×

জাতীয়

খালেদা সালামের উত্তর না দিয়েই মুখ ঘুরিয়ে ফেলেন: শিক্ষা উপমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৪০ পিএম

খালেদা সালামের উত্তর না দিয়েই মুখ ঘুরিয়ে ফেলেন: শিক্ষা উপমন্ত্রী

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ছবি সংগৃহিত

খালেদা সালামের উত্তর না দিয়েই মুখ ঘুরিয়ে ফেলেন: শিক্ষা উপমন্ত্রী

ফাইল ছবি

আমার বাবা এবি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত আক্রোশ সবসময়ই ছিলো। ২০১০ সালে এক বিবাহ অনুষ্ঠানে জীবনে একবার তার সঙ্গে দেখা হয় আমার। উপস্থিত একজন উনাকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই, পিতৃ পরিচয় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খালেদা জিয়া সালামের উত্তর না দিয়ে প্রত্যাখ্যান ভরে মুখ ঘুরিয়ে ফেলেন! একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়া দেখে হতবাক হয়েছিলাম সেদিন আমি! আজকে তিনি করোনা আক্রান্ত। দন্ড-প্রাপ্ত হয়েও ঘরে বসেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। হয়তো জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ভ্যাকসিনও পাবেন। আসামি হয়েও দেশের নাগরিক হিসেবে সব অধিকার এবং সুবিধা প্রাপ্ত হবেন, যেই সব অধিকার তিনি অন্যের জন্য হরণ করেছিলেন। সোমবার (১২ এপ্রিল) নিজের ফেসবুক পেজে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। যিনি চট্টল বীর খ্যাত সাবেক মেয়র প্রয়াত এবি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র। শিক্ষা উপমন্ত্রী তার লেখায় খালেদা জিয়া কর্তৃক তার বাবার নানা বঞ্ছণা ও নির্যাতনের কথাও তুলে ধরেন। লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো,

‘খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর শুনে কিছু ব্যক্তিগত স্মৃতির কথা আজ মনে পড়লো। আমার বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সাড়ে ষোল বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ে সাত বছর খালেদা জিয়া ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। ৯৪ সালে তিনি চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে প্রথম নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েছিলেন ফলাফল উল্টে বিএনপির মেয়রকে বিজয়ী দেখাতে। সেইবার প্রথম নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিজয় ছিনিয়ে আনেন।

নির্বাচিত হওয়ার পরে দায়িত্ব নিতে গিয়ে আমার বাবা দেখলেন রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ছবি কার্যালয়ে রাখতে হবে! বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ কর্মীর মাথার উপরে খালেদার ছবি থাকবে এই বিষয়টি তিনি মানতে পারছিলেন না। এই কারনে তিনি তার সরকারী কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের যুক্তি দেখালেন কোনো রাষ্ট্রীয় বিধানে বঙ্গবন্ধুর ছবি রাখার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা যেহেতু নেই, মাথার উপরে জাতির পিতার ছবি ঝুলিয়ে, রাষ্ট্রাচার রক্ষার্থে রুম থেকে বের হওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রীর ছবিও ঝোলালেন! প্রস্থানের পথে নিয়ম রক্ষার জন্য খালেদা জিয়ার ছবি, আর নিজের মাথার উপরে সসম্মানে জাতির পিতার ছবি। সাপও মরলো লাঠিও ভাংতে হলো না। খালেদা জিয়া অবশ্য বিষয়গুলো ভালোভাবে নেননি।

