×

স্বাস্থ্য

‘অ্যাক্টেমরা’ দুষ্প্রাপ্য কেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৫৯ এএম

‘অ্যাক্টেমরা’ দুষ্প্রাপ্য কেন

অ্যাক্টেমরা

স্বজনদের দুর্ভোগ ও রোগীর মৃত্যু বাড়ছে

করোনা আক্রান্ত ব্যবসায়ী বাবার চিকিৎসায় একটি ইঞ্জেকশন পাবার জন্য প্রেসক্রিপশন হাতে রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসিতে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন দুই ভাই অর্ক ও অর্ঘ্য সাহা। তাদের সহযোগিতা করেছেন আত্মীয় ও স্বজনদের অনেকেই। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। দিন শেষে খালি হাতেই ফিরতে হলো সবাইকে।

গত ৮ এপ্রিল থেকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অর্ক ও অর্ঘ্যর বাবা। কান্না জড়ানো কণ্ঠে অর্ক ভোরের কাগজকে বলেন, বাবার শারীরিক অবস্থা ভালো না। একটি ইঞ্জেকশনের নাম লিখে ডাক্তার জানালেন, বাবার জন্য এটি লাগবে। আমরা কতগুলো মানুষ একটা ইঞ্জেকশনের জন্য পুরো ঢাকা শহর চষে বেড়িয়েছি। কিন্তু পাইনি। এদিকে ডাক্তার বলছেন, এই ইঞ্জেকশনটি দিলে বাবা ভালো হতে পারেন। আমার এক বন্ধু আমাকে বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের একটা পোস্টের স্ক্রিনশট পাঠিয়েছিল। সেখানে একটা নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছিল। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানলাম, ধানমন্ডি ২ নাম্বারে রেডিয়েন্ট ফার্মাতে গেলে ইঞ্জেকশনটা পাব। কিন্তু সেখানেও পেলাম না। কোথায় পাব এই ইঞ্জেকশন বলতে পারেন? বাবাকে কীভাবে বাঁচাব? কথাগুলো বলে ছোট ভাই অর্ঘ্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন অর্ক।

করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রবীণ সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অল্প কিছু দিন আগে। তার চিকিৎসায়ও ডাক্তাররা একটি ইঞ্জেকশন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি অনেক সিনিয়র সাংবাদিক, সাংবাদিক নেতা এবং চিকিৎসকদের অনেকেই এই ইঞ্জেকশনটি জোগাড়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল মারা যান সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার।

অর্কর বাবা এবং হাসান শাহরিয়ারের মতো করোনা আক্রান্ত অনেক গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা একটি ইঞ্জেকশন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বিশেষ করে আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে। ইঞ্জেকশনটির নাম অ্যাক্টেমরা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জীবনরক্ষাকারী এই ইঞ্জেকশনটি মিলছে না। ফলে অনেকেই মারা যাচ্ছেন।

এদিকে, বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) ফেসবুক গ্রুপের একটা পোস্টের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রয়োজনীয় পোস্ট হিসেবে অনেকেই তা শেয়ার করছেন। সেখানে লেখা, ইঞ্জেকশন অ্যাক্টেমরা এখন এভেইলেবল। কোনো চিকিৎসকের প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করুন। বিডিএফ-কোভিড টিম। ডা. মনজুর ০১৮১৯-২৭২ ০৬৩ নাম্বারে।

চিকিৎসকরা বলছেন, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই ইঞ্জেকশনে খুব ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। তাই এর বিশাল চাহিদাও রয়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী বাজারে এর সরবরাহ খুবই কম।

এ প্রসঙ্গে বিডিএফের চেয়ারম্যান ডা. শাহেদ রাফি পাভেল ভোরের কাগজকে বলেন, অ্যাক্ট্রেমরা বিদেশে উৎপন্ন হয়। সুইজারল্যান্ডের রোচে ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কাছ থেকে এটি আমদানি করে দেশে বিক্রি করে থাকে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থাও খুব দ্রুত খারাপ হচ্ছে। ফুসফুসে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। গুরুতর অসুস্থদের ক্ষেত্রে অ্যাক্ট্রেমরা ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এর সংকট রয়েছে। কারণ যারা এটি আমদানি করে থাকে তারাও অল্প পরিমাণে তা আমদানি করছে।

তিনি বলেন, অ্যাক্ট্রেমরা পেতে কিছু বিষয় মানতে হবে। একজন চাইলেই এটি কিনতে পারছেন না। এটি ব্যবহারের জন্য চিকিৎসাপত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ, রোগীর নাম, হাসপাতালের নাম উল্লেখ থাকতে হবে। সেটি রেডিয়েন্টের বুথে জমা দিতে হবে। সরবরাহ থাকলে তা দেয়া হয়।

এ বিষয়ে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্বব্যাপী অ্যাক্ট্রেমরা চাহিদা বেড়েছে। তাই প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানও জোগান দিতে হিমসিম খাচ্ছে। আমরা যে পরিমাণ চাহিদাপত্র দিচ্ছি তা অনেক সময় পাচ্ছি আবার অনেক সময় পুরোটা পাচ্ছিও না। আমাদের কাছেও এর সংকট রয়েছে। তবে রবিবার রাতে আমাদের কাছে কিছু ভায়াল অ্যাক্ট্রেমরা এসে পৌঁছেছে। সোমবার ভোর ৬টা থেকে আমরা আমাদের নির্ধারিত বুথ থেকে সেগুলো সরবরাহ করছি।

তিনি জানান, রবিবার রাতে চালান এসে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তাদের কাছে তিন শতাধিক চাহিদাপত্র জমা পড়েছিল। এর মধ্য থেকে গতকাল সকাল ৬টা থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক রোগীকে তা সরবরাহ করা হয়েছে। সব ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এবং রোগীরা যাতে সহজে তা পেতে পারে সেজন্য ধানমন্ডি, উত্তরা, মিরপুর এবং ওয়ারি এই চারটি বুথে অ্যাক্ট্রেমরা বিতরণ করা হয়।

তিনি বলেন, অ্যাক্ট্রেমরা সংকট নিয়ে কিছু মিডিয়া নেতিবাচক প্রতিবেদন করেছে। আমি বলতে চাই, আমাদের কাছে প্রতিটা জীবনই অমূল্য। প্রকৃতপক্ষে যেসব রোগীর প্রয়োজন চাহিদার ভিত্তিতে তাদের জন্য এটি সরবরাহের চেষ্টা করছি। আমরা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে আগেই আমাদের চাহিদার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা দিতে পারেনি। অ্যাক্ট্রেমার আসা এবং বিতরণ কার্যক্রমকে ঘিরে গত দুই সপ্তাহ রাত দিন আমরা আমার প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটি মানুষ খেটেছে।

দেশে অ্যাক্ট্রেমরার চাহিদা সম্পর্কে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান বলেন, এটি নির্ভর করছে চিকিৎসকের ওপর। যাদের অক্সিজেনের লেভেল কমে যাচ্ছে বা উঠানামা করছে এবং যাদের ফুসফুসে সংক্রমণ বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, এই ইঞ্জেকশন রোগীকে দেয়া হয়।

অ্যাক্টেমেরা ইঞ্জেকশন ৮০, ১৬০, ২০০, ৪৫০, ৫০০ মিলিগ্রামের শিশিতে পাওয়া যাচ্ছে। পরিমাণের ভিত্তিতে ১৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে একেকটি ইঞ্জেকশন। তবে অভিযোগ আছে ৯৮ হাজার টাকাতেও এই ইঞ্জেকশন বিক্রি হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App