×

মুক্তচিন্তা

বাঙালির জীবনে স্মরণীয় দিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১২:০২ এএম

বাঙালির জীবনে স্মরণীয় দিন

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রণীত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ ছিল বাংলাদেশের মুক্তিকাক্সক্ষী রাষ্ট্রের প্রথম সংবিধান। এই ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের প্রথম সরকার বা মুজিবনগর সরকার কর্তৃক ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম লিখেছেনÑ ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, মুজিবনগর সরকার ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়Ñ এ তিনটি ঘটনা একসূত্রে গাঁথা।’ তার স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ‘তাজউদ্দীন আহমদ ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তে অধিবেশন আহ্বান করেন। ১০ এপ্রিলের ওই অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে স্বদেশ ভূমি থেকে বিতাড়িত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত এবং নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের জন্য প্রথম সরকার গঠন করা হয়।’ সে সময় যিনি এই ঘোষণাপত্রটি রচনা করেছিলেন তার স্মৃতিতে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, যা ৪ জুলাই ১৭৭৬ সালে পেনসিলভানিয়া প্রাদেশিক আইনসভায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধরত তেরোটি মার্কিন উপনিবেশ নিজেদের ব্রিটিশ শাসনের বাইরে স্বাধীন ও সার্বভৌম হিসেবে ঘোষণা করে এবং যুক্তরাষ্ট্র নামে নতুন রাষ্ট্র গঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় জুলাইয়ের ৪ তারিখ, যে তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়েছিল সেই তারিখেই। ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুসারে ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। কারণ ঘোষণাপত্রে লেখা হয়েছেÑ ‘আমাদের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।’ ঘোষণাপত্রের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাকে স্বীকৃতি দেয়া এবং তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে অভিহিত করা। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা অনুমোদন করে আরো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় যে, শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। কোনো কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান না থাকেন অথবা যদি রাষ্ট্রপ্রধান কাজে যোগদান করতে না পারেন অথবা তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে যদি অক্ষম হন, তবে রাষ্ট্রপ্রধান প্রদত্ত সব দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পালন করবেন। বর্ণিত ঘটনা অনুসারে আমরা জানি, ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল এবং নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল; কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশন আহ্বান করেও বেআইনিভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য তা বন্ধ ঘোষণা করেন। উপরন্তু জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনাকালে ন্যায়নীতিবহির্ভূত এবং বিশ^াসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করে গণহত্যা চালায়। উল্লিখিত বিশ^াসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্রটি এখন সম্পূর্ণ আকারে বাংলাদেশের সংবিধানে সংযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামো রূপে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের সংবিধানের একটি অপরিবর্তনীয় বিধান।

