×

সারাদেশ

মির্জাগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ডায়রিয়ায় ১১ জনের মৃত্যু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১, ০২:২৮ পিএম

মির্জাগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ডায়রিয়ায় ১১ জনের মৃত্যু

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে ডায়রিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ছবি: ভোরের কাগজ

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে প্রচন্ড গরম, লবণাক্ত পানির ব্যবহার এবং তরমুজ খাওয়ার ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এগারো জন মারা গেছে। তাছাড়া আইভি স্যালাইন সংকটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফার্মেসীগুলো।

গত ১৭-১৯ এপ্রিল  এই ৩ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের কাঠাঁলতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও সমাদ্দারকাঠী গ্রামের রাকিব খন্দকারের মেয়ে সাহারা সানফুল (১৫) নামের এক কিশোরীসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই পঞ্চাশোর্ধ এবং এদের কেউই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিলেন না বলে জানা যায়।

মৃত ব্যক্তিরা হলেন, উপজেলার মাধবখালী গ্রামের মৃত্যু বন্দে আলী সিকদারের ছেলে মোঃ নুর মোহাম্মদ সিকদার (৮০), উত্তর মাধবখালী গ্রামের মৃত মহব্বত আলী হাওলাদারের ছেলে মন্নাফ হাওলাদার (৫০), একই গ্রামের দেনছে আলী সিকদারের স্ত্রী কহিনুর বেগম (৫৫), মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের মৃত ফরমান সিকদারের ছেলে আলীম উদ্দিন সিকদার (৭৫), মৃত গনি হাওলাদারের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৭০), মৃত করিম নেগাবানের মেয়ে ফরিদা বেগম (৫০),  ঘটকের আন্দুয়া গ্রামের রাখাল চন্দ্র মালির স্ত্রী বিরেন মালী (৫৫), ভাজনা কদমতলা গ্রামের মৃত আজাহার হাওলাদারের ছেলে সোবাহান হাওলাদার (৫৬), পিপড়াখালি গ্রামের ইউনুস সরকারের স্ত্রী কদবানু বেগম (৭০) ও  মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামের মৃত একরাম সিকদারের ছেলে আলেক সিকদার (৫০)। সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিকাল ০৩ টা পর্যন্ত স্থানীয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ শয্যার উপজেলা হাসপাতালে বেড সংকটের কারনে বাধ্য হয়ে বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হচ্ছে রোগীদের। এমনকি ময়লাযুক্ত স্থানে ডাস্টবিনের পাশেও শয্যা পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং হাসপাতালের বারান্দাসহ টয়লেটেও অস্বাস্থ্যকর ময়লাযুক্ত পরিবেশ দেখা গেছে।

প্রতিদিনই থাকছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর ভীড়। অপরদিকে হাসপাতাল ও হাসপাতালের বাইরে ফার্মেসীগুলোতে কলেরা স্যালাইনের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজনেও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না এমন অভিযোগ রোগীর স্বজন ও স্থানীয়দের।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জানান, গত ২৪ ঘন্টায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৯৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত নতুন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে এবং ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭২ জন। এ নিয়ে গত ৭ দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪২ জন। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৬১ জন ডায়রিয়ার রোগী চিকিৎসাধীন আছে ।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত ডায়রিয়ার কোন রোগী এখন পর্যন্ত মারা যায়নি। তবে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

তিনি আরো জানান, এই উপজেলায় পূর্বে কোন বছর এত পরিমান ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে আসে নাই এবং আক্রান্ত হয়নি। রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খাঁন মো. আবুবকর সিদ্দিকী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. তানিয়া ফেরদৌস এর সহযোগিতায় কিছু স্যালাইন সংগ্রহ করা হয়েছে ও চাহিদা অনুযায়ী সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App