×

জাতীয়

বইমেলা নিয়ে হতাশা: শুধু তুমি ছিলে না বলে আলো জ্বলল না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৪২ পিএম

বইমেলা নিয়ে হতাশা: শুধু তুমি ছিলে না বলে আলো জ্বলল না

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ঘিরে ছিল নানা প্রেক্ষাপটে লেখা অজস্র বই, শুধু ছিলো না কাঙিক্ষত পাঠক। ছবি: ভোরের কাগজ

বইমেলা নিয়ে হতাশা: শুধু তুমি ছিলে না বলে আলো জ্বলল না
বইমেলা নিয়ে হতাশা: শুধু তুমি ছিলে না বলে আলো জ্বলল না

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ঘিরে ছিল নানা প্রেক্ষাপটে লেখা অজস্র বই, ছিল মুজিব জন্মশতবর্ষ ঘিরে বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে নানা গবেষণা আর স্মৃতিচারণমূলক বই, ছিল নানা প্রেক্ষাপটে লেখা মুক্তিযুদ্ধের বইও, ছিল আলোঝলমল প্যাভিলিয়নও, ছিল প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়ার উন্মুক্ত আকাশ, স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভের চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানিসিহ সবই ছিল। শুধু ছিল না কাঙ্ক্ষিত পাঠক! অনেকটা মান্না দের সেই গানের মতোই দ্বীপ ছিল শিখা ছিল শুধু তুমি ছিলে না বলে আলো জ্বলল না...।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আর মুজিববর্ষ ঘিরে এবার শত শত বই প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। স্বাধীনতার সোনালি অধ্যায়, বঙ্গবন্ধু, ইতিহাস, রাজনীতির গবেষণাভিত্তিক অতি মূল্যবান এসব বই পাঠকদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন তারা। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে অমর একুশে বইমেলার আয়োজনও হয়েছিল। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে তাদের সব সম্ভাবনাকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে গেছে। হতাশ প্রকাশকরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতেও ভয় পাচ্ছেন। আগামীতে পাঠকদের হাতে এসব বই তুলে দেয়ার সুযোগ পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত তারা।

প্রকাশকরা বলছেন, সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল। দফায় দফায় পিছিয়ে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে অবশেষে স্বাধীনতার মাসে বইমেলার আয়োজনও হলো। মেলার দরজা খোলার পর প্রকাশিত বইগুলো শেষ অবধি স্টলে স্টলে নিয়ে আসা হয়। তবে দ্বিতীয় দফার করোনার হানা সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। সময়সূচি আর স্বাস্থ্য বিধির কড়াকড়ি আরোপের কারণে শেষ অবধি পাঠক আসতে না পারায় মেলা জমে উঠেনি। এতে কাক্সিক্ষত বইগুলো পাঠকের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হলো না।

জানতে চাইলে অন্বেষা প্রকাশনীর কর্ণধার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আর মুজিববর্ষ ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশের জন্য ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। প্রায় শতাধিক বইও প্রকাশ করেছি। ভেবেছিলাম, মেলায় বিক্রি হবে এসব বই। তবে প্রকৃতপক্ষে যারা এসব বইয়ের ক্রেতা তাদের দেখা পাওয়া যায়নি মেলায়।

 

শব্দশৈলীর প্রকাশক ইফতেখার আমিন বলেন, মেলা হবে হবে না এমন দোদুল্যমানতার মধ্যেও এবারের মেলায় ২০ লাখেরও অধিক অর্থ বিনিয়োগ করেছি। শেষ অবধি কিন্তু মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রত্যাশাও ছিল, দীর্ঘদিন ধরে মানুষ গৃহবন্দী, তাই মেলায় অন্তত আসবে। বই বিক্রিও হবে বেশি। তবে করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলায় বইমেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।

পুঁথি নিলয়ের ম্যানেজার আলমগীর অরণ্য বলেন, আমাদের অবস্থা সেই গানের মতো হয়েছে- ‘দ্বীপ ছিল, শিখা ছিল, শুধু তুমি ছিলে না বলে আলো জ্বললো না...’। সত্যিই আমাদের প্রকাশিত অনেক মূল্যবান বই ছিল, মেলার আয়োজন ছিল মাসব্যাপী, প্রচার-প্রচারণাও ছিল, শুধু বই কেনার সেই উৎসাহী পাঠক না আসায় আশা পূরণ হলো না। ২৪ দিনে মাত্র ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছি মাত্র। তবে করোনার দাপট কমে গেলে বইগুলো পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার যে পরিকল্পনা করবো সেক্ষেত্রেও শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কবে করোনার বিদায় ঘণ্টা বাজবে তা আমরা কেউ জানি না।

অনিন্দ্য প্রকাশনীর আফজাল হোসেন বলেন, এ বছর ৬০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছি। টার্গেট ছিল ৭০ থেকে ৯০ লাখ বিক্রি করব। কিন্তু করোনা সব শেষ করে দিল। জানি না এই ধকল কতদিন টানতে হয়।

আগামি প্রকাশনির একজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, এ বছর প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সেরা লেখকদের লেখা ১১৯টি বই প্রকাশ করেছে। কিন্তু ওভাবে বিক্রি হয়নি।

অবসর প্রকশনীর ম্যানেজার মানুদ রানা জানালেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় ৫০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছে। বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬ লাখের মতো। বিক্রিতে এমন ভয়াবহ ধস নামবে কল্পনাও করতে পারিনি।

রবিবার (১১ এপ্রিল) বইমেলার ২৫তম দিনে দুয়েকটা প্যাভিলিয়নে ভিড় দেখা গেলেও গোটা চত্বরই ছিল অনেকটাই ফাঁকা। স্টল আর চত্বরজুড়ে বিদায়ের সুর। হাতে গোনা কিছু পাঠক বা ক্রেতা এসেছিলেন। তারা হাতে গোনা কিছু স্টল থেকে বই কিনে ফেরত গেছেন। স্টল মালিকদের মধ্যে আগের মতোই দেখা গেছে হতাশা। অনেকেই স্টল গোছাতে শুরু করেছেন। কোনো কোনো প্রকাশক স্টলের বইগুলো অফিসে ফেরত নিতে শুরু করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App