ্ধ করার মতো ছিল। এর মধ্যে কবরী-রাজ্জাক ঝড়ের মতো এসে মানুষের চিত্ত জয় করেছিলেন। কবরী অনেক নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। সবখানেই সাফল্যের চূড়া স্পর্শ করেছেন। তিনি যখন অভিনয় শুরু করেন তখন প্রযুক্তির উন্নয়ন এমন ঘটেনি। লাইট, সাউন্ড, স্টেজ, এডিটিং, ফটোশপের আধুনিক ব্যবহার ঘটেনি। সাদামাটা কাহিনীকে অসাধারণ দক্ষতায় দর্শক নন্দিত করার কৃতিত্ব ছিল কবরীর। কবরী সুতরাং সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কবরীর জন্ম ১৯৫২ সালের ১৯ জুলাই। বাবা কৃষণ দাস পাল। মা লাবণ্য প্রভা পাল। ১৯৬৩ সালে নৃত্যশিল্পী তার মঞ্চে অভিষেক। টেলিভিশন, রেডিওতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। পরে মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতির মধ্যগগনে আরোহণ করেন। ১৯৬৪ সালে অভিনীত ছায়াছবির জন্য আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সম্মাননা পান তিনি। ১৯৬৫ সালে ফ্রাংক ফুট চলচ্চিত্র উৎসবে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় সুতরাং। মিষ্টি মেয়ে উপাধি তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়। পরের ছায়া ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’ কবরী জুটি বাঁধেন রাজ্জাকের সঙ্গেÑ হেসে খেলে জীবনটা, নীল আকাশের নীচে, গান হয়ে এলে, প্রেমের নাম বেদনা। ১৯৭৩ সালে জহিরুল হক পরিচালিত ‘রংবাজ’ ছবি মুক্তি পায়। ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ কালজয়ী সাহিত্যনির্ভর ছবি। যা অদ্বৈত মল্লবর্মণের কাহিনী নিয়ে তৈরি এ ছায়াছবিতে ১৯৭৩-এ কবরী অনবদ্য অভিনয় করেন। বেঈমান কবরী, রাজ্জাক অভিনীত আলোচিত ও সফল ছায়াছবি। এ ছবিতেও তার নায়ক ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবি পরিচালনা করেন রুহুল আমিন। মাসুদ রানা গোয়েন্দা চরিত্র মাসুদ রানা রূপায়িত হয় চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্র মাসুদ রানাতে অভিনয় করেন সোহেল রানা অলিভিয়া, সোহেল রানা ও কবরী। মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। সুজন সখী ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কবরী-ফারুক অভিনীত ছায়াছবি। ছবি অন্যতম রোমান্টিক পিস হিসেবে ধরা হয়। পরিচালনা করেন চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে দুই ভাইয়ের বিচ্ছেদ ও তাদের মিলনের গল্প উঠে এসেছে চলচ্চিত্রে। সারেং বৌ নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের একটি গ্রামের সহজ-সরল মেয়ে নবিতুনকে নিয়ে এর গল্প। নারীর জীবনযুদ্ধের কাহিনী স্থান পায়। ‘বউ’ উপন্যাস ও চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে নারীর সংগ্রাম। যা সার্থকভাবে ফুটিয়ে তোলেন কবরী। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান কবরী। কবরীর বিপরীতে অভিনয় করেন ফারুক। ১২ দিন করোনা ভাইরাসের সঙ্গে তাকে যুদ্ধ করতে হয়। কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরী ১৭ এপ্রিল রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কবরীর মতো উঁচুমানের শিল্পী যুগে যুগে আসে। তার স্থান অপূরণীয়। শুনেছি তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। কবরী অভিনীত ছায়াছবি সংরক্ষণ করা জরুরি। কালের বিবর্তনে কবরী যেন না হারিয়ে যায় সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তার অভিনয়শৈলী ও চলচ্চিত্র নিয়ে বিস্তর গবেষণার অবকাশ রয়েছে। সাইফুজ্জামান : লেখক ও গবেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App