×

সাহিত্য

১০ কোটি টাকা ‘জলে ফেলে’ ঘরে ফিরলেন প্রকাশকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২১, ১১:১৮ পিএম

১০ কোটি টাকা ‘জলে ফেলে’ ঘরে ফিরলেন প্রকাশকরা

ছবি: ভোরের কাগজ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আর মুজিববর্ষ ঘিরে এবার শত শত বই প্রকাশে প্রায় শত কোটি বিনিয়োগ করেছিলেন প্রকাশকরা। নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে কয়েক দফা পিছিয়ে বইমেলার আয়োজনও হয়েছিল। তবে করোনার থাবায় সময়ের হেরফেরসহ নানাবিধ কারণে মেলায় কাঙ্ক্ষিত বিক্রি না হওয়ায় বিনিয়োগের টাকা ঘরে তুলতে পারলেন না প্রকাশকরা। তাদের ভাষ্যমতে, বিনিয়োগের প্রায় ১০ কোটি টাকা জলে ফেলে দিয়েই তাদের ফিরতে হলো।

সোমবার (১২ এপ্রিল) মেলার পর্দা নামার দিন ক্ষয়-ক্ষতির খতিয়ান তুলে ধরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন হতাশার কথাই তুলে ধরা হয়েছে দেশের প্রকাশকদের ঐতিহ্য সংগঠন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পক্ষে। সংবাদ সম্মেলনে ১০ কোটি টাকা ক্ষতি পূরণের দাবি জানানো হয় সরকারের কাছে। বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গনে সমিতির পক্ষে দাবির কথা তুলে ধরেন সমিতির সহ-সভাপতি ও বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহবায়ক শ্যামল পাল।

মেলার সার্বিক বিষয় তুলে ধরে শ্যামল পাল বলেন, করোনাকালে দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাণিজ্যিক খাত আমাদের প্রকাশনা জগত। আমরা আশা করেছিলাম অমর একুশে বইমেলা ২০২১ আয়োজনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকরা বাণিজ্যিকভাবে কিছুটা লাভের মুখ দেখবো। এবারের বইমেলা হবে ইতিহাসের সেরা বইমেলা। কিন্তু করোনার জন্য এ বছরের বইমেলায় অর্থনৈতিকভাবে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়েছে প্রকাশকদের।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এবারের বইমেলায় অংশগ্রহণকারী সমিতিভূক্ত ৪১৩টি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রায় ৯০ কোটি টাকা লগ্নি এবং অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ প্রায় ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে মাত্র ২ কোটি ২৩ লাখ টাকার মতো। এমন পরিস্থিতিতে প্রকাশকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের অন্তত ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দাবি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একশ' কোটি টাকা বিশেষ বাজেটের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশনীর কাছ থেকে বই কেনা ও সহজ শর্তে ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রদানের আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সদস্যসহ প্রকাশকরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, মেলার শেষ দিনে এসেও বেচা বিক্রি ছিল একেবারেই হতাশাজনক। পাঠক বা ক্রেতাদের তেমন উপস্থিতিই ছিল না। স্টল গুটিয়ে নিতেই ব্যস্ত ছিলেন মালিক ও কর্মচারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রয় ব্যবস্থাপক বলেন, গত ৪ দিন ধরেই বিক্রি হচ্ছে না। আজ শেষ দিনেও তেমন একটা বিক্রি হচ্ছে না। ক্রেতাদের ভিড়ও কম। তাই আমরা মালামাল গোছাতে শুরু করলাম। যতক্ষণ থাকব ততক্ষণই পকেট থেকে টাকা বেরিয়ে যাবে।

করোনা ভাইরাসের কারণে এবার ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ১৮ মার্চ বইমেলা শুরু হয়। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলে। কিন্তু দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে ৩১ মার্চ বইমেলার সূচি পরিবর্তন করে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত করা হয়। পরে করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় সরকার সাতদিনের জন্য কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারির পর সময় পরিবর্তন করে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বইমেলা চালু রাখা হয়।

করোনা পরিস্থিতি ছাড়াও বারবার সময় পরিবর্তন করায় মেলায় পাঠক-দর্শনার্থীর উপস্থিতি তেমন ছিল না। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন প্রকাশকরা। ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা চলবে বলে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগেই (১২ এপ্রিল) শেষ হলো মেলা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App