×

মুক্তচিন্তা

‘প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় কিভাবে জনসম্মুখে আসে ইউজিসির প্রতিবেদন?’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২১, ১০:২০ পিএম

‘প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় কিভাবে জনসম্মুখে আসে ইউজিসির প্রতিবেদন?’

অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর

বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে নেতিবাচক প্রচারের ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন উপাচার্যঅধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর। তিনি বলেন, প্রক্রিয়াধীন থাকা ইউজিসির প্রতিবেদন কী করে জনসম্মুখে আসে? ইউজিসির প্রতিবেদনের প্রতিটি ফাইন্ডিংসের যথাযথ উত্তর দিতে প্রস্তুত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। তা নিয়ে এখনও কাজ চলছে। এই প্রতিবেদন নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই কী করে তা জনসম্মুখে আসে? এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্নের পাশাপাশি উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই মনে হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও প্রশ্ন করতে বাধ্য হচ্ছি, এভাবে চলতে থাকলে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা উপাচার্য আদৌ কি কোন ধরনের কাজ করতে পারবেন?

উপাচার্য বলেন, সরকারি সকল নিয়ম মেনে কাজ করার পরেও এভাবে যদি একটি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের পাবলিকলি অপমানিত করা হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করতে অনুৎসাহিত হবেন। জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় যা প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তা জন্মের শুরুতেই হোঁচট খাবে। এ ব্যাপারে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য হচ্ছি। যদি কেউ অন্যায় করে থাকে তা নিয়ে লেখা হোক, কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যেন সব কিছুকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা না হয়। অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর জানান, ইউজিসির প্রতিবেদনে ঢাকা ও কালিয়াকৈরে একাধিক ভবন ভাড়া করার বিষয়ে নিয়ন্ত্রিত দরপত্রের কথা বলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত দরপত্র বিষয়টি আসলে কি তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা তো ওপেন টেন্ডার অথবা রিকোয়েস্ট ফর কোটেশনের (আর এফ কিউ) মাধ্যমে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। কালিয়াকৈরের মতো জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যে বাসা পাওয়া গেছে তা আমাদের কাছে অনেক বড় বিষয় মনে হয়েছে। এর আগে তো ওখানে এই ধরনের সংস্কৃতি চালু ছিল না। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে তাও সঠিক নয়। কারণ আমরা প্রচলিত ভাড়া থেকে অনেক কমেই এই বাসা ভাড়া করেছি। এ ছাড়া ইউজিসির ২০ আপত্তির মধ্যে স্থানান্তর অযোগ্য পূর্ত কাজের কথা বলা হয়েছে। আসলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য তো কিছু কাজ করতেই হয়। কিছু ডেকোরেশন, চেয়ার, টেবিল, আলমারি এগুলো ক্রয় করা ব্যতিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে পরিচালনা করবো? আর এগুলোর একটিও স্থানান্তর অযোগ্য নয়। কিছু ফিক্সড আলমারি ডেকোরেশনের জন্য করা হয়েছে। এগুলোও স্থানান্তর যোগ্য। একটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় যদি ভাড়া বাড়িতে শুরু করতে হয় তার জন্য একটা ব্লাকবোর্ড তো কিনতে হবে। টিচার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার জায়গা দিতে হবে। কম্পিউটারের লাইন টানার জন্য কিছু কাজ তো করতেই হয়েছে। এগুলোর একটাও স্থানান্তর অযোগ্য নয়। ভাড়া করা বাড়িতে আমরা টাইলস এবং প্লাস্টার করেছি এই কথাটি একেবারেই সঠিক নয়। আমার জানা মতে আমরা ভাড়া বাড়িতে কোন ধরনের টাইলস এবং প্লাস্টার করিনি। এ ধরনের তথ্য কারা দিয়েছে তা আমাদের জানা নেই। তিনি আরও বলেন, এটা সবারই জানা থাকার কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য কোন ধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোনভাবেই জড়িত থাকে না। এই টেন্ডারের জন্য টেন্ডার ইভালুয়েশন নামে একটি কমিটি আছে, একটি ইস্টিমেট কমিটি আছে যারা ইস্টিমেট করেন। টেন্ডার ওপেনিং কমিটিও আছে। যেখানে আমাদের অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক এগুলোর সভাপতি। