×

মুক্তচিন্তা

দুই দশকে অর্জন ও বিসর্জন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২১, ১২:০৬ এএম

দুই দশকে অর্জন ও বিসর্জন
গত ১৪ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। বর্তমানে আফগানিস্তানে ২ হাজার ৫০০ মার্কিন সৈন্য অবস্থান করছে। বাইডেনের এই ঘোষণার দিনই উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার (ঘঅঞঙ) মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ ঘোষণা দেন ন্যাটোসহ নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য দেশের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর আরো প্রায় ৭ হাজার সৈন্যকেও একই সময়ের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। মার্কিন সৈন্যের সঙ্গে যুগপৎভাবে যৌথবাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহারের অন্যতম কারণ হচ্ছে ন্যাটোসহ অন্যান্য দেশ তাদের সৈন্য এবং সামরিক সরঞ্জামাদি পরিবহনের জন্য এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর ওপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীল। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের জন্য ওসামা বিন লাদেনের আলকায়েদা নেটওয়ার্ককে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। বিন লাদেনসহ আলকায়েদা নেটওয়ার্ক নিশ্চিহ্ন করা এবং তাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগান সরকারকে উৎখাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ব্যাপক বিমান হামলাসহ সর্বাত্মক আক্রমণ চালায় ওই বছরই অক্টোবর মাসে। এক মাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যেই তালেবান সরকারের পতন হলেও বিন লাদেনকে পাকড়াও করতে যুক্তরাষ্ট্রকে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরো ১০ বছর। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের এক গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন স্পেশাল কমান্ডো বাহিনী নেভি সিল। বিন লাদেন দৃশ্যপট থেকে সরে গেলেও আলকায়েদা নেটওয়ার্ক আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। বরং তা আরো ডালপালা বিস্তার করে ইয়েমেন, সোমালিয়া, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়াসহ নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। ২০০৮-০৯ সালের দিকে তালেবানরাও পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে আফগানিস্তানে ফিরে আসে বিপুল উদ্যমে। ২০০৯ সালে তালেবানদের পুনরুত্থান ঠেকাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামাকে আফগানিস্তানে ১ লাখেরও বেশি সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে হয়েছিল। আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানের ২০ বছর অতিক্রান্ত হতে যাচ্ছে। বুশ-ওবামা-ট্রাম্পের পরে যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ প্রেসিডেন্ট হিসেবে আফগান যুদ্ধ কাঁধে নিয়ে জো বাইডেন শপথ গ্রহণ করেছেন। সর্বশেষ মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণায় বাইডেন উল্লেখ করেন, তিনি আর পঞ্চম প্রেসিডেন্টের কাছে আফগান যুদ্ধের দায়ভার হস্তান্তর করতে রাজি নন। তাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে বাইডেনের ঘোষণার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আফগানিস্তান সফর করেন। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি ২০ বছরের অর্জনের কথা তুলে ধরেন। তিনি আফগানিস্তানে একটি শক্তিশালী সুশীল সমাজ এবং নারী অধিকার সুরক্ষায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। আর বিন লাদেনকে বিচারের আওতায় আনা গেছে অর্থাৎ তাকে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়টি আছেই। আলকায়েদা নেটওয়ার্ক দমনের প্রসঙ্গে ব্লিঙ্কেন বলেন যে, আলকায়েদার প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে খর্ব করা হয়েছে। তাহলে অর্জনের ঝুলিতে মোটামুটি এই-ই। আর বিসর্জন? পেন্টাগনের হিসাব মতে, রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ২ হাজার ৪০০ সৈন্য প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে ২০ হাজার ৬৬০ জন। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গবেষণা অনুযায়ী ২০১৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশের সদস্য মিলে নিহত হয়েছে ৬৪ হাজার ১০৬ জন। তার মধ্যে ২০১৫-১৯ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দায়িত্বে থাকাকালীন পাঁচ বছরেই নিহত হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার সৈন্য। বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজারের বেশি। ২০ বছরের এই যুদ্ধে শুধু আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় হচ্ছে ৮২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটি থেকে যুদ্ধ পরিচালনার ব্যয় যোগ করলে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৯৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়াসহ যেখানেই যুক্তরাষ্ট্র অতি উৎসাহে যুদ্ধে জড়িয়েছে সেখান থেকেই সম্মানসহ বের হওয়াটা তার জন্য কঠিন হয়েছে। আফগানিস্তানের যুদ্ধ থেকে ওবামা-ট্রাম্প দুজনই বের হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সম্মানজনক এবং সুবিধাজনক উপায় না পেয়ে বের হতে পারেননি। এমনকি ট্রাম্প যখন সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছিলেন, তখনো যুক্তরাষ্ট্রের নব্য রক্ষণশীল এবং অস্ত্র ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী লবির বাধার মুখে সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। এ পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত জো বাইডেন ন্যাটোসহ তার গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের সম্মতিতে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানের ২০ বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তানের মাটি থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন। কিন্তু বাইডেন আমেরিকান কাউবয় স্টাইলে ‘মিশন অ্যাকমপ্লিশড’ কথাটা উচ্চারণ করতে পারেননি। তার কারণও স্পষ্ট। আফগানিস্তান থেকে যে মুহূর্তে যেভাবে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হচ্ছে তাকে কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্মানজনক প্রস্তান বলা যায় না। সৈন্য প্রত্যাহার পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপও চূড়ান্ত করা হয়নি। বর্তমান আশরাফ ঘানির দুর্বল সরকারের বিপক্ষে ক্রমশ শক্তিশালী তালেবানদের মুখোমুখি অবস্থানে রেখে সৈন্য প্রত্যাহার অদূর ভবিষ্যতে আফগানিস্তানে আবার সংঘাতপূর্ণ কালো অধ্যায় প্রত্যাবর্তনেরই নিশ্চিত ইঙ্গিত বহন করে। তখন বিষয়টিকে আফগানিস্তানে মার্কিন নীতির পরাজয়ই হিসেবেই দেখা হবে। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান উইলিয়াম বার্নস কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দেয়ার সময়ও এই আশঙ্কার কথাই ব্যক্ত করেছেন। তার মতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের কিছুদিনের মধ্যেই তালেবানরা আবার পূর্ণশক্তিতে ফিরে আসতে পারে এবং আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা তারা দখলে নিতে পারে। আর তখন এটাও বিচিত্র নয় যে আলকায়েদা এবং আইএসের মতো উগ্রপন্থি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সেখানে নতুন করে তাদের প্রভাব বিস্তার করবে। ২০০১ সালের পৃথিবী নিশ্চয়ই এখন আর নেই। বদলে গেছে অনেক। এখন চীন যুক্তরাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সক্ষমতা অর্জন করেছে, যা গত দুই সপ্তাহ আগে আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে স্পষ্ট হয়ে যায়। চীন আর যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এক ইঞ্চিও ছাড় দেবে না, তা খোলামেলাই বলে দিয়েছে। অন্যদিকে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী এক দশকে রাশিয়া তখনো ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু পুতিনের নেতৃত্বে আজকের রাশিয়া সব দিক থেকে অনেক অগ্রসর ও শক্তিশালী। তদুপরি মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া কৃষি, ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, বিশ্বসেরা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ অনেক বিষয়েই স্বনির্ভর হয়েছে। তারা পাশ্চাত্যের ব্যাংকিং সিস্টেমের (ঝডওঋঞ) একটি বিকল্প তৈরি করে রেখেছে। যে কোনো সময়ে প্রয়োজনে তারা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম চালু করতে পারবে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের চোখ রাঙানিকে রাশিয়া সেভাবে আর পাত্তাই দিচ্ছে না। যার অন্যতম প্রমাণ হচ্ছে, সম্প্রতি ইউক্রেন সীমান্তে বিপুল পরিমাণ সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোর সব মিত্র মিলেও রাশিয়ার এই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করার সামর্থ্য রাখে না। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সমর্থনে কৃষ্ণসাগরে যে দুটি যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল তা থেকে সরে এসেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দ্রুত সময়ে ন্যাটোর সদস্যপদ লাভে যে অনুরোধ জানিয়েছিল তা আপাতদৃষ্টিতে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দুটি প্রজাতন্ত্র দোনেতস্ক ও লুগানস্কের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি লাইন বরাবর ইউক্রেন যে সৈন্য সমাবেশ করেছিল, তা থেকে পিছু হটা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই। গত দুই দশকে রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালির বাণিজ্যিক সম্পর্ক যে পরিমাণ গভীর হয়েছে তাতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের ঝুঁকি পশ্চিমা দেশগুলো নেয়ার মতো অবস্থায় নেই। সেটা নিশ্চয়ই রাশিয়া জানে। এদিকে অতি সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে চীনের ২৫ বছরের সার্বিক সহযোগিতা চুক্তি এবং রাশিয়া-চীনের কৌশলগত চুক্তি এবং মার্কিন ডলারের আধিপত্যের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে চীনের ডিজিটাল মুদ্রা চালু ইত্যাদি কারণে পুরো বিশ্বের শক্তির ভরকেন্দ্র এখন চীন-রাশিয়ার দিকেই অগ্রসরমান। সুতরাং ইরানের সঙ্গে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের সক্ষমতাও যুক্তরাষ্ট্রের এই মুহূর্তে আছে কিনা তা ভাববার বিষয়। এছাড়া নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের দেশেই অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। ইদানীং ওয়াশিংটনের আত্মবিশ্বাসেও ফাটল লক্ষণীয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে হন্তারক আখ্যা দেয়ার পরে পুতিন তার প্রতিক্রিয়ায় মূলত বাইডেনের মনস্তত্ত্ব নিয়ে কথা বলেছেন, অনেকটাই দার্শনিকের ভাষায়। এমনকি তিনি বয়োবৃদ্ধ বাইডেনের সুস্বাস্থ্যও কামনা করেছেন। গত কয়েক দিনে নানা নাটকীয় ঘটনাও ঘটেছে। প্রথমে বাইডেন পুতিনকে ফোন করে কৌশলগত অস্ত্রসীমিতকরণ চুক্তিসহ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। এরপর তিনি নিকট ভবিষ্যতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তৃতীয় কোনো দেশে একটি দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য পুতিনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ ফোনালাপের পরের দিনই ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং আমেরিকার বায়ুচালিত বিদ্যুৎ স্থাপনায় সাইবার হামলার অভিযোগে ১০ জন রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারসহ আরো কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাইডেন প্রশাসন। এ ঘটনায় রাশিয়া যথারীতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ পরিষ্কার জানিয়ে দেন নিকট ভবিষ্যতে বাইডেন-পুতিন শীর্ষ সম্মেলনের কোনো সম্ভাবনা নেই। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জবাবে রাশিয়াও মস্কো থেকে ১০ জন মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কারসহ একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করে। লক্ষণীয় হচ্ছে, ঠিক তার পরের দিনই প্রেসিডেন্ট বাইডেন হোয়াইট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অত্যন্ত নমনীয় সুরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণ ব্যাখ্যা করেন এবং সর্বশেষ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যে একবারেই নির্বিষ তা তুলে ধরেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, তিনি গত দুই দশকের মার্কিন নীতি থেকে অনেকটাই সরে এসে বিশ্বসভায় রাশিয়ার সমান অংশীদারিত্ব মেনে নিয়ে স্থিতিশীল বিশ্ব গঠনে এক সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন এবং শিগগিরই পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলনে বসার আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী যে একমেরুকেন্দ্রিক একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেছিল তা চীন-রাশিয়ার উত্থানে স্পষ্টতই বিলীন হতে চলেছে। এ প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের অব্যবহিত পরে যদি তালেবান সরকার গঠিত হয় তাহলে সে সরকারকে খুব দ্রুতই পাকিস্তান, সৌদি আরব, ইরান, রাশিয়া এবং সম্ভবত চীন সমর্থন দেবে। তালেবানদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে সমঝোতা হয়েছিল সে অনুযায়ী ১ মে, ২০২১ তারিখে মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের কথা ছিল। সেই অবস্থান থেকে বাইডেন প্রশাসন সরে আসার ফলে ভবিষ্যতে তালেবানরাও যে তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে আলকায়েদা এবং আইসিসের মতো উগ্রপন্থিদের আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেবে না সেই নিশ্চয়তা দেয়া কঠিন। পরিণামে যুক্তরাষ্ট্র ২০ বছর আগে আফগানিস্তানে যে উদ্দেশ্যে অভিযান চালিয়েছিল, সে অবস্থা থেকে খুব বেশি পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। মুহাম্মদ তাজউদ্দিন : শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App