×

জাতীয়

বিপাকে সাধারণ রোগীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৫৭ এএম

বিপাকে সাধারণ রোগীরা

ফাইল ছবি

এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ছেলের সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন পরিমল বর্মণ। ৫৬ বছর বয়সি পরিমল কিছু দিন আগে বাম চোখের পাশে বড় একটি ফোঁড়া অপারেশন করিয়েছিলেন। বায়োপ্সি করানোর পর সেখানে ক্যান্সারের জীবাণু পাওয়া যায়। এরপর চিকিৎসক তাকে কেমো থেরাপি নেয়ার পরমর্শ দেন। অনেক কষ্টে ও অপেক্ষার পর ক্যান্সার হাসপাতালে কেমো থেরাপির তারিখ মিলেছিল তার। কিন্তু নির্ধারিত দিনে ঢাকায় এসে জানলেন সেখানে থেরাপি দেয়া হবে না। পরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়।

লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণার আগে খাদ্যতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আজিজা বেগম (৪৬)। তখন চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন আরোগ্য পেতে গেলে তার অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। কিন্তু ৪ এপ্রিল চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে কয়েক মাস পরে আবার আসার পরামর্শ দিয়ে ছাড়পত্র দিয়ে দেন।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে আগে থেকে ১০ এপ্রিল অস্ত্রোপচারের তারিখ নির্ধারিত থাকায় নরসিংদী থেকে ঢাকায় এসেছিলেন জয়া সরকার। ভর্তি হতে না পেরে স্বামী ছেলের সঙ্গে বাড়ি ফিরে গেছেন। কবে অস্ত্রোপচার করতে পারবেন তা জানেন না জয়া ও তার পরিবার।

৫ এপ্রিল সরকার ঘোষিত চলাচলে কড়া বিধি নিষেধের আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সাধারণ রোগীদের ছাড়পত্র নেয়ার হিড়িক পড়ে। ঢামেক হাসপাতালে নতুন ভবনের করোনা ইউনিট ছাড়া অন্য সব বিভাগে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। মিটফোর্ড হাসপাতালেও রোগী ভর্তি, চিকিৎসা ও সব ধরনের অস্ত্রোপচার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। জানা যায়, ৯শ বেডের এই হাসপাতালে ১১টি বিভাগে প্রতিদিন ৩’শর বেশি রোগী ভর্তি হয়। আর ভর্তি থাকা রোগীদের জটিল অস্ত্রোপচার হয়

প্রায় ৫০টির মতো। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর বিশেষ করে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই হাসপাতালে কোনো নতুন রোগী ভর্তি ও অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে না। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর ভিড় কমতে থাকে। শুধু গুরুতর রোগীদের ভর্তি নেয়া হতো। চলতি বছরও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর বিভিন্ন হাসপাতালে ওই একই চিত্র দেখা যায়। অন্যদিকে করোনা আতঙ্কে সাধারণ রোগীরাও খুব বেশি বাড়াবাড়ি না হলে হাসপাতাল মুখো হচ্ছেন না। করোনা রোগীর চাপ বাড়ায় হিমসিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এ সময় অনান্য অসংক্রমক রোগ যেমন ক্যান্সার, কিডনি, স্ট্রোকসহ সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।

এ কথা স্বীকার করেছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই। ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর চাপ এতটাই বেড়েছে যে সেবা দিতে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। অনেকে হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে ক্যান্সার, কিডনি, স্ট্রোকের রোগীসহ অন্য রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রায় সব হাসপাতালে বেড বাড়ানোর চেষ্টা করছি। সাধারণ রোগী কমিয়ে করোনা রোগীদের জন্য বাড়তি বেডের ব্যবস্থা করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এতে সাধারণ রোগীদেরও কষ্ট হবে।

এরপর ১১ এপ্রিল কোভিড-১৯ এর সময় বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি মূল্যায়ন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মিরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরাও বলেছেন ওই একই কথা। তিনি বলেন, ক্রমান্বয়ে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এতে দেশের চিকিৎসা সেবার ওপর চাপ পড়ছে। করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ রোগীদের ন্যায্য চিকিৎসাসেবা বিঘি্নত হচ্ছে। বর্তমান এই অবস্থা মোকাবিলার জন্য সরকারি অনেক সীমাবদ্ধতা আছে যা অস্বীকার করার উপায় নেই। চাইলেই অনেক কিছু করে ফেলা যাবে না।

১৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ সম্মেলনে সব হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনসিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, এ কথা সত্য, হাসপাতাগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চাপ বাড়ছে। খুব বেশি জরুরি না হলে সাধারণ রোগীরা তাদের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিংবা টেলি মেডিসিনের মাধ্যমে সেবা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, লকডাউন বা করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতাল থেকে গুরুতর রোগীদের ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে এ কথা সত্য নয়। অনেক রোগীর স্বজন এসে তাদের ছাড়পত্র দেয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। যেসব রোগী বাসায় গিয়ে চিকিৎসা নিলেও চলবে কেবল তাদেরই ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। এছাড়া করোনার সংক্রমণ বাড়ায় অনেকে হাসপাতালে আসতে আগ্রহী হচ্ছে না।

আর মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশীদ উন নবী জানান, কোনো রোগীর প্রতি অবহেলা দেখানোর সুযোগ নেই। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে একান্তই জরুরি না হলে কোনো রোগী ভর্তি বা অস্ত্রোপচার হচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App