×

জাতীয়

জাল গুটিয়ে আনছে সরকার আতঙ্কে হেফাজত নেতারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:২৫ এএম

জাল গুটিয়ে আনছে সরকার আতঙ্কে হেফাজত নেতারা

ফাইল ছবি

হেফাজতের হুংকার থেমে গেছে আগেই। উল্টো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নৈরাজ্য সৃষ্টির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে সাম্প্রদায়িক এই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এরই মধ্যে পাকড়াও করেছে সংগঠনটির শতাধিক নেতাকর্মীকে। অনেককে রিমান্ডে নিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, অনেকে আছেন কারাগারে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা থাকলেও তারা মূল নীতিনির্ধারক নন। জুনায়েদ বাবুনগরী, নুরুল ইসলাম জিহাদি, মামুনুল হকসহ যাদের বক্তব্য ও তৎপরতায় উসকানি থেকে বিশৃৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাদেরও ধরার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হেফাজতের জাল গুটিয়ে আনতে দিনরাত সমানতালে অভিযান চলছে। প্রতিদিনই হেফাজতের কেউ না কেউ আটক হচ্ছে। এবার শীর্ষ নেতাদের পালা বলে জানা গেছে। সাধারণ মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে উসকে দিয়ে দেশে একের পর এক বেপরোয়া তাণ্ডব চালায় হেফাজত। কিন্তু কৌশলগত কারণে নমনীয় অবস্থান নেয় সরকার। এরইমধ্যে যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাপক সমারেলাচনার মুখে পড়ে সংগঠনটি। মামুনুলের অপকর্ম প্রকাশ্যে ও নীরবে সমর্থন করে বাবুনগরীসহ সিনিয়র নেতাদের নৈতিক অবস্থানও প্রশ্নের মুখে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে হেফাজত নেতাদের লাগাম টানতে জাল বিস্তার করে সরকার। এই সময়ে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে সঙ্গত কারণেই সারাদেশে লকডাউন জারি করা হয়। লকডাউনের মধ্যে জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকায় হেফাজতিরাও ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হয়। আর এই সুযোগে হেফাজতের বিরুদ্ধে জাল গুটিয়ে আনতে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একে একে জালে ধরা পড়তে থাকে রুই-কাতলারা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহাবুব আলম গতকাল বিকালে ভোরের কাগজকে জানান, মতিঝিল শাপলাচত্বর কাণ্ড ও সাম্প্রতিক নাশকতার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় যারাই আসামি তাদের ধরতে অভিযান চলছে। কে কোন পদে আছেন তা মুখ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের যারাই আসামি তাদের ধরা হবে। কোন পর্যায়ের নেতা তা বিবেচ্য নয়। মামলার সব পর্যায়ের আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যে কোনো সময় আসামিদের যে কেউ আটক হতে পারে। র‌্যাব ও পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, হেফাজতের নাশকতার ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল, পল্টন, যাত্রবাড়ীসহ একাধিক থানায় মামলা হয়েছে। এসব মামলায় হেফাজতের উল্লেখযোগ্য সবাই আসামি। পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ নাশকতার অভিযোগে এসব মামলা রুজু হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে নজরদারিতে রয়েছেন। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের আটকের পর পরিস্থিতি বিবেচনায় সিনিয়দের আটক করার কথা ভাবছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নারী কেলেঙ্কারিতে আলোচিত হেফাজত নেতা মামুনুল হক একাধিক মামলার আসামি। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি মাদ্রাসায় রয়েছেন। তাকে যে কোনো সময় আটক করা হতে পারে। জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলাচত্বর কাণ্ডের ৮৩ মামলায় ৫০ হাজারের বেশি আসামি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঠেকাতে হেফাজত ইসলামসহ কতিপয় ইসলামি ও বাম সংগঠনের আন্দোলনের নামে রাজধানী এবং কয়েকটি জেলায় যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সেইসব ঘটনায়ও ৭৮টি মামলা হয়েছে। সবমিলিয়ে লাখের বেশি আসামির খোঁজে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দারা হন্যে। সূত্র মতে, হেফাজতের সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকার ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদ, সহপ্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহঅর্থ সম্পাদক ও ঢাকার সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াছ হামিদী, শরীফ হোসাইন, জাকির হোসেন, শফিকুল ইসলাম, ইফসুফ, ফজলুর রহমান, হেলেন, মামুন, ইফনুসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোনারগাঁও রিসোর্টে মামুনুল হক কাÐে দায়েরকেৃত মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, ওই উপজেলা হেফাজতে ইসলামের আমির মহিউদ্দিন (৫০), সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন (৪৯), সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান শিবলী (৪৩) ও সোনারগাঁও উপজেলা খেলাফত মজলিশের সভাপতি ইকবাল হোসেন (৫০)। গত ১৪ এপ্রিল সহকারী মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, গত ১৬ এপ্রিল শুক্রবার মাওলানা যুবায়ের আহমেদ ও গতকাল শনিবার মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ নামে হেফাজতের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে হেফাজতের সাতজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারাদেশে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলো। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর বারিধারা এলাকা থেকে বিকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার বিকালে বারিধারা এলাকার একটি মাদ্রাসা অভিযান চালিয়ে জুনায়েদ আল হাবিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের হেফাজতের সহিংসতার ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে। জুনায়েদ আল হাবিবের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে সহিংসতা ছাড়াও সা¤প্রতিক সহিংসতাতেও সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। তাকে ২০১৩ সালের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে সা¤প্রতিক মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হবে। আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া তিনি জমিয়ত ই উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি ও ঢাকার জামিয়া কাসেমিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এদিকে কেন্দ্রীয়সহ শতাধিক হেফাজত নেতা গ্রেপ্তারের পর শীর্ষ নেতারা গলার সুর নরম করেছেন। এতদিন তারা সরকার পতন বা গদি উল্টে দেয়ার কথা বলে মাঠ গরম করলেও এখন ¯্রফে আটককৃতদের মুক্তি দাবি করছেন। সমাধানের পথ খুঁজতে একাধিক শীর্ষ নেতা দফায় দফায় বৈঠক করেও ক‚লকিনারা করতে পারছেন না বলে একাধিক হেফাজত নেতা জানিয়েছেন। পুলিশ সূত্র মতে, হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, নায়েবে আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ, নায়েবে আমির আহমদ আব্দুল কাদের, যুগ্ম মহাসচিব নাসির উদ্দিন মুনির, নায়েবে আমির মাওলানা সাজিদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব ইফসুফী, যুগ্ম মহাসচিব লোকমান হাকিম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমি, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মুফতি আজহারুল ইসলাম, মাওলানা হাসান জামিল, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমেনী, অর্থ সম্পাদক মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুফতি হারুন ইজহার শাপলা চত্বর কাণ্ড ও সাম্প্রতিক ঘটনার মামলায় কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত। তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। তাদের যে কোনো সময় আইনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App