×

মুক্তচিন্তা

নৌপথে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২১, ১২:০৯ এএম

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের অভ্যন্তরে আঁকাবাঁকা নদী জালের মতো বিস্তৃত হয়ে আছে। এসব নদী অনেক আগে থেকেই যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তুলনামূলকভাবে সহজ ও ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ার কারণেই মানুষ নৌপথকে গুরুত্ব দিচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, নৌপথের সুবিধা গ্রহণ করে বিশ্বের অনেক দেশ উন্নয়ন সাধন করেছে। নৌপথের গুরুত্ব বিবেচনা করে অন্যান্য দেশ এ যাতায়াত ব্যবস্থাকে আধুনিক ও নিরাপদ করলেও আমাদের দেশে নৌপথের নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ নৌরুটে প্রতিনিয়ত অসংখ্য যাত্রী ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করছে এবং প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে বালুবোঝাই কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় ৩৪ জনের মৃত্যু আমাদের দেশের নৌপরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তাকে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ করল। কতটা নিরাপদ আমাদের নৌপথ? প্রতিনিয়তই এমন দুর্ঘটনা নৌপথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের কপালে দুশ্চিন্তার রেখা টেনে দিলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েছে কি? বিগত বছরগুলোতে এ দেশের নদীপথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ফিটনেসবিহীন নৌযান, নৌযান মালিকদের দায়িত্বহীনতা, অদক্ষ চালক এবং অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে সামান্য কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করেই কর্তৃপক্ষ দায়মুক্তি পেতে চায়। যাত্রী সাধারণের নিরাপদে নৌপথ চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটুকু ভূমিকা রাখছে তাও পরিষ্কার নয়। নৌপথে নিরাপত্তার জন্য সরকার ২০০৮ সালে নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে একটি নতুন বিভাগের সৃষ্টি করে। এ বিভাগের কার্যাবলির মধ্যে যাত্রীবাহী নৌযানের রুট পারমিট বা সময়সূচি অনুমোদন, বিধি ভঙ্গের দায়ে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, নৌপথে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ অন্যতম। কিন্তু এ বিভাগের কার্যক্রম কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ফিটনেসবিহীন নৌযান দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। অথচ এসব ফিটনেসবিহীন নৌযানকে বিভিন্নভাবে রুট পারমিট প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষ করে ঈদের সময় বাড়তি যাত্রীর চাপ সামাল দিতে এসব ফিটনেসবিহীন নৌযানের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে যাত্রী পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। আবার অদক্ষ চালকের কারণেও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব অপ্রশিক্ষিত চালকের হাতে নৌযানগুলোর দায়িত্ব দেয়ার কারণে মালিকপক্ষ সমানভাবে দায়ী। ফিটনেসবিহীন নৌযান ও অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। যত দিন যাচ্ছে নদী পথগুলোতে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচল তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে অনেক সময় নৌযানগুলোর মধ্যকার সংঘর্ষের ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। কয়েক বছরে নৌযান চলাচলের সময় পরস্পর সংঘর্ষের ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য নৌপথে কার্যকরী ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া নৌদুর্ঘটনার আরেকটি অন্যতম কারণ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নৌদুর্ঘটনা এড়াতে অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরগুলোতে আবহাওয়া সংকেত প্রদর্শন ও নৌযানগুলোতে সিগন্যাল প্রদানের মাধ্যমে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিগত বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর এর জন্য অভিযুক্ত চালক ও মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সচরাচর দেখা যায় না। যার ফলে নৌযান চালকরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নৌপথে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে আমাদের দেশে আইন রয়েছে যা অতি দুর্বল। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। আসছে রোজার ঈদে প্রতিবারের মতো নৌপথে চাপ বাড়বে। সেই সঙ্গে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মৌসুম থাকায় নৌপথে যাতায়াতের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাই নৌপথে চলাচল ঝুঁকিমুক্ত করতে এখন থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদেরও সচেতন হতে হবে যাতে করে নৌযানের অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে নিজের ও অন্যের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে না দেই। নৌপথের যাত্রাকে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, নৌযান মালিক ও চালক পক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবাইকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে করে এসব দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। শাহরিয়ার কবির রিমন শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App