×

জাতীয়

পথশিশু মারুফের মারধরের বক্তব্য অসংলগ্ন, ছড়াচ্ছে গুজব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২১, ০৮:১২ পিএম

পথশিশু মারুফের মারধরের বক্তব্য অসংলগ্ন, ছড়াচ্ছে গুজব

পথশিশু মারুফের মারধরের বক্তব্য -এ অসংলগ্নতা রয়েছে

বঙ্কিমের 'কমলাকান্তের দপ্তর' এর কমলাকান্তের চরিত্রের মতো একটি সহজ স্বীকারোক্তি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে বাহাদুর পার্ক এলাকার পথশিশু মারুফ। জজকোট এলাকায় আচমকা একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক লাইভে ঢুকে 'আচ্ছা, এইযে লকডাউন দিয়েছে সামনে ঈদ, মানুষ খাবে কি। মাননীয় মন্ত্রী যে লকডাউন দিয়েছে এটা ভুয়া' ক্ষুধার্ত এ শিশুর বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর দুইদিন পরেই তার একটি চোখ ফোলা ছবি নিয়ে সরকার পক্ষ তাকে মারধর করেছে বলে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়াতে দেখা যায়।

বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) ভোরের কাগজ থেকে মারধরের বিষয় নিয়ে মারুফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্যে অসংলগ্নতা দেখা যায়। মারুফ জানায়, তিনজন পুলিশ তাকে জজকোর্ট এলাকা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কেরানীগঞ্জে মারধর করে। পরে এক সাংবাদিকের সহায়তায় পুরান ঢাকায় এসেছে বলে দাবি করে সে। কিন্তু কে সেই সাংবাদিক তা বলতে পারেনা সে। এ সময় তাকে কোথায় কোথায় মারা হয়েছে জানতে চাইলে সে তার চোখের নিচে ফোলা অংশ ও পায়ে কয়েকটি কাটা চিহ্ন দেখায়। কিন্তু তার পায়ের কাটা চিহ্ন গুলো বহু বছরের পুরাতন দেখা যায়। কথা বলার সময় মারুফের হাতে ড্যান্ডির পলিথিন দেখা যায়।

এর আগে, মঙ্গলবার রাত বারোটার দিকে বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় মারুফ ও তার আশ পাশের সঙ্গীদের সঙ্গে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রতিনিধির কথা হলে মারুফ জানায়, সরকারের বিপক্ষে কথা বলার জন্য তাকে মারা হয়নি।

এরপর একই দিনে রাত তিনটার দিকে সহমর্মিতা ফাউন্ডেশনের পারভেজ হাসানের সঙ্গে মারুফের ছবি পোস্ট দিয়ে তাকে মারধর করা হয়েছে বলে দাবি করে পারভেজ। পরে এটা বিভিন্ন ফেসবুক পেজে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন ছবি তোলার পর তাকে খাবার, নগদ ৫০০ টাকা ও পোশাক দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মারুফকে একটি সাদা গাড়িতে করে নিয়ে যায় পারভেজ হাসান। পরের দিন বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মারুফকে জজকোর্ট ও সদরঘাট এলাকায় আর দেখা যায়নি। সেদিন বিকেলে হঠাৎ বাহাদুর শাহ পার্কে দেখা গেলে তাকে কয়েকটি গণমাধ্যম ঘিরে ফেলে। সেখানে একটি বক্তব্যে তার কাছ থেকে শোনা যায় জজকোর্টের ভিতরে নিয়ে গিয়ে তিনজন পুলিশ তাকে মারধর করে চোখে জখম করে দিয়েছে।

মারুফের এক বক্তব্যে তাতে মারা হয়নি। এক বক্তব্যে জজকোর্টে পুলিশ মেরেছে। আরেকদিকে কেরানীগঞ্জ পুলিশ মেরেছে বক্তব্যে এমন অসংলগ্নতা নেশায় আসক্ত হওয়ার কারণে হতে পারে বলে জানান বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকার স্থানীয় মানুষজন। তারা জানান, দিনের অধিকাংশ সময় সে পার্ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকে। তার হাতে সবসময় প্লাস্টিকে করে ড্যান্ডি খেতে দেখা যায়। সে নেশায় ও ক্ষুদায় সবসময় অপ্রকৃতস্থ থাকে। মারুফকে যে খাবার বা টাকা দিবে সে তার কথাই শুনবে।

বাহাদুর শাহ পার্কে তার সঙ্গীরা জানায়, মারুফকে কেউ মারেনি। তার চোখের ফোলা অংশ অন্য যেকোন আঘাতে হয়েছে। ভিক্ষা ও চুরি না করলে তাদেরকে মারা হয় বলে পার্কের শিশুরা জানায়। তারা আরও জানায়, পার্কের কয়েকজন মহিলা ও কেরাণীগঞ্জের কয়েক জনের সম্মিলিত একটি চক্র তাদেরকে জোর করে ভিক্ষাবৃত্তি ও চুরি করতে শেখায়। এগুলো না করলে তাদেরকে মারা হয়। এর আগে প্রথমে  তাদেরকে মাদক দ্রব্য ড্যান্ডিতে আসক্ত করা হয়।

এ পার্কের পথশিশু রিদয় (১০) জানায়, চুরির পেশা বাদ দিতে চায় তারা। কিন্তু চুরি বাদ দেওয়ার কথা বললে কেরাণীগঞ্জের মামুন (২৫) নামের এক ব্যক্তি তাদের পায়ুপথে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুড়িকাঘাত করে। তাদেরকে জোর করে মহিলাদের ব্যাগ, অলঙ্কার চুরি করানো হয়। চুরি না করলে মারধর করাসহ আঙুল কেটে নেওয়া বা মেরে ফেলার হুমকিও দেয় মামুন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App