×

আন্তর্জাতিক

পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নজর বিজেপি-তৃণমূলের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১২:৪৫ পিএম

পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নজর বিজেপি-তৃণমূলের

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আট দফার মধ্যে পঞ্চম দফার ভোট শেষ হয়ে গেল গত শনিবার। বাকি তিন দফার ভোটে সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া। রাজ্যটির ২৯৪ আসনের মধ্যে গত শনিবার পর্যন্ত ১৮০টি আসনের ভোট হয়েছে। যার ভেতরে বিজিপি দাবি করেছে ১২২ থেকে ১২৫টি আসন পাবে। উল্টোদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তার দল তৃণমূল কংগ্রেস পাবে দুই-তৃতীয়াংশ আসন। করোনার দোহাই দিয়ে নির্বাচনী প্রচারসভা করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাম দলগুলো। নির্বাচনী প্রচার কর্মসূচি বাতিল করেছেন কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী। এ রকম পরিস্থিতিতে ভোটে কে কার থেকে এগিয়ে তা সাধারণ ভোটারদের বোঝা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। আগামী বৃহস্পতিবার সেখানে ষষ্ঠ দফার ভোট। এরপরে আরো দুই দফায় ভোটগ্রহণ করে আগামী ২ মে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

জানতে চাইলে কলকাতার সংবাদভিত্তিক চ্যানেল আর প্লাসের সাংবাদিক সত্যজিৎ চক্রবর্তী ভোরের কাগজকে বলেন, বিজেপি-তৃণমূল দুটো দলই বলছে তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। একদিকে তিনদলের জোট, অন্যদিকে একক শক্তি নিয়ে দুটো দল একা লড়াই করছে। ভোটের আগে ত্রিমুখী লড়াইয়ের কথা বলা হলেও ৫ দফার ভোটের পর এসে দেখা যাচ্ছে মূল লড়াই বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে। বাম-কংগ্রেস ও আইএসএফ ছিটকে পড়েছে। বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করছে, তারাই ক্ষমতায় আসছে। এটা ঠিক ভোটের ময়দানে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতানেত্রীদের মুখ যতটা অন্ধকার দেখা যাচ্ছে ঠিক ততটাই উজ্জ্বল ও স্বস্তি দেখা যাচ্ছে বিজেপির নেতাকর্মীদের মুখে। তবে এই আলো-আঁধারির খেলার মধ্যেও বিজেপি-তৃণমূল দুদলের সভা সমাবেশে কিন্তু ভিড় হচ্ছে সমান সমান। সবমিলিয়ে দুদলই সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবি করলেও ২ মে ফলাফল বের হওয়ার আগে বলা যাচ্ছে না ‘মসনদ’ কার হচ্ছে।

রাজ্যটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বিজেপির জয় ‘নিশ্চিত’। পাঁচ দফা ভোটের পর বিজেপি কত আসন পেতে চলেছে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে গতকাল রবিবার বিজেপির সাবেক সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ শেষ হওয়া পাঁচ দফার ভোটে বিজেপি কত আসন পাবে তা ঘোষণা করেছেন। যদিও আসন সংখ্যায় কিছুটা দ্বিমত রয়েছে দুই নেতার কথায়।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, পাঁচ দফার ভোটে ১৮০ আসনের মধ্যে বিজেপি ১২৫টিতে জিতবে। খেলা হবে বলে যারা শুরু করেছিল তারা এখন খেলা ছেড়ে চলে গিয়েছে। তার কথায়, একেবারে হিসাব করে ২শ সিট পাচ্ছে বিজেপি। যেমন চাইছি তেমনই নির্বাচন হচ্ছে। ওরা নির্বাচন ছেড়ে দিতে চাইছে। বলছে, একসঙ্গে ভোট করে দাও। আমরা সভা করব না। আসলে মিটিং করতে গেলে খরচা আছে। বক্তা লাগবে, নেতা লাগবে। কেউ বের হচ্ছে না। তাই এখন বলছে সব গুটিয়ে দাও।

অন্যদিকে গতকাল পশ্চিমবঙ্গের জামালপুরে নির্বাচনী সভা থেকে অমিত শাহ বলেছেন, দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বিদায় নিশ্চিত। পাঁচ দফার ভোটে ১২২টি আসন পাবে বিজেপি। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে হেঁটে যেতে পারেন তার জন্য ২ মে-র আগে ‘দিদি’ সেরে উঠুন বলেও কটাক্ষ করেন অমিত। দিদির গুণ্ডারা কিছু করতে পারেনি এই ৫ দফায়। তাই দিদি হতাশায় ভুগছেন বলেও মন্তব্য করেন অমিত শাহ। প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পায়ে চোট লাগায় বর্তমানে হুইল চেয়ারে ঘুরছেন।

