×

মুক্তচিন্তা

প্রতিভাবান অসাধারণ গুণী শিল্পী ছিলেন মিতা হক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২১, ১২:০১ এএম

প্রতিভাবান অসাধারণ  গুণী শিল্পী ছিলেন  মিতা হক

করোনার এই মহামারিতে সারা বিশ^ আজ কঠিন এক বাস্তবতার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছে। বাংলাদেশে যখন আমরা দ্বিতীয় ঢেউ সংক্রমিত হয়ে সর্বোচ্চ দিনে ৭৮ জন মৃত্যুবরণ দেখছি, তেমনি একটি সময় আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছেন অনেক গুণী শিল্পী। এর মধ্যে আমাদের স্বাধীন বাংলা বেতারের নমিতা ঘোষ, ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর মৃত্যুতে চোখের পানি মুছতে না মুছতেই আরেক জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক চলে গেলেন ১১ এপ্রিল ভোর ৬.২০ মিনিটে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। মিতা দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগেছিলেন, সেই সঙ্গে চলছিল ডায়ালাইসিস। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ হয়েও সেরে ওঠেছিলেন। ১৯৬২ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন মিতা হক। প্রথমে তার চাচা ওয়াহিদুল হক পরে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন ও সানজিদা খাতুনের কাছে গানের তালিম নেন। ১৯৭৭ সাল থেকে তিনি নিয়মিত বেতার টেলিভিশনে গান শুরু করেন। ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মিতা হক বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২০ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে বার্লিনে আন্তর্জাতিক যুব ফেস্টিভেলে অংশগ্রহণ করা ছাড়াও দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মিতা অংশগ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে রবীন্দ্রসংগীতে ছায়ানটে শিক্ষকতাও করেছেন। এক সময় ছায়ানটে রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সুরতীর্থ নামে একটি সংগীত প্রশিক্ষণকেন্দ্র তৈরি করেছিলেন। তিনি রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদের সহসভাপতি ছিলেন। এককভাবে মুক্তি পাওয়া মোট ২৪টি গানের অ্যালবাম তার মুক্তি লাভ করেছে। আমার মা (প্রয়াত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী) প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে তাকে গান গাইতে আমন্ত্রণ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি দিলেন, গান গাইলেন। আমি বললাম, মিতা তোমার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ, তুমি একবার বলাতেই চলে এলে গান গাইতে। মিতা আমাকে বলল, ‘অরূপদা এমন গুণীজনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে শ্রদ্ধা জানানোর মতো বড় আর কি হতে পারে? সেদিন থেকেই আমি তাকে চিনেছি কত উঁচু মনের একজন প্রকৃত শিল্পী তিনি। তাকে কখনো সেরকমভাবে এতগুলো টিভি চ্যানেলে অন্যদের মতো গান গাইতে দেখিনি। হয়তো তাকে ডেকে নিয়ে গান গাওয়ানোর মতো আগ্রহ কেউ দেখায়নি। তবে তার মতো একজন গুণী শিল্পীকে সব চ্যানেলে গান গাওয়ালে যে তাদের নিজেদেরই সম্মান বাড়ত, সেটা বোঝার মতো মানসিকতা হয়তো তৈরি হয়নি এ দেশে। প্রয়োজন ছিল এ রকম গুণী শিল্পীর গান আরো বেশি প্রচার করা, যাতে নতুন প্রজন্ম তাকে চিনতে পারে, বুঝতে পারে, কারণ তার কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার ছিল। একজন শিল্পীর মধ্যে যেসব গুণাবলি থাকা একান্ত প্রয়োজন মিতা হকের মধ্যে তার সবই ছিল। একজন নম্র, বিনয়ী, নিরহংকারী গুণী শিল্পী ছিলেন মিতা হক। আমাদের প্রজন্মের শিল্পীদের কাছে মিতা হক একজন রোলমডেল। সংগীত পরিবেশনা এবং সেই সঙ্গে কণ্ঠের সুর ও মাধুর্য রবীন্দ্রসংগীত গায়কীর এক অদ্ভুত মিশ্রণ ছিল। মিতা হকের মৃত্যুতে আমাদের রবীন্দ্রসংগীত অঙ্গনে এক শোকের ছায়া নেমে এলো, এ রকম আর একজন শিল্পী আমরা আর ফিরে পাব কিনা জানি না। তিনি কখনো আত্ম প্রচারে বিশ্বাস করতেন না, একজন শিল্পীর গুণ, প্রতিভা যে তাকে জনগণের কাছে আপন করে জনপ্রিয় করতে পারে মিতা হক তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এমনই একজন গুণী শিল্পীর জীবনাবসান বাংলাদেশে সংগীতাঙ্গনের জন্য একটা বিরাট ক্ষতি। বিশেষভাবে রবীন্দ্রসংগীতের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী।

অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী : একুশে পদকপ্রাপ্ত, শব্দসৈনিক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App