×

জাতীয়

করোনার নমুনা পরীক্ষা কমছে যে কারণে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৪৭ এএম

দেশে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ক্রমেই বেড়ে চলছে। মৃতের সংখ্যার রেকর্ড ভাঙছে প্রতিদিন। পরিস্থিতি নিয়ে যখন উদ্বিগ্ন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী আর শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা, তখনই কমেছে করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা শনাক্তে পরীক্ষা বাড়ানোর বিকল্প নেই। করোনা মহামারির শুরুর পর থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে আসছে, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক শর্তই হলো রোগী শনাক্ত করা। পরীক্ষা যত বেশি হবে, আক্রান্ত ব্যক্তিও তত বেশি শনাক্ত হবে। এতে পরিস্থিতি সম্পর্কে যেমন ধারণা নেয়া যাবে তেমনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগও নেওয়া যাবে।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে কম পরীক্ষা হচ্ছে আফগানিস্তানে। আর সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা হচ্ছে মালদ্বীপ ও ভুটানে। বাংলাদেশে প্রতি ৩২ জনে একজনের আর আফগানিস্তানে প্রতি ১০৫ জনে একজনের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। ভারতে প্রতি পাঁচজনে একজন, শ্রীলঙ্কায় নয়জনে একজনের নমুনা পরীক্ষা হয়। মালদ্বীপ ও ভুটানে প্রতি একজনের বিপরীতে একজনেরই নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।

দেশে প্রথমবারের মতো গত ১৬ মার্চ একদিনে ২০ হাজারের বেশি করোনা পরীক্ষা হয়। ৪ এপ্রিল পরীক্ষা করা হয় ৩০ হাজারের বেশি নমুনা। এরপর নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও। দেশে করোনা সংক্রমণের পর সবচেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা হয় চলতি মাসের ১২ তারিখ। ওই দিন ৩৪ হাজার ৯৬৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এরপর এই সংখ্যা কমতে থাকে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১৬ হাজারে নেমেছে।

পরীক্ষাগারের সংখ্যা বাড়লেও নমুনা পরীক্ষা করাতে আসা মানুষের ভোগান্তি ও অপেক্ষা আগের মতোই। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাবি, দেশে দিনে ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা আছে। কিট সংকট নেই। ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও এখন এন্টিজেন পরীক্ষাও হচ্ছে। যাদের মধ্যে উপসর্গ আছে তারা আসলেই নমুনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে।

করোনার নমুনা সংগ্রহ সহজ ও রোগীদের হাতের নাগালের মধ্যে আনতে শহর অঞ্চলে প্রতি ওয়ার্ডে নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গত রবিবার কমিটির বৈঠকে রিপোর্ট দ্রুত পাঠাতে নমুনা সংগ্রহের বুথে র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষার পরামর্শ দেয়া হয়। পিসিআর টেস্ট কিটের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় বেসরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার মূল্য পুনঃনির্ধারণের পরামর্শ দেয়া হয়। এতে করে যেমন পরীক্ষার সংখ্যা বাড়বে, তেমনিভাবে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসবে ও সাশ্রয়ীমূল্যে পরীক্ষা করা যাবে। এতে করে রোগীদের পরীক্ষা ও রিপোর্ট দ্রুত প্রদান করে আইসোলেশন নিশ্চিত করা যাবে। যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পহেলা এপ্রিল ২৮ হাজার ১৯৮টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয় ৬ হাজার ৪৬৯ জন। ২ এপ্রিল ২৯ হাজার ৩৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৬ হাজার ৮৩০ জন, ৩ এপ্রিল ২৪ হাজার ৫৪৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার ৬৮৩ জন, ৪ এপ্রিল ৩০ হাজার ৭২৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ হাজার ৮৭ জন, ৫ এপ্রিল ৩০ হাজার ২৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ হাজার ৭৫ জন, ৬ এপ্রিল ৩৪ হাজার ৩১১টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ হাজার ২১৩ জন, ৭ এপ্রিল ৩৪ হাজার ৬৩০টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ হাজার ৬২৬ জন, ৮ এপ্রিল ৩৩ হাজার ১৯৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৬ হাজার ৮৫৪ জন, ৯ এপ্রিল ৩১ হাজার ৬৫৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ হাজার ৪৬২ জন, ১০ এপ্রিল ২৬ হাজার ৭৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার ৩৪৩ জন, ১১ এপ্রিল ২৯ হাজার ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার ৮১৯ জন, ১২ এপ্রিল ৩৪ হাজার ৯৬৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ হাজার ২০১ জন, ১৩ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৬ হাজার ২৮ জন, ১৪ এপ্রিল ২৪ হাজার ৮২৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার ১৮৫ জন, ১৫ এপ্রিল ১৯ হাজার ৯৫৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৪ হাজার ১৯২ জন, ১৬ এপ্রিল ১৮ হাজার ৯০৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৪ হাজার ৪১৭ জন, ১৭ এপ্রিল ১৬ হাজার ১৮৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৪৭৩ জন, ১৮ এপ্রিল ১৯ হাজার ৪০৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৬৯৮ জন এবং গতকাল ২৪ হাজার ১৫২টি নমুনা পরীক্ষায় ৪ হাজার ২৭১ জন রোগী শনাক্ত হয়।

লকডাউনের কারণে নমুনা পরীক্ষা কমছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া কেউ কেউ টেকনোলজিস্ট সংকটকেও দায়ী করছেন। ঢাকার সব হাসপাতালে এন্টিজেন পরীক্ষা চালু করলে রোগীর ভোগান্তি কমবে বলেও তারা মনে করছেন।

তবে লকডাউনের কারণে নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে বলে মনে করছেন না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মিরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, লকডাউনের কারণে নমুনা পরীক্ষা কমলে টিকা কেন্দ্রগুলোতে টিকা গ্রহীতার সংখ্যাও কম থাকত। তা কিন্তু হচ্ছে না। তার মতে, প্রতিদিন যে সংখ্যাক নমুনা পরীক্ষা হতো তার একটি উল্লেখযোগ্য একটি সংখ্যা ছিল বিদেশগামীরা। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় তারা নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। তাছাড়া সংক্রমণের হারও কিছুটা কমছে। তাই নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের ৩৪টি জেলায় এখনো করোনার আরটি-পিসিআর নমুনা পরীক্ষাকেন্দ্র নেই। এখন যে ১২২টি আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগারে পরীক্ষা চলমান, এর ৭০টি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আর ৫২টি সরকারিভাবে চালু আছে। সব জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার থাকলে আরো বেশি নমুনা পরীক্ষা হতো। এদিকে সরকার চলতি বছরের মার্চ মাসে সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও করোনার এন্টিজেন ও এন্টিবডি পরীক্ষার অনুমোদন দেয়। কিন্তু সরকারিভাবে এন্টিজেন পরীক্ষা চলমান থাকলেও এন্টিবডি পরীক্ষার বিষয়ে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (এনসিডিসি) পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় এন্টিজেন পরীক্ষা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এন্টিবডি পরীক্ষার মূল্য এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আর এন্টিবডি পরীক্ষার বিষয়ে বেসরকারি পর্যায় থেকে এখনো কেউ কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App