×

মুক্তচিন্তা

আর নয় হেঁয়ালিপনা 

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১২:০৯ এএম

দেশে করোনা পরিস্থিতি চরমে। এমন পরিস্থিতির জন্য আমাদের হেঁয়ালিপনাই দায়ী। আমাদের সবার মধ্যে কেমন জানি একটা গা-ছাড়া ভাব এসে গিয়েছিল। দুনিয়াতে কোনো মহামারি চলছে এটা আমাদের মনেই ছিল না। এখনো পথে-ঘাটে অনেকে করোনা নিয়ে হাস্যরস করে বেড়ায়। সচেতনতার বালাই নেই অনেকের মধ্যে। গত বছরেও করোনা সংক্রমণের শুরুতে আমরা এমন ছিলাম। শেষে পরিস্থিতি ভয়াবহ দেখে কিছুটা সতর্ক হয়েছিলাম। এখনো একই পরিস্থিতি। যেন বিপদ যতক্ষণ নিজের কাঁধে উঠছে আমরা কিছুই মানব না। কিছুই বিশ্বাস করব না! আর এটা বুঝতে চাই না যে, বিপদ যখন কাঁধে উঠবে তখন হায়, হায় করা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। এখন হাসপাতালগুলোর চিত্র ভয়াবহ। অনেক রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না। এ বিষয়টা নিয়ে ভাবলেও আমাদের সচেতন হওয়া আবশ্যক। আমাদের অসেচতনতা আজ উৎকণ্ঠার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অনেকেই লকডাউনের তোয়াক্কা করছেন না। জীবন-জীবিকা তাদের কাছে নিজের জীবনের চেয়েও গুরুত্ব! এমন অনেক হতদরিদ্র আর নিম্ন-মধ্যবিত্তদের নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত। নিজের জন্য আর নিজের পরিবারের জন্য হলেও আসুন সচেতন হই। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর হচ্ছে প্রশাসন। আবার শাস্তি হিসেবে জেল দেয়ার চিন্তা-ভাবনাও চলছে। কিন্তু আমাদের ভালো থাকার জন্য প্রশাসনকে কেন কঠোর হতে হবে? আমরা কী নিজের ভালো-মন্দ নিজেরা বুঝতে পারি না? সংক্রমণ আগের চেয়ে বেড়েছে। করোনায় মৃত্যুও থেমে নেই। কিন্তু সব থেকে অবাক করা বিষয় হচ্ছে দেশের বেশিরভাগ মানুষ করোনাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। অনেক মানুষ এখনো করোনাকে আমলে নিচ্ছে না কিংবা গুরুত্ব দিচ্ছে না। বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নারাজ। কিন্তু এই হেলাফেলা এক সময় চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে আমাদের জন্য। করোনার প্রথম সিজনে অনেকেই সতর্ক হয়েছিলেন। করোনার ভয়াল ছোবল থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের অনেকের অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে। কিছু ভালো অভ্যাস আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। আর কিছু খারাপ অভ্যাস আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখ করার মতো হচ্ছে হাত ধোয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস। ভালো করে হাত ধোয়ার চর্চা অনেকেই করেছিলেন। অথচ এই অভ্যাস আমাদের এমনিতেই জরুরি ছিল। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে সবাইকে নিয়মিত হাত ভালো করে ধুতে হবে। শুধু মহামারি থেকে বেঁচে থাকতে নয়। যেখানে সেখানে থুথু ফেলা থেকে অনেকে সচেতন হয়েছেন। পরিবেশ পরিষ্কার রাখা ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে অনেকেই এগিয়ে এসেছিল। মানুষে মানুষে ঘেঁষাঘেঁষি কমেছিল। কিন্তু এখন যখন দেখল তারা তো ভালো আছে। তখনি হেঁয়ালিপনা শুরু করল। এই মুহূর্তে করোনাকালে আচমকা চারদিকে প্রচণ্ড গরম উত্তাপ ছড়াচ্ছে। পবিত্র রমজান শুরু হয়েছে। বৈশাখী ঝড় দেখা দিতে পারে। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে এক অস্থির গরমে চারদিকে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। এই গরমের দিনে মানুষের পানি শূন্যতার পাশাপাশি নানা রোগের সংক্রমণ হয়। তার ওপর করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের এখন দ্বিগুণ সতর্ক থাকতে হবে। অনেকে অতিরিক্ত গরমের কারণে ঘন ঘন গোসল করেন। এটা ঠিক নয়। পানি ব্যবহারে আমাদের বেশি সচেতন হওয়া দরকার। কারণ সংক্রমণ রোগগুলো বেশি পানির মাধ্যমে ছড়ায়। কেউ কোনো রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গ্রামে-গঞ্জে এখনো অনেকে ঝাড়-ফুঁকের ওপর আস্থা রেখে চলেন। কিংবা কুসংস্কার এখনো অনেক জায়গায় বিদ্যমান। কেউ কেউ তো এখনো কিছুকেই পাত্তা দিতে চায় না! শিক্ষিত সমাজকে এগিয়ে এসে এসব কুসংস্কারের বিপক্ষে মানুষকে বুঝাতে হবে। পল্লী অঞ্চলের মানুষকে বলছি, আপনার সন্নিকটে কমিউনিটি ক্লিনিক বা ইউনিয়ন সাবসেন্টার থাকলে সেখানে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী থেকে পরামর্শ নিন। আমাদের হেঁয়ালিপনার জন্য যদি অন্যান্য দেশের মতো চরম অবস্থা হয় তবে কে সামাল দেবে? কে কার বিপদে এগিয়ে আসবে? এমন পরিস্থিতি না আসুক। আসুন সবাইকে নিজেদের স্বার্থেই ভূমিকা রাখতে হবে। নিজের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের আপনজনের কথা ভাবতে হবে। কাজী সুলতানুল আরেফিন লেখক, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App