এদিকে চতুর্থ দফার ভোটে শীতল কুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিকাণ্ডের পর গত শনিবার পঞ্চম দফার ভোটে রাজনৈতিক দলের ক্যাডাররা কী করে, কতটা সাহস দেখায় তা পর্যবেক্ষণের অপেক্ষায় ছিল রাজ্যবাসী। ওইদিনের ভোটে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা চতুর্থ দফার মতো বেপরোয়া হতে সাহস দেখাননি। তৃণমূলকে ভোটের ময়দানে কার্যত অসহায় ও দিশাহারা দেখা গিয়েছে। এদিন বিক্ষিপ্ত ঠেলাঠেলি, মারামারি হামলার ঘটনা বাদ দিলে নির্বাচনটি ছিল শান্তিপূর্ণ। ভোটাররাও নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে করোনার চিত্র যখন ঊর্ধ্বমুখী, আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে তখন ৮০ শতাংশের বেশি ভোট কর্মী কার পক্ষে তা নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল দুই শিবিরকেই ভাবিয়ে তুলছে। তাই শেষ তিন দফার ভোটে কার্যত ‘মাইন্ড গেমে’ নেমেছে তৃণমূল ও বিজেপি। আর বামেরা কার্যত ভোট প্রচার যুদ্ধ থেকেই সরে গেছে।

এর ফলে ভোটাররাও আগাম সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর যাই হোক এবারের ভোটে বাম-কংগ্রেস নয়। লড়াই হবে বিজেপি-তৃণমূলে। করোনার বাড়বাড়ন্তে বামেরা ভোট প্রচার করবে না বলে জানিয়েছে। আর কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী করোনার জন্য পশ্চিমবঙ্গে আর ভোট প্রচারে আসবেন না বলে জানিয়েছেন। গতকাল রবিবার তিনি নিজেই টুইট করে তা জানিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছেও বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বড় জনসভা করা উচিত কিনা ভেবে দেখার আর্জি জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তৃণমূল তো বলেছিল শেষ ৩ দফার ভোট একবারে হয়ে যাক। তৃণমূল তো চাইছে ব্যাপারটাকে কমিয়ে আনতে। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি সমস্ত কাজকর্ম ছেড়ে প্রতিদিন এখানে এসে সভা করতে শুরু করেন তাহলে তৃণমূল কী করবে? আর বামেদের সভায় লোক হচ্ছে না, তাই তারা বন্ধ করতে পারলে বাঁচে। রাহুল গান্ধী এলেন কী না এলেন তাতে পশ্চিমবঙ্গের কিছু যায় আসে না। রাহুল গান্ধী কী বললেন না বললেন সেটা অপ্রাসঙ্গিক।

বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, বামেদের সভায় ২৫-৩০ জনের বেশি লোক হয় না। আর রাহুল গান্ধীর সভায় মাঠ ভরানো তো দূরের কথা, ধারে কাছেও লোকজন থাকে না। তাই তারা সভা করলেও যা, না করলেও তা। বাম কংগ্রেসকে নিশানা করে সায়ন্তনের আরো কটাক্ষ, তারা যে জনগণের কথা ভেবে সভা করছেন না তা নয়, আসলে তাদের একটা অজুহাত। দরকার ছিল নির্বাচনী যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যাওয়ার, তাই তারা পালিয়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে বিজেপির এই মুহূর্তে বড় সভা বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানিয়ে দেন তিনি।

তৃণমূল ও বিজেপির এই অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছে বাম-কংগ্রেস। এ প্রসঙ্গে সিপিআইএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, কাউকে খুশি করার জন্য নয়, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই কারণেই করোনার সময়ে বড় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি করছি না। আর আমাদের ক্ষমতা আছে কিনা সেটা তো ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডে দেখিয়ে দিয়েছি। এক্ষেত্রে মানুষ মারা গেলেও তৃণমূল এবং বিজেপির কিছু যায় আসে না, বরং তাদের কাছে ভোটটাই আগে বলে মন্তব্য করেন অশোকবাবু। পাশাপাশি কার্যত একইভাবে তৃণমূল ও বিজেপিকে নিশানা করে কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নানও বলেন, ওদের কাছে মানুষের জীবনের দাম নেই। তাই ওরা এমন কথা বলতে পারে। আমাদের কাছে মানুষের জীবনের দাম সবচেয়ে বেশি, তাই আমরা গুরুত্ব দিই। আমরা ও বামপন্থিরা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলি না। আমাদের সঙ্গে ওদের আদর্শগত তফাৎ আছে। মানুষ বিচার করবেন কোনটা ঠিক।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনার বাড়বাড়ন্ত হোক বা অন্য কারণেই হোক বাম-কংগ্রেস প্রচারযুদ্ধ থেকে সরিয়ে নেয়ায় নতুন করে ‘মাইন্ডগেমে’ নেমেছে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস। একদিকে যেমন বিজেপির তারকা প্রচারক নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা, স্মৃতি ইরানি, যোগী আদিত্যনাথ, দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীদের মতো নেতারা দেদার সভা করে যাচ্ছেন। উল্টোদিকে তৃণমূল কংগ্রেসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া তারকা প্রচারক বলতে গেলে বিনোদন জগতের অভিনেতা/অভিনেত্রীরা। এরকম পরিস্থিতিতে ভাসমান ভোটারের ভোট পেতে তৎপর দুপক্ষই। সেক্ষেত্রে অবশ্য এগিয়ে বিজেপি। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি থেকে পিছিয়ে বলে জানা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App