×

সারাদেশ

পঞ্চগড়ে পারিবারিক কলহে গায়ে আগুন দিয়ে নারীর আত্মহত্যা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২১, ০৫:৫৩ পিএম

পঞ্চগড়ে পারিবারিক কলহে গায়ে আগুন দিয়ে নারীর আত্মহত্যা!

পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক কলহের জেরে গায়ে আগুন দিয়ে হালিমা খাতুন (৫০) নামে নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মারা যাওয়া হালিমা খাতুন পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়নের ছোবারভিটা এলাকার কিতাব আলীর স্ত্রী। শনিবার সন্ধ্যায় হালিমা পরিবারের সদস্যদের সাথে ইফতার করার পর বাড়ির পাশের বাঁশঝাঁড়ে গিয়ে শরীরে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন ওই নারী। পরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সে পাশের একটি ভূট্টা ক্ষেতের ভেতর দিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে।

এসময় বেশ কিছু ভূট্টা গাছ ওই নারীর শরীরে লাগানো আগুনে পুড়ে যায়। পরে হালিমা চিৎকার শুরু করলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিবারের লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় তাকে রংপুর নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারের লোকজন। রংপুর নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। রবিবার ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে প্রেরণ করে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় তার পরিবারের কারো কোন অভিযোগ নেই।

পুলিশ জানায়, হালিমা খাতুনের চার ছেলে। তার মধ্যে বড় ছেলে বগুড়া জেলার দুপচাচিয়া উপজেলায় একটি হাফেজী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন এবং সবার ছোট ছেলেও সেখানে থেকে ওই মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছেলে বাড়ির কৃষিকাজ দেখাশুনা করেন এবং স্থানীয় টমেটোর আরৎ এ কাজ করেন। ওই নারীর স্বামী কিতাব আলী কৃষি কাজ করেন। তবে সংসারের সবকিছু দেখাশুনা করতেন মুলত এই হালিমা। তিনি আশে পাশের শিশু ও নারীদের আরবি শিক্ষা দিতেন। সেখান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চালানোর কাজে ব্যবহার করতেন তিনি। সুস্থ স্বাভাবিক ওই নারী শনিবার রোজা ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে গৃহস্থলির কাজকর্মও করেন। কিন্তু ইফতার করার কিছুক্ষণ পর বাড়ির পূর্বদিকের একটি বাঁশ বাগানে গিয়ে গাঁয়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুরো শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে চিৎকার করে ছোটাছুটি করতে থাকে ওই নারী। তার চিৎকার শুনে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তার পরিবারের লোকজন তার শরীরের আগুন নিভিয়ে তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো অংশ আগুনে ঝলসে যায়। হাসপাতালে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তার পরিবারের লোকজন তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। রবিবার সকালে খবর পেয়ে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে প্রেরণ করে।

তবে স্বামীর সাথে তার ঝগড়ার কথা অস্বীকার করছে তার পরিবারের লোকজন। এমনকি ওই নারীর বড় ছেলে হায়দার আলী তার মায়ের মানসিক সমস্যা ছিলো বলে পুলিশকে লিখিতভাবে অবহিত করেছে। পরিবারের সদস্যদের এমন কথাবার্তায় বিষয়টি নিয়ে ধোয়াশা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই নারীর বড় ছেলে হায়দার আলী বলেন, আমার মায়ের মানসিক সমস্যা ছিলো। কারো সাথে কোন ঝগড়াও হয়নি। তবে কেন আত্মহত্যা করলো আমরা ভেবে পাচ্ছি না। আমার মায়ের এই উছিলায় মৃত্যু ছিলো তাই এভাবেই মৃত্যু হয়েছে।

কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাহার আলী বলেন, ওই নারীই ওই সংসারের দেখাশুনা করতেন। কিন্তু কি কারণে আত্মহত্যা করলেন আমরা বুঝতে পারছি না। বিষয়টি রহস্যজনক। পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক বেলাল হোসেন বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জেনেছি ওই নারী তার স্বামীর সাথে কোন বিষয়ে ঝগড়া হয়েছিল। সারা দিন রোজা থেকে ইফতারের পর বাড়ির পাশের বাঁশ বাগানে গিয়ে শরীরে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহুর্তে আগুন পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে রংপুর নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তার এক সন্তান বলছেন তার মা মানসিকভাবে অসুস্থ্য ছিলেন। তাদের কোন অভিযোগ নেই। আমাদের কাছে বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় আমরা ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App