টিকা প্রাপ্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৫০ এএম
*ভারতের টিকায় টান, হতাশ করেছে চীন *রাশিয়ার দিকে হাত বাড়িয়েছে সরকার
দেশজুড়ে যখন হু হু করে বাড়ছে করোনা রোগী আর মৃত্যুর সংখ্যা, ঠিক তখনই বাংলাদেশের সামনে এসেছে আরেক দুশ্চিন্তা- সম্ভাব্য টিকা সংকট। এই সংকট কাটাতে সরকার ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, ভারত থেকে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক টিকা চলে এলে সংকট কেটে যাবে। সরকার এ নিয়ে কাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অক্সফোর্ডের তৈরি তিন কোটি ডোজ করোনা টিকা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কিনতে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। কথা ছিল প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। প্রথম চালানে গত ২৫ জানুয়ারি ৫০ লাখ ডোজ টিকা এসেছিল। দ্বিতীয় চালানে গত ফেব্রুয়ারিতে ৫০ লাখের পরিবর্তে আসে ২০ লাখ ডোজ। এরপর ভারতে টিকার বিপুল চাহিদা থাকায় এই চালান স্থগিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় সংকটে পড়ে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে কেনা টিকা আসার আগে উপহার হিসেবে বাড়তি ২০ লাখ ডোজ টিকা ঢাকায় পাঠিয়েছিল ভারত সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে আরো ১২ লাখ ডোজ টিকা নিয়ে আসেন। গত ৮ এপ্রিল ভারতীয় সেনাপ্রধানও উপহার হিসেবে আরো ১ লাখ ডোজ টিকা নিয়ে আসেন। উপহার এবং কেনা মিলিয়ে ভারত থেকে মোট ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু এরপর কবে আসবে পরবর্তী চালান, সেটা কেউই জানে না। যদিও ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ৮ এপ্রিল বলেছেন, ভারত বাংলাদেশকে টিকা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তা আসবে।
এ রকম পরিস্থিতিতে ভারত থেকে টিকা না আসায় বাংলাদেশ চীনের দিকে হাত বাড়ায়। কিন্তু চীনও নাখোশ করে বাংলাদেশকে। তাই রাশিয়া থেকে করোনার টিকা পেতে যোগাযোগ করছে বাংলাদেশ। রাশিয়া সরাসরি বাংলাদেশকে টিকা না দিয়ে সহ-উৎপাদক হওয়ার প্রস্তাব করেছে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, ভারতের টিকার ডিমান্ড অনেক বেশি। বিভিন্ন জায়গায় তারা কমিটমেন্ট করেছে। সাপ্লাই দিতে পারছে না। তবে আমাদের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে এবং তারা বলেছে আমাদের টিকা দেবে।
চীনের টিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একসময় বাংলাদেশকে তাদের তৈরি টিকা নিতে রীতিমতো তদবির করেছিল চীন। আমরা তখন বলেছিলাম বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন না দিলে নেব না। পরে আর চীন থেকে টিকা আনা হয়নি। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, তাতে টিকা নিয়ে যাতে সংকটে পড়তে না হয় সেজন্য আমরা চীনের কাছে টিকা চেয়েছিলাম। কিন্তু তারাও ‘ওভারবুকড’। এর ফলে চীন থেকে সহসা টিকা পাওয়া যাবে না। তাই পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেকটাই আলোর মুখ দেখা যাচ্ছে। মোমেন বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা তাই রাশিয়াকে বলেছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রাশিয়ার টিকা উৎপাদন সক্ষমতা অনেক কম। রাশিয়া একটি প্রস্তাব দিয়ে বলেছে, আমরা টেকনোলজি দিয়ে দেব- তোমরা উৎপাদন করো। আমরা এখন সেদিকেও কাজ করছি।
ভারত তো তাদের দেশে রাশিয়ার টিকা ‘স্পুটনিক ভি’র অনুমোদন দিয়েছে; বাংলাদেশও কি সেই টিকার অনুমোদন দিয়েছে- এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের চারটি কোম্পানি তাদের দেশে রাশিয়ার টিকা উৎপাদন করবে। এ রকম পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারি তার কাজ চলছে। তবে রাশিয়া আমাদের বলেছে, তাদের টিকা আমাদের দেবে না। টিকার কনটেন্টসহ টেকনোলজি আমাদের দেবে। আমরা যাতে উৎপাদন করি।
টিকা নিয়ে কি বাংলাদেশ সংকটে পড়বে, এমন প্রশ্নে ড. মোমেন বলেন, আমরা টিকা পাব বলে যে প্রতিশ্রুতি পেয়েছি, তা যদি ঠিকঠাকমতো চলে আসে, তাহলে সংকট হবে না। কিন্তু প্রতিশ্রুতির টিকা না এলে হয়তো সমস্যা হবে। তবে সব বিষয় মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা কাজ করি, সমস্যা হবে না বলেই বিশ্বাস করি।