×

মুক্তচিন্তা

জয়তু শেখ হাসিনা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১, ১২:০২ এএম

জয়তু শেখ হাসিনা

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম ও ভালনারেবল টুয়েন্টি গ্রুপ অব ফাইন্যান্সের মিনিস্টার্সের চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু মোকাবিলা এবং জলবায়ুর ঝুঁকির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ও সহনশীলতা অর্জনের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ স্বীকৃতি দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন স্বীকৃতি পাওয়াটা একজন বাংলাদেশি হিসেবে গর্ববোধ করি। কারণ এ দেশটিই এক সময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির সঙ্গে তুলনা করেছিল। শুধু তাই নয়, আমেরিকার প্রখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং দুবার পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী নিকোলাস ডোনবেট ক্রিস্টোফ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে আমেরিকার জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমসে সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানান, আমেরিকার দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশের পদক্ষেপের দিকে নজর দিতে, যা দেশের বিভিন্ন প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়। ক্রিস্টোফ তার নিবন্ধে লেখেন, কীভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে হয় তা বিশ^কে শেখাতে বাংলাদেশের কাছে যথেষ্ট কিছু আছে। এর গোপন রহস্য হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ শিশু স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। হাইস্কুলগুলোতে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশ যেহেতু নারীদের শিক্ষিত ও ক্ষমতায়িত করেছে, এর ফলে ওই সব নারী বাংলাদেশের অর্থনীতির স্তম্ভ হয়ে উঠেছেন। গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক এবং উচ্চমাত্রায় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত উন্নয়নমূলক সংগঠনের অলাভজনক পদে কাজ করছেন শিক্ষিত নারীরা। তারা বাচ্চদের টিকা দিচ্ছেন, জনগণকে টয়লেট ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছেন, কীভাবে পড়াশোনা শিখতে হবে তা শিখাচ্ছেন, গর্ভনিরোধকের ব্যাপারে তারা ব্যাখ্যা করছেন। বাল্যবিয়েকে তারা নিরুৎসাহিত করছেন। এদিকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি করোনা মহামারি চলাকালীন সফলভাবে নেতৃত্ব দেয়া শীর্ষ তিন নারীর নাম ঘোষণা করেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপর দুজন হলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন ও বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোটলি। তিনি বলেন, আরো অনেক নারীর পাশাপাশি এ তিন নেতা আমাকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য সম্মিলিত সুন্দর ভবিষ্যৎ ও কল্যাময় বিশ্ব গড়ে তোলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সম্প্রতি বিবিসির ১০০ নারীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের দুই নারী রিনা আক্তার ও রীমা সুলতানা রিমু। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের বিচারপতির পদ অলঙ্কিত করেছেন বাংলাদেশের ৪ নারী। অনেক নারী জাতিসংঘের শান্তি মিশনে অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন বা করছেন। বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের পথিকৃৎ ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৭ সালে তিনি ‘মহিলা লীগ’ গঠনের মাধ্যমে নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২-এর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে গণজীবনের সব পর্যায়ে নারীদের সমানাধিকরণের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শকে অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী সব পর্যায়ে লিঙ্গ সমতা, নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য অসংখ্য নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করেন এবং তা বাস্তবায়নে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ফলে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষার হার ৯৯.৪%। ৬ থেকে ১০ বছরের সব শিশুকে বিনা বেতনে ভর্তি ও পড়ার সুযোগ, উৎসাহ প্রদানের জন্য মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনা মহামারি না হলে হয়তো এতদিনে তা বাস্তবায়িত হয়ে যেত। এছাড়া প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ নারী শিক্ষা বৃদ্ধির সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়া দুস্থ, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য বর্তমান সরকারের বহুমুখী প্রকল্প চালু আছে। যেমন : ভিজিএফ, ভিজিডি, দুস্থ ভাতা, মাতৃত্বকালীন ও গর্ভবতী মায়েদের ভাতা, অক্ষম মা ও তালাকপ্রাপ্তদের ভাতা, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, একটি বাড়ি একটি খামার ইত্যাদি। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সেনা, নৌ, পুলিশ, বিজিবি, সাহিত্য, শিল্পসহ সর্বোচ্চ বিচারিক কাজেও নারীদের অংশগ্রহণ ও সাফল্য এখন লক্ষণীয়। বাংলাদেশের এত উন্নতির পেছনে নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের ভূমিকা রয়েছে ব্যাপক। এভাবে দেশের ১০০% নারী যদি শিক্ষায়-দীক্ষায় এগিয়ে আসে, তাহলে অল্প সময়ে দেশ উন্নত দেশের কাতারে উঠে আসবে। সুযোগ পেলে যে নারীরা সংসার পরিচালনা ও সন্তান লালন-পালন থেকে শুরু করে রাজনীতি, শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য, ক্রীড়া, সাংবাদিকতাসহ সব ক্ষেত্রে অসামান্য সফলতা বয়ে আনতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো বাংলাদেশ। সুতরাং বাংলাদেশ থেকে শুধু আমেরিকা কেন, এমন সময় আসবে হয়তো পৃথিবীর আরো অনেক দেশ বাংলাদেশের কাছে আসবে দারিদ্র্য নির্মূলসহ বিভিন্ন শিক্ষা নিতে। তাই বলি, জয়তু শেখ হাসিনা।

গোপাল নাথ বাবুল : দোহাজারী, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App