×

জাতীয়

বিষধর সাপ ও তার বিষদাঁত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩৭ পিএম

বিষাক্ত সাপের বিষদাঁত ভাঙা শুরু হয়েছে। বিষাক্ত থেকে বিষাক্ততর হচ্ছিল এই সাপ। পোষ মানানোর চেষ্টা ব্যর্থ। যারা পোষ মানাতে চেয়েছিলেন, তারা জানতেন না, সাপকে কখনো পোষ মানানো যায় না। কিংবা জানলেও জেনেশুনে পোষ মানানোর ভুল নীতি অনুসরণ করেছিলেন। আবার সাপটি যদি বিষধর হয়, তাহলে তো আরো ভয়ঙ্কর। ছোবল যখন মারবে, তখন তা হবে অত্যন্ত বিষময়। বিষের নীলে বিষাক্ত হবে পুরো শরীর। সমাজ। দেশ।

২০১৩ সালে সাপটি ফণা তুলেছিল। লণ্ডভণ্ড হয়েছিল আমাদের প্রিয় এই নগর। আগুনের লেলিহান শিখা আর সাপের ফণার ফিসফিস ভয়ঙ্কর শব্দে সন্ত্রস্ত নগরবাসী। ভয়ে-আতঙ্কে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন শহরের মানুষ। অজানা শঙ্কায় অনেক নেতার চেহারা পাল্টে গিয়েছিল বিস্ময়করভাবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত চেহারা দেখে অনেকে চিনতেই পারছিলেন না নিজেকে। ভাবছিলেন, আমার ক্ষমতার পেন্ডুলাম কেন এভাবে দুলছে? অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় তাদের কপালে ভাঁজ! কি হবে ক্ষমতা, টাকা-পয়সা, বিত্তবৈভব- যদি গণেশ উল্টে যায়? যাই হোক, রাতের আঁধারে ফণা তোলা এই বিষধর সাপকে তাড়ানো সম্ভব হয়েছিল কঠোর এক সিদ্ধান্তে। লাঠির আঘাতে সাপ পালিয়েছিল ঠিকই কিন্তু মরেনি। আপাত নিশ্চিন্ত থাকা গেল। তবে এ কথা সত্য যে, সাপটা কিন্তু রয়েই গেল।

সুধী মহলে এই নিয়ে নানা আলোচনা। সাপের সঙ্গে তো আর বসবাস চলে না। অথবা সাপের লেজে পা দিয়েও কোনো লাভ নেই। এই সাপকে উপড়ে ফেলতে হয় সমূলে। এই সমাজ, বিষাক্ত সাপের সমাজ নয়। এই বিষাক্ত সাপকে তাড়াতেই ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। কয়েক লাখ মা-বোন নির্যাতিত হয়েছেন। সাপ তাড়াতে গিয়ে যে দেশে রক্তগঙ্গা বয়ে গেছে, সে দেশে সাপের সঙ্গে বসবাস কি করে করা সম্ভব? ১৯৭১ সাল ছিল এই বিষধর সাপ তাড়ানোর বছর। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরেই তো পরাজিত সেই বিষধর শক্তি। তারপর মানুষ স্বপ্ন দেখেছে নির্মল মুক্ত হাওয়ার। অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক এই মুক্ত পরিবেশ, যেখানে আর কোনো দিন সাপের লালন হবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত সেই বিষধর সাপ অগোচরে, আড়ালে তৈরি হচ্ছিল ছোবল মারার জন্য এবং ছোবল মেরেছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক- এই দুইয়ের যুক্ত ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত জাতির পিতার পরিবার। ৩২ নম্বরের সিঁড়িতে রক্তের স্রোত সেই ছোবলের সাক্ষী। জেলখানার ভেতরে ঢুকেও সাপ ছোবল মারল রাষ্ট্রের নির্মাতাদের। তারপর টানা কয়েক দশক সেই বিষধর সাপ বেড়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় ও আশ্রয়ে। সমাজে, রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তখন অবাধ বিচরণ এই বিষধর শক্তির। সুযোগ পেলেই ফণা তোলে, ছোবল মারে। ছোবল মেরেছে রামু, নাসিরনগর, রংপুর ও দিনাজপুরে। সম্প্রতি এই সাপের উদ্যত ফণায় ক্ষত-বিক্ষত ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, হাটহাজারী, মহেশখালী আর সালথা। এরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সুযোগ পেলেই লণ্ডভণ্ড করে দেয় সবকিছু। ছোবল মারে মন্দিরে, ছোবল মারে মসজিদে, সুরসম্রাট আলাউদ্দিন ললিতকলা কেন্দ্রে, পাবলিক লাইব্রেরিতে, মা আনন্দময়ীর আশ্রমে বা বায়তুল মোকাররমে। তাদের ছোবল থেকে রেহাই পায় না আওয়ামী লীগ অফিস, উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়, ভূমি অফিস আর হাজারো দলিল-দস্তাবেজ। মানুষ বুঝতে পারেন বিষধর সাপকে লালন-পালন করার পরিণতি কী। রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে এই বিষধর সাপ। বলে, এই সাপের কথায় দেশ চলতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কালিমা লেপন করতে বিষাক্ত ছোবল মারে এই ২৬ মার্চে। সুবর্ণজয়ন্তীর আলোকচ্ছটার বাতি নিভিয়ে দিতে চায় এই বিষধর সাপ। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, দেশে কি সাপ তাড়ানোর কেউ নেই? আমরা কি বিষধর সর্পরাজ্যে বসবাস করছি? স্বাধীন ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের কী এই পরিণতি? নানা সমালোচনা- কেন সাপের সঙ্গে পোষ মানিয়ে বসবাসের এই নীতি গ্রহণ করা হলো? কি লাভ হলো তাদের ঘুষের দুধ-কলা খাইয়ে? তারা কি পোষ মানে? কোনো নজির আছে? ইতিহাস কিংবা মিথলজি কি বলে? লোহার বাসরঘর বানিয়েও লক্ষীন্দরকে বাঁচানো যায়নি। ছোবল মারতে চাইলে ছিদ্র খুঁজে তারা বের করবেই। গ্রিক মিথলজি বলে, এক বাটি দুধ দিলে সাপ খেতে আসবে। আবার সুযোগ পেলে এই সাপ ছোবলও মারবে। এখানেও তাই দুধ-কলা খেয়েছে, আবার সুযোগ বুঝে ছোবলও মারছে।

তাই এবার সাপের বিষদাঁত ভেঙে দেয়ার কৌশল নেয়া হচ্ছে। প্রথমে ছোটখাটো কয়েকটি দাঁত ভেঙে দুর্বল করা হয়েছে সাপকে। তারপর বিষ ভর্তি বড় দাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। অন্যথায় নতুন নতুন বিষদাঁত গজানোর আশঙ্কা থাকে। সমাজ থেকে এই বিষধর সাপ উপড়ে ফেলতে না পারলে আমরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়তে পারব না। কারণ মুক্তিযুদ্ধ আর সাম্প্রদায়িকতার বিষধর সাপ তো আর একসঙ্গে যায় না। তবে কৌশল ঠিক করার আগে ভাবতে হবে অনেক কিছু। কথিত আছে সূর্যোদয়ের সময় একটি সাপের মাথা কেটে ফেললেও সূর্যাস্ত পর্যন্ত সাপের দেহ জীবিত থাকে। তাই তাকে সমূলে উৎপাটন করতে হলে তার পূর্ণাঙ্গ মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেয়াটাই ভালো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App