×

জাতীয়

ইলিয়াস নিখোঁজ ইস্যুতে নতুন অস্বস্তিতে বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৩৪ এএম

ইলিয়াস নিখোঁজ ইস্যুতে নতুন অস্বস্তিতে বিএনপি

ইলিয়াস আলী

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের এক বক্তব্যে মোড় ঘুরে গেছে ১০ বছর ধরে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ইস্যুটির। ‘ইলিয়াস আলীকে সরকার গুম করেনি, এর পেছনে দলেরই অভ্যন্তরীণ ‘লুটপাটকারী, বদমাইশগুলো আছে’- মির্জা আব্বাসের এমন বক্তব্য জন্ম দিচ্ছে নানা প্রশ্নের। দলটির ভেতরে-বাইরে দানা বাঁধতে শুরু করেছে- সন্দেহ ও অবিশ্বাস্য। বিরাজ করছে গুমোট অস্বস্তি। অন্যদিকে দলের ভেতর চাপে পড়ে এখন বক্তব্য ‘কাটপেস্ট’ করা হয়েছে- মিডিয়ার ঘাড়ে এমন দোষ চাপিয়ে দায় এড়াতে চাইছেন মির্জা আব্বাস।

এক ভার্চুয়াল সভায় গত শনিবার ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের বিষয়ে নিজ দল বিএনপিকে দোষারোপ করেন মির্জা আব্বাস। এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে দলের ভেতরে কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের ‘চিহ্নিত’ করার দাবি তোলেন তিনি। এমনকি প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্রের দিকেও আঙুল তোলেন মির্জা আব্বাস। তার এই বক্তব্যের নেপথ্যে কী? বক্তব্য কি তার পরিকল্পিত?- এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বিএনপি নেতারা।

সূত্র জানায়, ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান শেষ হলেই সিনিয়র নেতারা ফোন করে এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা চান আব্বাসের কাছে। এমনকি ওই দিন সন্ধ্যায় দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা উঠে। তবে সেখানে মির্জা আব্বাস উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অনেকটা গম্ভীরভাবেই মির্জা ফখরুলকে বলেন, ‘আব্বাস সাহেব কীসের ভিত্তিতে এসব বলেছেন তাকে ক্লিয়ার করতে বলবেন’। সূত্র জানায়, দলের চাপের মুখেই নিজের বক্তব্য পাল্টে ফেলেন আব্বাস। গতকাল রবিবার দুপুরে গণমাধ্যমকে নিজ বাসভবনে ডেকে ঠিক তাদের ঘাড়েই দোষ চাপান বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা। সংবাদ সম্মেলনে আব্বাস বলেন, মিডিয়ায় আমার বক্তব্য ‘কাটপেস্ট’ করা হয়েছে। ইলিয়াস আলীকে সামনে রেখে হঠাৎ করে কেন আমাকে টার্গেট করা হলো আমি জানি না। আমার নামে যে বক্তব্য

প্রচার করা হয়েছে তা আমার নয়। এর দায়িত্ব আমার এবং আমার দলের নয়। তিনি বলেন, একটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছেÑ ইলিয়াস আলী গুমের জন্য বিএনপির কিছু নেতা দায়ী। এ কথা কি আমি বলেছিÑ কেউ কি প্রমাণ করতে পারবে। অসম্ভব, সম্ভব নয়। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাইÑ আমার কথা বিকৃত করা হয়েছে। আব্বাস বলেন, ১৭ এপ্রিলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছে এই সংবাদ সম্মেলনে আসতে। বিএনপি নেতারা ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে- আমি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়ে এমন কথা বলতে পারি? আমি এমন কোনো কথা বলিনি। আমার বক্তব্য কাটপেস্ট করে সামনের অংশ পেছনের অংশ বাদ দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো লিখেছে। হঠাৎ মিডিয়া কেন আমাকেই টার্গেট করে এ ধরনের কাজ করল, তা আমি জানি না।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে সিনিয়ররা মুখে কুলোপ এঁটেছেন। মধ্যম সারির নেতাদের মন্তব্যÑ মির্জা আব্বাসের বক্তব্য পুরোপুরি পরিকল্পিত। কার ইঙ্গিতে, কী ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন বক্তব্যে তা পরিষ্কার নয়। তাদের মতে, দলকে যেহেতু দোষারোপ করেই ফেলেছেন, পুরো বিষয়টি তার খোলাসা করা উচিত ছিল। নেতারা বলেন, অনেক ঝড়ঝাপটা কাটিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। নেতারা বলেন, সরকারের জুলুম-অত্যাচারের মুখেও সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন দায়িত্বশীলরা, সেই মুহূর্তে মির্জা আব্বাসের বক্তব্য নিঃসন্দেহে নতুন উদ্বেগ তৈরি করবে। এটা ইচ্ছাকৃত প্রতিপক্ষের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার মতো ঘটনা হলো। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি কাকে ফাঁসিয়েছেন, কাকে চিহ্নিত করার বা রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন, সেটা তিনি নিজেই বলতে পারবেন। তবে এর মাধ্যমে দল নতুন কোনো জটিলতায় পড়তে যাচ্ছে কিনাÑ এ নিয়েও সন্দেহ অনেকের। জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই বিষয়টি এখন সবাই জানে। এটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই। এটা আব্বাসের একান্তই নিজস্ব বক্তব্য। এটা বিএনপির বক্তব্য নয়, তাই এ বিষয়ে যা বলার তিনি নিজেই বলবেন। আমার কিছু বলার নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, মির্জা আব্বাস সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে একটি ব্যাংকের মালিকানা চালাচ্ছেন। এছাড়া তার বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। তার নামে তেমন কোনো মামলা নেই। সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে না চললে বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন রাজার হালে থাকা কীভাবে সম্ভব! মির্জা আব্বাসের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, গুলি একবার বন্দুক থেকে বের হয়ে গেলে আর ভেতরে ঢুকে? অবশেষে আক্ষেপ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ইটস ভেরি ডিফিকাল্ট টু আন্ডারস্ট্যান্ড’ এরা দলকে একেবারে শেষ করে দিল। এদিকে বিএনপিতে কেউ মনে করছেনÑ মির্জা আব্বাস প্রকাশ্যে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে সংস্কারপন্থিদের দিকে আঙুল তুলেছেন। এতে তিনি ইলিয়াস আলীর অনুগামীদের একদিকে যেমন সন্তুষ্ট করেছেন, অন্যদিকে সরকারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বিএনপির কাঁধে চাপিয়ে সরকারকেও সন্তুষ্ট করেছেন। ইলিয়াস আলীর প্রতি দলের নেতাকর্মীদের সহানুভ‚তি কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চাইছেন। অন্যদিকে আব্বাস অনুসারিদের দাবি- মির্জা আব্বাস স্পষ্টবাদী একজন মানুষ। তিনি যা বলেছেন ঠিকই বলেছেন। তার বক্তব্যে স্পষ্ট, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী শক্তির অপতৎপরতা দলের মধ্যে রয়েছে। তিনি হয়তো গুছিয়ে বলেননি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এ বিষয়ে বলেন, মির্জা আব্বাস যা বলেছেন স্পষ্ট করেই বলেছেন। এর বাইরে কিছু জানার থাকলে তার থেকে জেনে নেয়াই ভালো। কারণ আমি ওই সভায় শেষ পর্যন্ত ছিলাম না। তবে আমি সংবাদপত্রে খবর পড়ে দেখেছি, তার বক্তব্য আক্রমণাত্মক মনে হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App