গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য সালথা, বাজারে নারীরা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২১, ০৮:০৫ পিএম
পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে সালথা। চালের বস্তা কিনে ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েক জন নারী। বাজারে ঘোরাঘুরি করছেন নারীরা। ছবি: ভোরের কাগজ
বাজারে কেনাকাটায় ব্যস্ত নারীরা। ছবি: ভোরের কাগজ
বাজারে ঘোরাঘুরি করছেন নারীরা। ছবি: ভোরের কাগজ
ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় গত ৫ এপ্রিল রাতে গুজবে সহিংসতার ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৬১ জনকে এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাত আরও প্রায় ৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ শনিবার দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় মোট ৬১ জনকে আটক করেছে।
গ্রেপ্তার এড়াতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে, পুরুষ শূন্য এলাকায় বাজারে এসেছেন নারীরা, তারা নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করার পাশাপাশি সেবা গ্রহণের জন্য বাজারে এসেছেন।
সালথা সদর বাজারে সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। রবি ও বৃহস্পতিবার হাটের দিন হওয়ায় উপজেলার বৃহৎ এই হাটে প্রায় ২০ হাজার লোকের আগমন ঘটে। করোনাকালে ও কৃষিতে সময় দেওয়ার জন্য বাজারে লোক সমাগম কম হলেও নেহাত সংখ্যা কম নয়, সেই হিসাবে সালথা সদর বাজার প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।
[caption id="attachment_277652" align="alignnone" width="1280"] বাজারে কেনাকাটায় ব্যস্ত নারীরা। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]এছাড়াও উপজেলার সোনাপুর, রামকান্তপুর, ভাওয়াল ও মাঝারদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এলাকা প্রায় পুরুষ শুন্য, দুএকজন চোখে পড়ে যার বেশিরভাগ শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলা। মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই এই ঘটনার সাথে জড়িত নয়, তবে পুলিশের ভয়ে অন্যত্র পালিয়ে আছে। এছাড়াও করোনাকালে লকডাউন থাকায় রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে। রাস্তায় তেমন কোনো যানবাহন চোখে পড়ে না।
সালথা বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, বাড়িতে পুরুষ মানুষ না থাকার কারণে মহিলারা এসেছে বাজার করতে। বাজারে পেঁয়াজসহ মৌসুমী ফসল তেমন বসেনাই, যা বসেছে পরিমানে অল্প, পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও বাজারে পেয়াজ ও মৌসুমী ফসল বিক্রি করছে।
৫ এপ্রিল রাতে গুজবে তাণ্ডবের ঘটনায় গত ৬ এপ্রিল রাতে প্রথম মামলাটি করেন সালথা থানা পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান। ওই মামলায় ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩/৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়।
[caption id="attachment_277653" align="alignnone" width="1280"] বাজারে ঘোরাঘুরি করছেন নারীরা। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]এছাড়াও গত ৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার নতুন আরও চারটি মামলা হয়েছে। তার একটি করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতুব্বর। এ মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরেকটি মামলা করেছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাসিব সরকারের গাড়িচালক মো. হাশমত আলী। এই মামলায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩ থেকে ৪ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
অপর মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী সমীর বিশ্বাস। এ মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৩ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
আরেক মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িচালক মো. সাগর সিকদার। এ মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে তিন থেকে চার হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
[caption id="attachment_277654" align="alignnone" width="1280"] বাজার করায় ব্যস্ত নারীরা। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]সালথা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসিকুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মোট গ্রেপ্তার ৬১ জনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে রিমান্ড চেয়ে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সোপর্দ করা হয়, এর মধ্যে ২৬ জনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে এবং কয়েকজনের রিমান্ড শেষ হয়েছে, পর্যায়ক্রমে আরও রিমান্ড চাওয়া হবে। এ ঘটনায় পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সালথায় তাণ্ডবের ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের দু'টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর একটিতে প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. তাসলিমা আলীকে অপর কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম মোল্লাকে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই দুই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৫ই এপ্রিল) ফরিদপুরের উপজেলায় লকডাউন কার্যকর করা না করা নিয়ে স্থানীয় উত্তেজিত জনতার মাঝে গুজব ছড়িয়ে প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী তাণ্ডব ও ধ্বংশলীলা চালায়। তাণ্ডবলীলা শেষে বর্তামানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার সময় উপজেলা পরিষদ ও থানা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উত্তেজিত জনতা উপজেলা পরিষদ ভবন, উপজেলা ভূমি অফিস, উপজেলায় পরিষদ চত্বরে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুড়াল, গাছপালা, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি, সহকারী কমিশনারের গাড়ি, মোটরসাইকেল, উপজেলার সামনে অবস্থিত পেট্রোল পাম্প, সালথা থানা ও কর্মকর্তাদের বাসভবনসহ বেশ কিছু স্থাপনা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এই ঘটনায় জুবোয়ের হোসেন (২০) ও মিরান মোল্যা (৩৫) নামের দুই যুবকের মৃত্যু ও মোট ৬১ জনকে আটক হয়েছে বলে জানা যায়।