×

মুক্তচিন্তা

লকডাউন কার্যকর ও করোনা নিয়ন্ত্রণের উপায়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১২:০৬ এএম

জীবন ও জীবিকা ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি ক্রান্তিকালের সব থেকে জটিল ও সংবেদনশীল। এটি খুব পরিষ্কার যে, চরমপন্থা অবলম্বন করে করোনাযুদ্ধে বিজয়ী হওয়া কঠিন হবে। শুধু জীবন নিয়ে ভেবে জীবন রক্ষা করা যাবে না অথবা শুধু জীবিকা নিয়ে ভেবেও জীবন ও জীবিকার ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে না। ভাবতে হবে সমন্বয় করে, ভাবতে হবে যুগপৎভাবে। কারণ জীবন ও জীবিকা একটি আরেকটির প্রতিচ্ছায়া, বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। জীবন ও জীবিকার ভারসাম্য রক্ষার জন্য আমাদের অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড নিদেনপক্ষে পাশের দেশ শ্রীলঙ্কা এবং ভিয়েতনামের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে। সর্বোপরি জীবন ও জীবিকাকে সচল রাখতে হলে জীবনকে সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি জীবিকাকেও সুরক্ষা দিতে হবে। সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় আঁতকে ওঠার মতো বিষয় উঠে এসেছে ‘চলমান করোনা মহামারিতে দেশে মোট শ্রমশক্তির তিন শতাংশেরও বেশি লোক কর্ম হারিয়েছেন এবং প্রায় দেড় কোটি লোক মহামারির প্রভাবে নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।’ তারা আরো জানিয়েছে, চাকরি হারানোদের মধ্যে ছয় দশমিক সাত শতাংশ শহরাঞ্চলে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত ছিলেন এবং ২০২১ সাল শেষ হতে হতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মহীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে কীভাবে জীবন-জীবিকার ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। করোনা সংক্রমণরোধ এবং মহামারির পরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিপর্যয় ঠেকাতে আমাদের স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আসন্ন বাজেটে এর প্রতিফলন দেখতে চাই। যদিও বাজেট প্রণয়নে আরও সময় লেগে যাবে তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক ফান্ড ব্যবস্থাপনা জরুরি বলে অনেকেই মত দিচ্ছেন। তবে কঠোর লকডাউন অবস্থায় জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে বেশ কিছু সুপারিশ করা যেতে পারে, যা স্বল্পমেয়াদে আমাদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তা করতে পারে। করোনাকালে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছে কাজ হারানো মানুষ, খেটে খাওয়া দিনমজুর, দোকান কর্মচারী, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক-শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, পাঠাও চালক, ভিখারি ইত্যাদি অতি দরিদ্র এবং দরিদ্র মানুষগুলো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিম্নবিত্তের মানুষজনও আছে, যারা চাপা কষ্টের মধ্যে দিন পার করছেন। কাজ না থাকায় তাদের উপার্জন নেই। আর উপার্জন না থাকায় ক্রয়ক্ষমতা প্রায় শূন্যের কোটায়। ফলে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী মজুত থাকা সত্ত্বেও তারা খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারছেন না। দুটি বিষয় এখানে ভেবে দেখা যেতে পারেÑ এক. দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী মজুত আছে; দুই. সরকারের কোষাগারে টাকা মজুত আছে। টাকা আছে কিন্তু সার্কুলেশনে যেতে পারছে না। অর্থাৎ এই টাকা অচল হয়ে পড়ে আছে। অচল টাকাকে কীভাবে সচল করা যায় তা নিয়ে ভাবা যেতে পারে। মানুষের কাছে টাকা কীভাবে পৌঁছানো যায় সেই ব্যবস্থার কথা ভাবা যায়। মানুষকে অনুদান দিয়ে, ঋণ দিয়ে তাদের কাছে টাকা পৌঁছানোর কথা ভাবা যায়। ধরুন আগে যিনি যে পেশায় কাজ করতেন এবং যে পরিমাণ আয় করতেন সেই পরিমাণ টাকা তাকে অনুদান (বা কর্জে হাসানা, যখন উনি সক্ষমতা অর্জন করবেন তখন পরিশোধ করবেন) বা ঋণ হিসাবে দেয়া যেতে পারে। সেটি তিন মাস বা ছয় মাসের জন্য হতে পারে। এই পন্থা অবলম্বন করে ‘কঠোর লকডাউন’ সহজে কার্যকর করা যায়। আর ‘কঠোর লকডাউন’ পনেরো বা এক মাস কার্যকর করা গেলে আশা করা যায় করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারব। প্রথমে দেশব্যাপী এটি করা না গেলে এডহকভাবে করা যায়। তবে এক্ষেত্রে শতভাগ সততার সঙ্গে কাজটি করতে হবে। পরীক্ষিত সৎ মানুষদের দিয়ে এই কাজ করাতে হবে, তবেই এর সফলতা আশা করা যায়। আনোয়ার ফারুক তালুকদার ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App