×

জাতীয়

শাপলা চত্বরকাণ্ডে ৮৩ মামলা সচল, নতুন চাপে হেফাজত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৫৮ এএম

শাপলা চত্বরকাণ্ডে ৮৩ মামলা সচল, নতুন চাপে হেফাজত

ফাইল ছবি

রাজধানীর কয়েকটি স্থানসহ দেশের চারটি জেলায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, অস্ত্র লুটসহ নাশকতার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৭৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ বাদী হয়ে দায়ের করা এসব মামলায় হেফাজতের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও সাধারণ কর্মীরা আসামি। যার মধ্যে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। আসামির তালিকায় মদতদাতা হিসেবে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি নেতাকর্মীদের নামও রয়েছে। চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জ পুলিশ দাবি করছে মামলার আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। একাধিক মামলার আসামি হেফাজতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে ধরতে সরকারের সবুজ সংকেত পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরকাণ্ডে হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত ৮৩টি পুরনো মামলার তদন্ত শেষ করে বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় ৩ হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামি করা হয়। নতুন ৭৮ মামলায় আসামি প্রায় ৫০ হাজার। নতুন ও পুরনো মিলিয়ে ১৫৭ মামলায় হেফাজতের লাখের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। আসামিদের অধিকাংশ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হওয়ায় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। তবে তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দায়েরকৃত ৪৮টি মামলায় হেফাজতের ৩০ হাজার নেতাকর্মী আসামি। চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় ৬টি, নারায়ণগঞ্জ জেলার তিন থানায় ১৬ মামলা, ঢাকার পল্টন থানার দুটি ও মতিঝিল থানার দুই মামলায় আসামি প্রায় ২০ হাজার। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেছেন, মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় যে কোনো ব্যবস্থা নিতে কার্পণ্য করবে না পুলিশ। যে কোনো প্রকার অপরাধ দমন, নিয়ন্ত্রণ ও তার তদন্তের জন্য সুনির্দিষ্ট যে আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে সেই অনুযায়ী কাজ করছে পুলিশ।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ভ‚মি অফিসে তাণ্ডব, থানা ভবনে হামলা, ডাকবাংলোয় আগুন দেয়ার অভিযোগে ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলার বাদী পুলিশ ও দুটি দায়ের করেন ভ‚মি অফিসের কর্মকর্তারা। হাটহাজারী থানায় এসব মামলা করা হয়। ভ‚মি অফিসের করা মামলা দুটিতে ৪০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। থানায় হামলা মামলায় অজ্ঞাত অন্তত দুই হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রশিদুল জানান, জড়িতদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কারো ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মামলার অনেক আসামি আটক হয়েছে। অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে। তাদের ব্যাপারে পুলিশের নীতি জিরো টলারেন্স।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেছেন, সোনারগাঁও, সিদ্ধিরগঞ্জ ও রূপগঞ্জ থানায় হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে এ পর্যন্ত ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা করছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর পল্টন থানায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা লোকমান হাকিম, যুগ্ম মহাসচিব নাসির উদ্দিন মনির, নায়েবে আমির মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, নায়েবে আমির ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাজেদুর রহমান, লালবাগের মাওলনা হাবিবুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মাসুদুল করিম, মুফতি মনির হোসেন কাসেমী, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, মাওলানা ফয়সাল আহমেদ, মাওলানা মুশতাকুন্নবী, মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের, মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ তৈয়ব আসামি। নজরদারিতে আছেন শীর্ষ নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, মাজেদুর রহমান, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা মাসুদুল করিম, মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী, মাওলানা যাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নাসির উদ্দিন মনির, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা ফয়সাল আহমেদ, মাওলানা মুশতাকুন্নবী, মাওলানা হাফেজ মো. জোবায়ের এবং মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়ব প্রমুখ। হেফাজত নেতা রফিকুল ইসলাম মাদানী গ্রেপ্তারের পর কারাগারে আছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হেফাজতে ইসলাম নেতা মাওলানা আজিজুল হক মোল্লার তিন দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন।

এদিকে হেফাজতের যেসব নেতার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা আছে তাদের তালিকা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এরইমধ্যে তালিকাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় ঢাকাসহ সারাদেশে যেসব মামলা হয়েছিল সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। নির্দেশনা পেয়ে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কাজও শুরু করে দিয়েছে। ২০১৩ সালে তাণ্ডবের ঘটনায় হেফাজতের তৎকালীন মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাস (সম্প্রতি মারা গেছেন), বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাসহ ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান। বাকিরা জামিনে মুক্ত। যারা জামিন নিয়ে তাণ্ডবে অংশ নিয়েছিল বা ইন্ধন জুগিয়েছে তাদের জামিন বাতিল করতে আদালতে আবেদন করা হবে। ওই সময় ঢাকাসহ ৭টি জেলায় ৮৩টি মামলা হয়। এসব মামলায় ৩ হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামি করা হয়। ওই সময়ে শাপলা চত্বর ঘেরাওয়ের নামে ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর পর ঝুলে থাকা মামলাগুলোর বিষয়েও বিশেষ বার্তা দেয়া হয়েছে। সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের কারা সক্রিয় এবং তারা ফেসবুকে কী প্রচার করেন সে ব্যাপারে খোঁজ করছে পুলিশ। তাণ্ডবে উসকানি দেয়ার পর তাদের অনেকের ফেসবুক একাউন্ট নিষ্ক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। অনেকে মুছে ফেলেছে পুরনো পোস্ট।

এছাড়া ফরিদপুরের সালথায় লকডাউন বাস্তবায়ন করতে যাওয়া প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে স্থানীয়দের বাগবিতণ্ডার পর আগুন-হামলার মামলায় ৮৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরো তিন থেকে চার হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। সালথা থানার ওসি মো. আসিকুজ্জমান এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App