দুই. ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রকাশিত বাঙালি জাতির মুক্তিকাক্সক্ষী জনগণের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র নিহিত আছে ঘোষণাপত্রে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছিল সে ম্যান্ডেট মোতাবেক নির্বাচিত প্রতিনিধিরা গণপরিষদ গঠন করে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। লক্ষণীয়, ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় যে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার বাণী বিশ^ব্যাপী প্রচারিত হয় তার সঙ্গেও স্বাধীনতাকামী বাঙালির চেতনার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সঙ্গে মিল আছেÑ ১৮১১ সালের ভেনিজুয়েলার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, ১৮৪৭ সালের লাইবেরিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, ১৯৪৫ সালের ভিয়েতনামের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের। তবে ১৯৭১-এর ১০ এপ্রিল জারিকৃত মাত্র ৫১০ শব্দের এ ঘোষণাপত্র জনগণের মাঝে আশা জাগাতে সক্ষম হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান ও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ার আইনি দলিল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ঘোষণাপত্রে ব্যবহৃত মাত্র তিনটি শব্দ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অসাধারণভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। গণবিমুখ ও নিপীড়নকারী পাকিস্তানের রাষ্ট্রকাঠামোর মডেল ছুড়ে ফেলে যে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সেই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নির্ণয় করা হয়েছেÑ বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা। ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে একটি আদেশ জারি করেন, যা ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হয়। আদেশটি ছিল একটি স্বাধীন দেশের শাসন কার্যক্রমের অন্যতম দিক। সেটি হলোÑ ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সকল আইন চালু ছিল, তা ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একইভাবে চালু থাকবে, তবে প্রয়োজনীয় সংশোধনী সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের জন্য করা যাবে। এই রাষ্ট্রগঠন বাংলাদেশের জনসাধারণের ইচ্ছায় হয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার ঐতিহাসিক কারণগুলো তথা পাকিস্তানি শাসকদের গণহত্যা ও শত্রুতামূলক আচরণ, এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা ঘোষণার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা, নতুন রাষ্ট্রের সরকারের রূপরেখা, নতুন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপট এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটির কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্দিষ্টকরণ উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে রাজা তৃতীয় জর্জের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের অবতারণা করা হয়েছিল। স্বাধীনতাকামী নতুন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা জারির ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তবতা বরং আরো ভয়ঙ্কর ছিল। এজন্য আমাদের স্বাধীনতা দাবির স্বপক্ষে জোরালো যুক্তি বিশ^বাসী প্রত্যক্ষ করেছিলেন। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি জন্ম থেকেই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। যদিও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভুর কর্তৃত্ব ১৯৪৭ সালে তিরোহিত হয়েছিল কিন্তু বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো হচ্ছিল দমননীতি। ফলে ২৪ বছরের নিপীড়নের পর পূর্ববঙ্গের জনগোষ্ঠী যখন ওই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করে তখন ব্যাপারটি প্রাথমিকভাবে মূলত ওই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে গণ্য হয়েছিল। স্বাধীনতার দাবিকে আন্তর্জাতিক মহল বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলে ধরে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু ২৫ মার্চের গণহত্যার খবর এপ্রিলের প্রথম থেকেই আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে প্রচারিত হলে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাকে আর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অপপ্রয়াস রূপে চিহ্নিত করার অবকাশ ছিল না। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস, দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সিডনি শ্যানবাগ, ইতালির সাংবাদিক ওরিয়ানা ফেলাচি, ফরাসি সাংবাদিক বার্নার্ড হেনরি লেভিসহ আরো অনেক বিদেশি সাংবাদিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সরাসরি প্রত্যক্ষ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। এজন্য ১০ এপ্রিলের আগে কলকাতার প্রেস ক্লাবে বিপুলসংখ্যক বিদেশি সাংবাদিক সমবেত হয়েছিলেন আমাদের জাতীয় নেতা বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রূপকারদের সামনে। আসলে আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাধীনতার দাবিকে মূর্ত করা হয়েছে বাস্তবতার ভিত্তিতে কোনো দার্শনিক তত্ত্বের আধারে নয়। এজন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বে এটি বিস্ময় নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। বাঙালি জাতির মুক্তির উল্লসিত আকাশ সেদিন স্পষ্ট হয়। একটি জাতিগোষ্ঠী তার জাতিসত্তার উন্মেষ থেকেই স্বাধীন। স্বাধীনতার এই চেতনা সেদিন দিকে দিকে প্রচারিত হয়েছিল। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সূত্র ধরেই ১৯৭২ সালে আমাদের সংবিধান প্রণীত হয়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল জনপ্রতিনিধিগণ বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে এই কথাটি উচ্চারণ করেছিলেন যে, ‘আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।’ ১০ এপ্রিল রাতে স্বাধীনতার এই ঘোষণা কলকাতার আকাশবাণীর একটি বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। এ ঘোষণার পরপরই মুক্তিযুদ্ধ একটি নতুন মাত্রা পায়। মুক্তিযুদ্ধ নতুন করে গতিশীল হয়ে ওঠে, মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হন। এই ঘোষণা সর্বস্তরের মানুষ শুনতে না পেলেও পারস্পরিক সংযোগের মধ্য দিয়ে তাদের মনোবল বেড়ে যায় প্রচণ্ড রকম। এই ঘোষণা শোনার পর মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দিত হয়েছিলেন; ওই মুহূর্ত থেকেই প্রকৃত অর্থে ভেবেছিলেন তারা একজন বাঙালি, একজন স্বাধীন নাগরিক। প্রাণপ্রিয় দেশটির নাম বাংলাদেশ।

তিন. স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে মনে রাখতে হবে, একাত্তরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মতো মুজিবনগর সরকারের তাৎপর্যপূর্ণ দিক ছিল মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় যথার্থ পরিকল্পনা ও নির্দেশনা প্রদান। মুজিবনগর সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়। এছাড়া কয়েকটি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে ছিল। সেদিনই যুদ্ধরত অঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে প্রতিটিতে একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। কমান্ডোরা যখন যে এলাকায় অভিযান করতেন সে সেক্টরের কমান্ডারের অধীনে থাকতেন। এছাড়া জেড ফোর্স, কে ফোর্স ও এস ফোর্স নামে তিনটি ব্রিগেড গঠন হয়েছিল। বহির্বিশ্বের সরকার ও জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করার নিমিত্তে বিদেশে বাংলাদেশ মিশন স্থাপন এবং বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল প্রেরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চলতে থাকে। করোনার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালে যেমন ৯২ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন ঠিক ১৯৭১ সালেও একইভাবে সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অস্থায়ী সরকার কর্তৃক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তখনকার সরকার তার আয়ের উৎস ও ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করে প্রথমে ছয় মাসের জন্য একটি বাজেট তৈরি ও বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত অর্থ সংরক্ষণের জন্য ট্রেজারি স্থাপন করে। প্রবাসী বাঙালি ও বিভিন্ন বিদেশি নাগরিক এবং সংস্থার তরফ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ নামের একটি তহবিলে জমা হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের বেতন-ভাতা ছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ের প্রস্তাব প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত হতো এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সে অর্থ পৌঁছাত। সরকারি ব্যয়ের স্বচ্ছতার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। মনে রাখতে হবে এই মুজিবনগর সরকারের অধীনেই পরিচালিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। ১৭ এপ্রিল দেশ-বিদেশের প্রায় একশ সাংবাদিকের উপস্থিতিতে মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার লড়াই একটা আইনি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছিল। এজন্য বাঙালির জীবনে ১৭ এপ্রিল আজো স্মরণীয় একটি দিন। ড. মিল্টন বিশ্বাস : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App