×

সারাদেশ

চন্ডিপুর বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির ৭ লাখ টাকা আত্মসাত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৯:২৫ পিএম

চন্ডিপুর বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির ৭ লাখ টাকা আত্মসাত

চন্ডিপুর এফ হক উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর এফ হক উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, বিকাশ প্রতিনিধিসহ কতিপয় শিক্ষক-কর্মচারির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে কয়েক দফা অভিযোগ দেয়ার পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

অভিযোগে জানা গেছে, সাবেক অধ্যক্ষ মো. মোজাম্মেল হক, উপবৃত্তির দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদ, অফিস সহকারি ও বিকাশ প্রতিনিধিরা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহমুদুল হোসেন মণ্ডলের সঙ্গে যোগসাজস করে ২০১৮ সালে উপবৃত্তিভুক্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য ১০০ থেকে ৫০০ টাকা গ্রহণ করেন।

এছাড়া চন্ডিপুর এফ হক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থী প্রায় ২০০ জন। অথচ ঝড়েপড়াসহ সাবেক শিক্ষার্থীর জন্ম সনদ ব্যবহার করে ৩৩৪ জন শিক্ষার্থীর নামে বিকাশ একাউন্টে টাকা জমা হয়। প্রায় ১৩৪ জন ভুয়া শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে যোগসাজস করে সাবেক অধ্যক্ষ, সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ কতিপয় শিক্ষক-কর্মচারি ভাগাভাগি করে নেন।

নিয়মিত বিভিন্ন ক্লাসের ১০ শিক্ষার্থীর নাম উপবৃত্তিতে অন্তর্ভুক্ত হলেও তাদের বিকাশ একাউন্টে টাকা না গিয়ে অধ্যক্ষ, উপবৃত্তির দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষক, কতিপয় সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারিদের নামে বেনামে খোলা বিকাশ একাউন্টে জমা হয়। যা তুলে তারা আত্মসাত করেন। উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ১৪ মে ২০২০ তারিখে উপবৃত্তির অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাহমুদুল হোসেন মণ্ডলকে দিয়ে তদন্ত করেন। তিনি (নিজেই জড়িত থাকায়) দায়সারা আংশিক ও অস্পষ্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৬ জুন ২০১৯ তারিখে চন্ডিপুর এফ হক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে বিকাশের ৫ জন প্রতিনিধি প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর বিকাশ একাউন্ট খোলেন। অবশিষ্ট শিক্ষার্থীদের একাউন্ট খোলার জন্য পরবর্তীতে তারিখ জানানো হবে মর্মে বিকাশ প্রতিনিধিরা চলে যান।

পরবর্তীতে বিকাশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অধ্যক্ষ, কতিপয় শিক্ষক-কর্মচারি ০১৪০ সিরিজের বেশ কিছু নম্বর, ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষকের মোবাইল নম্বরসহ বেনামি নাম্বারে ঝড়েপড়া ও ড্রপ আউন্ট অবশিষ্ট ১৩৪ জন শিক্ষার্থীদের নামে বিকাশ একাউন্ট খোলা হয়। তাদের নামের বিপরীতে ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল একাউন্ট নম্বরে ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে ৭০ জন অবৈধ শিক্ষার্থী (ভুয়া) নামে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে।

ভূয়া শিক্ষার্থী ছাড়াও বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নিয়মিত ১২০জন শিক্ষার্থীর মোবাইল নম্বরের স্থলে শিক্ষক-কর্মচারীর বেশকিছু বিকাশ নম্বর দিয়ে ওই টাকাগুলো তুলে আত্মসাৎ করা হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আরও অভিযোগ করেন, একইভাবে দ্বিতীয় ধাপেও আরও ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকাসহ মোট ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে।

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত তিনি নীতিমালা উপেক্ষা করে সমুদয় বেতনের টাকা উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া সাবেক অধ্যক্ষসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।

কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এম এ রউফ সরকার বলেন, বিষয়টি আমার সময়ে ঘটেনি। তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

এ বিষয়ে সাবেক অধ্যক্ষ মো. মোজাম্মেল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। উপবৃত্তির অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাহমুদুল হোসেন মণ্ডল।

এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. এনায়েত হোসেন বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দায়সারা তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। যা অসম্পূর্ণ ও সুষ্পষ্ট নয়। তাই স্কুল খোলার অপেক্ষায় রয়েছি। পুনরায় সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App