×

স্বাস্থ্য

দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার রোগীদের সুরক্ষা দেবে না করোনা টিকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৭:৪৬ পিএম

দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার রোগীদের সুরক্ষা দেবে না করোনা টিকা

৬৩ বছর বয়সী ওলোউইৎজ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা ব্রঙ্কসের মন্টেফিওরে মেডিকেল সেন্টারের জরুরি ওষুধ বিভাগের প্রধান ৬৩ বছর বয়সী ওলোউইৎজ। গত বসন্তে শহরটিতে করোনার দাপট শুরু হলে তিনি নিজেকে নিউ ইয়র্কের মামারোনেকে বাড়ির ভেতর বন্দি করে ফেলেন।  এরই মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে।

 ২০১৯ সালের ক্যান্সার চিকিৎসা ওলোউইৎজ-এর রোগ প্রতিরোধী কোষগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তার দেহকে করে তুলেছে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অসহায়। তাই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়টাতে ওলোউইৎজকে কেবল জুম অ্যাপের মাধ্যমে মেডিকেল সেন্টারের কর্মীদের পরিচালনায় নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন।

[caption id="attachment_278889" align="aligncenter" width="587"] ৬৩ বছর বয়সী ওলোউইৎজ[/caption]

বন্ধুদের মতো এ চিকিৎসকও টিকা নিয়েছেন। অবশ্য তাতেও ওলোউইৎজের শরীরে কোনো অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে না, হবে বলে আশাও করেননি। কারণ তিনি হচ্ছেন দেশটির সেই লাখ লাখ নাগরিকদের একজন, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করে না। তাদের অনেকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা ছাড়া কিংবা ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে জন্মেছেন। কিংবা কোনো রোগে ভুগে কিংবা থেরাপির কারণে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে গেছে। এমনটাই হয়েছে ওলোউইৎজের ক্ষেত্রে।

এসব ব্যক্তির মধ্যে কারও কারও শরীরে খুবই সামান্য পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, কারও কারও একেবারেই হয় না। তারা তাই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন। ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তারা দীর্ঘ সময় ধরে ভুগতে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুর হারও অনেক অনেক বেশি, ৫৫ শতাংশ।

লিউকেমিয়া অ্যান্ড লিম্ফোমা সোসাইটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. লি গ্রিনবার্গার বলেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ঘাটতি নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা এসব বয়স্ক ব্যক্তির অধিকাংশই তাদের ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত। কারও কারও আবার ধারণাই নেই, প্রতিষেধক টিকা তাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তিনি বলেন, ভাইরাসকে হটিয়ে দেওয়া পর্যন্ত নিজেকে নিরাপদ কোনো আশ্রয়ে লুকিয়ে রাখাই সবচেয়ে নিরাপদ। এর বিকল্প হলো, নিয়মিত রিরতিতে শরীরে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি নেওয়া।

করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের দেহে এ অ্যান্টিবডি বিপুল পরিমাণ তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে করোনার ক্ষেত্রে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে করা বেশ কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতির অনুমোদনও দিয়েছে। সুস্থ মানুষের দেহ থেকে নেওয়া বিশুদ্ধ অ্যান্টিবডি কনভালেসেন্ট প্লাজমা বা গামা গ্লোবুলিন দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যক্তিদের উপকারে আসতে পারে।

নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাইয়ে আইকান স্কুল অব মেডিসিনের রোগ প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ ড. শার্লট কানিংহাম-রানডলস এমন ৬শ’র মতো রোগীর চিকিৎসা করতেন, যাদের সবাই গামা গ্লোবুলিনের নিয়মিত ডোজের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিলেন। এর মধ্যে এই রোগীদের ৪৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও ৪-৫ জনের যে শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে ভুগতে হবে অনেকদিন।

কানিংহাম-রানডলসের রোগীদের একজন স্টিভেন লোটিটো। ১৩ বছর বয়সেই তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ঘাটতির বিষয়টি ধরা পড়ে। তা সত্ত্বেও মহামারীর আগ পর্যন্ত লোটিটোর জীবনযাপন ছিল দুশ্চিন্তামুক্ত। নিয়মিত খাওয়াদাওয়া ও ব্যায়াম করতেন। ব্যাপক সাবধানতা অবলম্বন সত্ত্বেও গত বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি মেয়ের মাধ্যমে করোনা সংক্রমিত হন লোটিটো। এরপর ৭ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তার শরীরে এখনও অ্যান্টিবডির দেখা মেলেনি।

২৮ বছর বয়সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতির বিষয়টি জানতে পারেন ওয়েন্ডি হালপেরিন। এখন তার বয়স ৫৪। জানুয়ারিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ১৫ দিন থাকতেও হয়েছিল তাকে। করোনা চিকিৎসায় কনভালেসেন্ট প্লাজমা ব্যবহার করায় তাকে টিকা নেওয়ার জন্য তিন মাস অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। হালপেরিনের টিকা নেওয়ার তারিখ পড়েছে ২৬ এপ্রিল। কিন্তু এর মধ্যেই তার শরীর কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি করে ফেলেছে, যা চিকিৎসকদের অবাক করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্টেফিওরে মেডিকেল সেন্টারের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অমিন ভার্মা বলেন, এ থেকে বোঝা যায়, সবারই চেষ্টা করা উচিত এবং টিকা নেওয়া উচিত।

অবশ্য এ জুয়া ওলোউইৎজের ক্ষেত্রে কাজে লাগেনি। নিজেকে সুরক্ষিত করার মতো অ্যাস্টিবডি না থাকায় এখনও বাসা থেকেই কাজ করছেন এ চিকিৎসক। অন্য সবার টিকা না নেওয়া পর্যন্ত এবং শহরে সংক্রমণের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামার আগ পর্যন্ত এভাবেই তাকে কাটাতে হবে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App