×

জাতীয়

লকডাউনে মানুষের পাশে নেই রাজনীতিকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:১৯ এএম

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে দ্বিতীয় দফার ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ জারি করা হয়েছে। শুধু কাঁচাবাজার ও জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস আদালত ও সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বন্ধ আছে সবধরনের যানবাহন চলাচলও। তবে শর্তসাপেক্ষে চালু আছে তৈরি পোশাকশিল্প কারখানাগুলো। দ্বিতীয় দফায় টানা দুই সপ্তাহের এ লকডাউনে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকের ঘরে নেই ঠিকমতো তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা। বাধ্য হয়েই বিধিনিষেধ অমান্য করে কাজের সন্ধানে যেতে হচ্ছে তাদের। চরম অসহায়ত্বের মধ্যে রয়েছেন শহরের ভাসমান জনগোষ্ঠী। খাবারের সন্ধানে শহরের মোড়ে মোড়ে ভিড় করছেন তাদের অনেকে। বিগত বছর লকডাউনে সরকারি সহযোগিতাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকরা অসহায় মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছেন। করোনায় মৃতদের লাশ দাফনও করেছেন কেউ কেউ। করোনা প্রতিরোধকসামগ্রী মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদেরই মাঠে বেশি সক্রিয় দেখা গেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী তৎপরতা ছিল। কিন্তু এবার কারো তৎপরতা নেই খুব একটা। এমনকি মানুষকে সচেতন করতেও নেই কোনো বেসরকারি উদ্যোগ। লকডাউন বাস্তবায়নে শুধু পুলিশই তৎপর। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশকে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে পরিস্থিতি সামাল দিতে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা গত বছর খাবারসামগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তালিকা করে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। ঢাকার সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদেরও কেউ কেউ মাঠে ছিলেন। মানুষকে সহায়তা দিয়েছেন। অনেকে রান্না করা খাবারও বিতরণ করেছেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও খাবার ও করোনা প্রতিষেধকসামগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এবছর কারও তৎপরতা নেই। যা আছে তাও নামমাত্র। রমজান মাস চলায় এ সংকট আরো প্রকট হয়েছে। সরকারি ত্রাণও সে রকম দেয়া হচ্ছে না। তবে হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্বল্প ও ন্যায্য দামে ঢাকাসহ সারাদেশেই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি। লকডাউন ও রমজানে টিসিবির পণ্য বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণ হারে। কিন্তু তাও কেনার সামর্থ্য নেই অনেকের। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৩ এপ্রিল জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর আমি দরিদ্র-নি¤œবিত্ত মানুষের সহায়তার জন্য কার্যক্রম নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। পল্লী অঞ্চলে কর্মসৃজনের জন্য ৮০৭ কোটি ৬৫ লাখ এবং রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৬৭২ কোটির বেশি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। এতে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ উপকৃত হবেন। এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে থাকারও নির্দেশ দেন।

শুধু আওয়ামী লীগ নয়, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ ১৪ দল ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদেরও এবার মাঠে দেখা মেলেনি। এসব দলের সিনিয়র নেতারা এখন অনেকটাই ঘরবন্দি। তবে স্বেচ্ছাসবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সীমিত পরিসরে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ ‘মানবতার ভ্যান’ নামে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। আর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা খাবার রান্না করে ঢাকার ভাসমান মানুষের মধ্যে ইফতার ও সেহরির সময় তা পৌঁছে দিচ্ছেন। এছাড়া যুবলীগ করোনা প্রতিষেধকসামগ্রী ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প চালু করেছে। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি করোনা প্রতিষেধকসামগ্রীসহ ইফতারসামগ্রী বিতরণ করেছে। স্বাস্থ্য উপকমিটি ফ্রি টেলি মেডিকেল সেবা চালু করেছে। তবে তৎপরতা চোখে পড়েনি বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারাও নীরব। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ত্রাণ ও মানবিক সেবার বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি রয়েছে। অচিরেই তা দৃশ্যমান হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, এটা ঠিক ওই অর্থে এবার খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে শুধু রাজনৈতিক নেতারাই নয়, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সব জনপ্রতিনিধি এবং সব রাজনৈতিক দল তার দায়িত্ববোধ থেকে নিজ নিজ অবস্থানে মানুষের সেবায় কাজ করবে- এটাই প্রত্যাশা।

আর সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘লকডাউন’ আইন প্রয়োগে বিধিবদ্ধ জনবল দিয়েই সম্পন্ন করছে সরকার। রাজনৈতিক কর্মীরা লকডাউন মানতে জনগণকে বাধ্য করতে গেলে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ত্রান ও মানবিক সেবার বিষয়ে দলের নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে। অচিরেই তা দৃশ্যমান হবে। অনেক স্থানে ইতোমধ্যেই আমাদের দলের নেতারা মানব সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। আওয়ামী লীগ সব সময় মানুষের সেবাকে রাজনীতির প্রধানতম কাজ হিসেবে বিবেচনা করে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিএনপিকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না কেনো- এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে মাঠে নামবে বিএনপি। গত সপ্তাহ থেকে এই কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে দলে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এছাড়া অসংখ্য নেতাকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফখরুল বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করা হয়েছে। কিন্তু খন্দকার মোশাররফ নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। তিনি এখন কিছুটা সুস্থ। তাই সেলের কার্যক্রম শুরু করা হবে। এই পর্যবেক্ষণ সেলের মাধ্যমে সারাদেশের দলের পক্ষ থেকে করোনা কার্যক্রম চালানো হবে।

বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় টেউ মোকাবিলায় আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ‘সর্বদলীয় কমিটি’ গঠনের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনো সাড়া পাইনি। এখনো সময় আছে, সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে। বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি সর্ব স্তরের মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App