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরের এবং ভিতরের সদস্যরাও আছে। যার কোন প্রক্রিয়ার সঙ্গে উপাচার্য যুক্ত থাকেন না। পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী টেন্ডারের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পর যদি কোন কোম্পানি বারবার টেন্ডার পেয়ে থাকে তাতে উপাচার্য কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কি করার আছে? যে প্রতিষ্ঠান কাজ পাচ্ছে তাকে টেন্ডার সাবমিট না করতে বলা কি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাজ? যদি তাকে টেন্ডার সাবমিট করতে না বলা হয়, তাহলে তা কি পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী অবৈধ হবে না? তার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট রয়েছে যার অধিকাংশ সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরের। যেখানে সচিব এবং সিনিয়র সচিবের সংখ্যা ৫ জন। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্য এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মনোনিত ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, আমার প্রশ্ন, কোন কোম্পানি কার সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করবে- তা কি উপাচার্য কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জানার কথা? কোন কোম্পানির সঙ্গে কোন কোম্পানির সম্পর্ক- তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যে কোম্পানিগুলো কাজ পাচ্ছে তার সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কারোর কোন ধরনের সম্পর্ক নেই। বরং এদের বাধা দেওয়াটাই হবে আইনগতভাবে অবৈধ। যেহেতু এটা পিপিআর অনুসরণ করে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে করা হচ্ছে। প্রতিটা টেন্ডারে ন্যুনতম ৪ থেকে ৫টি কোম্পানি তাদের টেন্ডার শিডিউল সাবমিট করে। কোন দিন এই টেন্ডার ড্রপ করা নিয়ে কোন ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। কোন ধরনের অভিযোগ উত্থাপিতও হয়নি। এই টেন্ডার শুধু এক জায়গায় সাবমিট করা হয় না। কালিয়াকৈর এবং নগর কার্যালয় উভয় স্থানে ঠিকাদাররা টেন্ডার সাবমিট করতে পারেন। একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা এখন ইজিপিতে যাওয়ারও চিন্তা করছি। সম্প্রতি দরপত্র কম পড়ায় একটি টেন্ডার বাতিল করে পুনরায় ওপেন টেন্ডার দিয়েছি। এর পরেও একই ধরনের কোম্পানিগুলোই কাজ পাচ্ছে। তাহলে সেখানে আমাদের কী করার আছে? উপাচার্যের একমাত্র ক্ষমতা আছে টেন্ডার বাতিল করার। টেন্ডার দেওয়ার তো কোন ক্ষমতা উপাচার্যের নেই। উপাচার্য বলেন,  ইউজিসির প্রতিবেদনে ২০ আপত্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আপত্তির অধিকাংশই হচ্ছে নিয়ম মেনে কাজ করার পরেও অনুমাননির্ভর আপত্তি। ইউজিসি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এসে তো সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বাজেট চায় না। আমরা যাই বলি না কেন, ইউজিসি শুধু তার বাজেটই দিয়ে যায়।  তারা বাজেট নির্দিষ্ট করে দেয়। ইউজিসির একজন সিনিয়র সহকারী পরিচালক এসে বলে দেন যে, এর বেশি বাজেট আপনারা এই বছর পাবেন না। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন কমিটির যে কোন সিদ্ধান্তকে তারা মানতে নারাজ। তবে ইউজিসি যে সকল বিষয়ে ফাইন্ডিং দিয়েছে তার জবাব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত করছে। যথাসময়ে তা ইউজিসিতে জমা দেওয়া হবে। কিন্তু এখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুবই হতাশ যে, এমন একটি প্রতিবেদন ইউজিসি থেকে কিভাবে পাবলিকলি চলে যায়! যেটা সরকারি কাজ সেটা কিভাবে পাবলিকলি চলে যায়! এটা কি উদ্দেশ্য প্রণোদিত? এটা কি একজন মানুষকে অসত্য তথ্য দিয়ে সমাজের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য নয় কি? যেখানে বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা মনে করি, প্রতিবেদনটি একজন ব্যক্তির মতামত। এ কখনোই ইউজিসির মতামত নয়। তিনি আইনগতভাবে অনেক কিছুর মতামত দেননি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। আর যেগুলো আইনের ব্যত্যয় ঘটছে তার বিষয়ে তো আইনি পদক্ষেপ নেওয়াই হবে। এই প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় কিভাবে প্রতিবেদনটি বাহিরে চলে যায়? যাচাই প্রক্রিয়ার পর হয়তো দেখা যাবে এই বিশ আপত্তির মধ্যে অনেক অভিযোগেরই আইনগত কোন ভিত্তি নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App