×

সাহিত্য

লোকসান ও হতাশা নিয়ে আজ শেষ হচ্ছে বইমেলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২১, ১০:২০ এএম

দেশব্যাপী লকডাউনের পূর্ব ঘোষণার কারণে দুদিন আগে শেষ হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা চলার কথা ছিল। তবে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সরকার সর্বাত্মক বা কঠোর লকডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে। সেক্ষেত্রে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছুই বন্ধ থাকবে।

সবকিছুর মধ্যে লোকসানের মুখে পড়েছে স্টলের মালিকরা। দেশজুড়ে লকডাউনের মধ্যে রাস্তায় গণপরিবহন বিশেষ নেই। এর মধ্যে দুদিন তো বাস ছিলই না। বাস চললেও রাজধানীর পথে চেনা সেই ভিড় দেখা যায়নি। বইমেলার পরিস্থিতিও ছিল একই রকম। চৈত্রের কাঠফাটা রোদের দুপুরে সময় অনুযায়ী ১২টায় মেলা খুললেও পাঠক কিংবা ক্রেতা নেই বললেই চলে।

বিক্রেতাদের স্টলে বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ নেই। রোদের তাপ কমে এলে তিনটার পর একজন-দুজন করে লোক মেলার মাঠে আসতে দেখা গেলেও বিক্রির সংখ্যা সেরকম নয়। বিক্রি নেই বললেই চলে।

ছোট প্রকাশকদের খুবই খারাপ অবস্থা। বেচাকেনা শূন্য, মেলা খোলা বলে স্টল খুলতে হচ্ছে। বরং খরচই বেশি হচ্ছে। বইমেলা আগাম বন্ধের বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন স্টল মালিক ও প্রকাশকরা। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত। বইমেলা চত্বর থেকে আমরা নিজেদের মতো করে বই পুস্তক ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরিয়ে নেব। তবে সরকারের কাছে আবেদন সরকার যেন নিজ উদ্যোগে প্রকাশকদের রক্ষায় এগিয়ে আসে।

ম্যাগনাম ওপাসের প্রকাশক আনোয়ার ফরিদী আজ মেলার মাঠে বললেন, একেবারেই অসহ্য পরিস্থিতি। গত তিন দিনে ১০০০ টাকার বইও বিক্রি হয়নি তাঁর স্টলে। দুজন কর্মচারী। রোজ তাঁদের ৬০০ টাকা দিতে হচ্ছে।

এতো খরচের পরও স্টল কেন বন্ধ করছে না তারা এ প্রশ্নের উত্তরে এক প্রকাশক বলেন, ভয়ে স্টল বন্ধ করছি না। স্টল বন্ধ করে দিলে আগামী বছর হয়তো স্টলের বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। সবার মনেই এই ভয় কাজ করছে। এ জন্যই ক্ষতি মেনেও স্টল খোলা রাখছেন সবাই।

সুবর্ণ প্রকাশনের বিক্রয় প্রতিনিধি রতন কুমার দে বলেন, দুইদিন আগে বন্ধ হওয়ায় খুশিই হয়েছি। কারণ খরচা করছি এক হাজার টাকা, বিক্রি করছি পাঁচশ টাকা। স্টলের অবকাঠামো নির্মান করতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা করচ হয়েছে। তাই আগেই চলে যেতে পারলে বাঁচি।

অনিন্দ্য প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আফজাল হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে আমি খুশি। বাঁচি আর মরি ডাল ভাত খেয়ে অন্তত বাড়িতে থেকেই মরি।

প্রকাশনা সংস্থা শব্দ শৈলীর কর্ণধার ইফতেখার আমিন বলেন, এমনিতে কফিনে ছিলাম। এবার শেষ পেরেকটা মেরে দিলেন। এবারের মেলা আমাদেরকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। স্মরণকালের সবচেয়ে ব্যর্থ মেলা হিসেবেও এবারের মেলাকে অভিহিত করেন এই প্রকাশক। তিনি আরও বলেন, আমাদের এক ক্ষতি করেছে করোনা আরেক ক্ষতি করেছে বাংলা একাডেমির বেঁধে দেওয়া দুপুর ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পরিবর্তিত সময়সূচি। করোনার কারণে আমরা যতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি অফ-পিক সময়সূচি। ৫টায় মেলা বন্ধ আর সাড়ে ৪টায় মেলার প্রবেশদ্বার বন্ধ করার ফলে অনেকেই নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বাংলা একাডেমির এই অদূরদর্শি সিদ্ধান্তের কারণে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ।

অন্বেষা কর্নধার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, দইদিন আগে বন্ধ হওয়ায় ভালোই হয়েছে। এতে প্রকাশকদের ভালো মন্দ আর কিছুই নেই। তবে এর রেশ টানতে এক বছর। এ মুহূর্তে প্রকাশকদের পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারকে। কারণ প্রকাশকরা শুধু ব্যবসা করে না, জাতিকে শিক্ষার আলো দেখা দেখায়। এটা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।

পলল প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী খান মাহবুব বলেন, দুই আগেই মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে এটাই বাস্তবতা।

কথাসাহিত্যিক মোশতাক আহমেদ বলেন, দেশের স্বার্থে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা আমি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছি। কারণ আগে জীবন তারপরই মেলা।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী জানিয়েছেন, আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত সময় ছিল বইমেলার। তবে ওইদিনই দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন দেয়া হবে। তাই স্টল সরানো এবং আনুষঙ্গিক কাজের জন্য মেলার সময় দুদিন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

লকডাউন ঘোষণার কারণে নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগে বইমেলা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।এদিকে, দুদিন আগেই বন্ধের ঘোষণার পর বইমেলা চত্বরে প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই স্টল গুটিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাড়তি বই এর আগেই প্রকাশকরা তাদের অফিসে অফিসে ফেরত নিয়ে গেছেন। এখন বাকি আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। গতকালও মেলায় ক্রেতা পাঠকদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে বিক্রির পরিমাণ খুব বেশি বাড়েনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App