এক বছরের মাথায় আমার বাবার ওপেন হার্ট সার্জারীর প্রয়োজন হয়, হাতে টাকা নেই। সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে সাহায্য চাওয়া হলে উত্তর আসে রাষ্ট্রীয় তহবিলে তিন লাখ টাকা দেওয়ার টাকাও নাকি নাই! পরে দেড় বছরের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, আবার ব্যাপক গণ আন্দোলনের মুখে কিছু দিনের মধ্যেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, সর্বসাকুল্য বিএনপির সাত বছরে (৯৪-৯৬, ২০০১-২০০৬) সর্বমোট দুর্নীতির মামলা দিয়েছিলেন আমার বাবার বিরুদ্ধে বিশটি! দুর্নীতি দমন ব্যুরো তখন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অধীনে ছিলো। ছয়টি মামলাই হয় ছয় বছরে, প্রতি অর্থ বছরে কি কারনে পাঁচশো টাকা করে হোল্ডিং ট্যাক্স কমানো হলো এর জন্য! এই বিশটি মামলার অনেকগুলো মাথায় নিয়েই আমার বাবা মৃত্যুবরণ করেন।

পরেরবার ২০০৫ সালে বেগম জিয়া এবং তার পুত্র তারেক রহমান মিলে আবারো নির্বাচনের ফল উল্টানোর চেষ্টা করেও বিফলে গিয়েছিলেন। নির্বাচনের প্রচারণার সময়ে গুলি করে মানুষ মারা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের উপরে মামলা হামলা সবকিছুই বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশেই হয়। খালেদা জিয়া নিজে এসে সভা করে গিয়েছিলেন, নিজের মন্ত্রীসভার একজনকে মন্ত্রী হিসেবে রেখে মেয়রের নির্বাচনে নামিয়ে ছিলেন! ব্যালট ভিতরে ঢুকিয়ে রেখেও হেরে যান বেগম জিয়ার প্রার্থী। এত কিছুর পরেও শিষ্টাচার রক্ষার্থে ব্যক্তি হিসেবে তবুও কখনো আমার বাবা জন সমক্ষে কোনো কটু মন্তব্য করেন নাই। কিন্তু খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত আক্রোশ সব সময়ই ছিলো। ২০১০ সালের দিকে এক বিবাহ অনুষ্ঠানে জীবনে একবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা হয় আমার। উপস্থিত একজন উনাকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই, পিতৃপরিচয় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খালেদা জিয়া সালামের উত্তর না দিয়ে প্রত্যাখ্যান ভরে মুখ ঘুরিয়ে ফেলেন! একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়া দেখে হতবাক হয়েছিলাম সেদিন আমি! বেগম জিয়ার শাসনামলের লাশের মিছিল, বঙ্গবন্ধুর কন্যার উপরে গ্রেনেড হামলা, এগুলোর কথা নাই বললাম। আজ করোনা সংক্রমণের এই সময়ে তিনি দন্ড-প্রাপ্ত হয়েও নির্বাহী দয়ায় ঘরে বসেই চিকিৎসা পাচ্ছেন, হয়তোবা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ভেক্সিনও পাবেন। বাংলাদেশ আজ অনেক দূর এগিয়েছে। বেগম জিয়ার হিংসা, খুন, আর জিঘাংসার রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে হাজার মাইল এগিয়ে আজ। তথ্য প্রযুক্তির ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে খালেদা জিয়ার কর্মীরা ফেসবুক আর টেলিভিশনের পর্দা ঝাপিয়ে সরকারের সমালোচনা আলোচনা করছেন। এই প্রযুক্তিই বেগম জিয়া নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার দোহাই দিয়ে দেশে আনতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাসীর বিস্ময়, করোনা মহামারী প্রতিরোধী সক্ষমতার বৈশ্বিক অর্থনীতির একটি এই দেশ। ভেক্সিন দিচ্ছে, যথাসাধ্য চেষ্টা করছে মানুষকে বাঁচিয়ে অর্থনীতি সচল রাখতে। এই এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে, বেগম জিয়া রাষ্ট্রের যথাযথ সুযোগ সুবিধা করোনা রোগী হিসেবে পাবেন অবশ্যই। তিনি নিজে তার শাসনামলে যা করেছিলেন হয়তোবা সেগুলো নিয়ে তিনি ভাববেন, হয়তবা কিছুই তিনি ভাববেন না। দেশের নাগরিক হিসেবে সকল অধিকার এবং সুবিধা তিনি প্রাপ্ত হবেন, যেই সকল অধিকার তিনি অন্যের জন্য হরণ করেছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App